সকালে, হরির দোকানে
এমন একটা খারাপ খবর পাবো, সেটা কল্পনাতেও আসে নি।
বলছি, বলছি- এত তাড়া কিসের ?
জানি খবরের কাগজে প্রথম পৃষ্ঠায়, মৃতদেহের ছবি দেখলে মনটা
ভারি হয়, সেটা অনস্বীকার্য , তবে এটা একেবারেই অন্য খবর ।
নীতু বাবু রিটায়ার করেছেন – বেশ কিছুদিন হলো । একমাত্র
ছেলে- নয়ডায় চাকরি করে ।
পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে যাবেন না বলে- ছেলের কাছে যান নি । স্বামী –
স্ত্রী, টোনাটুনির সংসার ।
বয়সকালে টুকটাক শরীর খারাপ হলেও- সে রকম মারাত্মক কোনো অসুখ
নেই, দুজনেরই ।
সরকারি চাকরী করতেন বলে মাস গেলে একটা মোটা টাকা পেনসনও পান
। রাজনীতি ব্যাপারটাকেই এড়িয়ে থাকার একটা প্রাণপণ চেষ্টা আছে ওনার ।
তবে, প্রচুর বই পড়েন । দিনে চারটে খবরের কাগজ খুঁটিয়ে পড়া
চাই ওনার । দুটো ইংরেজী আর দুটো বাংলা সংবাদপত্র ।
ফেসবুক অ্যাকাউন্টও আছে ।
তবে, বেশী অনলাইন হন না । মেল চেক করে, স্কাইপে তে কথা বলেন ছেলে- বৌমা –
আর নাতির সাথে ।
বড় বংশের লোক !
প্রচুর আত্মীয় আর বন্ধু বান্ধব ।
আজ, হরিকে বললেন :- আমার ফ্ল্যাট টা বেচতে হবে । তুই তো
দালালি করিস – খদ্দের দ্যাখ্ !
আমি অবাক হয়ে বললাম
– সে কি মশাই, বেশ তো আছেন, যাবেন কোথায় ?
ছেলের কাছেই চলে যাবো ।
কেন ? এই তো বলতেন- বাংলা ছেড়ে যাবো না বিদেশ বিভুঁইয়ে । কি
গণ্ডগোল হলো আপনার ?
অন্য কিছু নয়- আত্মীয় আর বন্ধুদের অত্যাচারেই ছাড়বো এই
বাংলা ।
কেন, কেন ? তারা আবার কি করলো ?
কি যে বলি ! বলতেও
লজ্জা করে ।
আরে বলুন বলুন- জানা দরকার । আমরা এরকম একটা বন্ধুকে
হারাবো?
রোজ একটা করে নেমত্তন্ন । আজ বিয়ে, কাল জন্মদিন, পরশু পৈতে,
তার পরের দিন বিবাহ বার্ষিকি - শ্রাদ্ধ,
সব মিলিয়ে টাকার শ্রাদ্ধ । উপহার নিতেই
হয়, তাতে আবার সবাই কাছের লোক । বৌ বলে-
সোনা টোনা না দিলে হয় ? একটা ফ্যাড়ফেড়ে সোনার দুল বা আংটির দামই হলো মিনিমাম –
আড়াই হাজার, সাথে ট্যাক্সি খরচ ।
তার পর ?
গতকালই হিসেব করে দেখলাম, এ মাসে যা পেনসন পেয়েছি, তার
সবটাই চলে গিয়ে আরও চার হাজার টাকা লেগেছে এক্সট্রা । এরকম প্রকৃত ঘাটতি হীন
ভারসাম্যমূলক বাজেট নিয়ে মশাই- সরকার চলতে পারে, আমি পারবো না । তাই দূরে থাকাই
ভালো ।
ওখানে কি আর নেমত্তন্ন পাবেন না ?
পাবো, তবে সশরীরে তো আসতে হবে না । টেলিফোনে আশীর্বাদই কাফি
। শ্রাদ্ধ হলে- মনোবেদনা প্রকাশ । মাসে – বড়জোর ৪০০ টাকা টেলিফোনের বিল আসবে, ওয়ান
ইণ্ডিয়া প্ল্যানে ।
=========
বিরস বদনে উঠে গেলেন নীতু বাবু । আধ খাওয়া চায়ের গ্লাসটাও হাঁ করে বসে থাকল, ইটের ওপর ।
বিরস বদনে উঠে গেলেন নীতু বাবু । আধ খাওয়া চায়ের গ্লাসটাও হাঁ করে বসে থাকল, ইটের ওপর ।
No comments:
Post a Comment