(বানানের দায়িত্ব আমার নয়)
==============
আমি এমনিতেই আলসে লোক । অবসরের পর ল্যাদ
খাওয়া আরও বেড়ে গেছে ।
বিদেশ প্রবাসী ছোট ভাই দাড়ি কাটার জন্য
ফোম, ইউজ অ্যাণ্ড থ্রো রেজর ( ভেতরে আবার তিনটে ব্লেডের টুকরো সযত্নে ঠুসে লাগানো)
মানে ওই যে স্যান্ডুইচ রেজর বলে যাকে, সে সব দিয়ে যায় বছরান্তে দেশে এলে।
কিন্তু কালে ভদ্রে নিজের দাড়ি নিজে কামাই । একে তো
চিরকালীন বিতৃষ্ণা আর এখন বেশীক্ষণ দাঁড়াতে পারি না । চোখের দৃষ্টি শক্তিও কম , ফলে
ঠিক মত কাটতে পারি না দাড়ি ( নিজের) ।
চাকরি করা কালীন রোজ দাড়ি কাটতে হতো
। ওই দুঃখে ম্রিয়মাণ হয়ে থাকতাম মাঝে মাঝে ।
আদৌ বাস্তবে নেই, এইরকম রক্তের সম্পর্কের লোক মারা যেতেন ফলে অশৌচ রাখতে
হত, এবং দাড়ি কাটতাম না ।
কখনও বা আদৌ না হওয়া- বারবারস্ ইচের
জন্য দাড়ি কাটা হত না । মানে, এইসব বাম- ডান- অজু হাত দিতে হত, দাড়ি না কাটার জন্য
।
অবসর পাওয়ার পর ঠিকই করে ফেলেছিলাম
– জীবনে আর দাড়িই কাটবো না ।
বেশ রবি দাদু টাইপ চেহারা আর হাতে লীলাকমল
নিয়ে বসে থাকবো ইজিচেয়ারে ( সিতু মিঁয়ার লেখা থেকে ধার করা শব্দ) ।
কিন্তু, জীবনে কে আর প্রতিজ্ঞা রাখতে
পেরেছে এক ভীষ্ম ছাড়া ?
গণ্ড দ্বয়ে অজস্র চুলকুনি আর তিষ্ঠোতে
দিল না । দিনরাত, মাছি তাড়ানোর মত করে হাত
দুটো খালি গালের এপাশ আর ওপাশে কণ্ডূয়ন করে যাচ্ছে ।
একদিন ধূত্তোরি বলে বেরিয়ে পড়লাম, সেলুনের
খোঁজে । সাদা কালো দাড়ি তখন সদ্য কচি ধানগাছের মত হাওয়ায় দুলতে লেগেছে, একটু হাওয়াতেই
।
দেখলাম- একটা নতুন সেলুন হয়েছে, হরির
দোকান থেকে এগিয়ে । সেলুনের নামটাও বেশ আকর্ষণীয়
।
পর পর তিনটে চেয়ার -গদি আঁটা । সামনে
পেছনে বড় বড় আয়না । জানলাম তিন ভাইয়ের দোকান । মানে, জিজ্ঞেস করার আগেই হিসটিরি জিওগেরাফি
সঅঅঅব জানা হয়ে গেল আমার !
রাজশাহীর লোক শুনে- আরও গদগদ । নাম
ধাম সব জেনে নিলো তিন ভাই- কৃষ্ণ, হরি, মধু ।
বরিশাল “পপারে” বাড়ী আছিল । ভীষণ ভগবান ভক্ত ওরা । ডেলি “কিস্নের” নাম লেখে একশো আটবার ।
দাড়ি কাটার পর জিজ্ঞেস করেছিলাম কত
দিতে হবে?
“কত্তা, হয় তো তিরিশ টাকা, তা আফনে হইলেন গিয়া পাড়া আর ওইপারের লোক, কুড়ি ট্যাহাই
দিয়েন !
বেরাম্ভন মাইনসের থিকা বেশী নিমু কিয়ার
লাইগ্যা ? পাপ –পুইন্য বইলা কথা আছে তো নিকি?”
প্রসঙ্গত, তখন ষ্ট্যাণ্ডার্ড রেট ছিল
পাঁচ বা
সাত টাকা ।
+++++++++++++++
পরপর তিনদিন চন্দ্রশেখর আসে নি । সকালে
হরির চায়ের দোকানে দেখা হয়েছিল ।
কেন আসছে না জিগ্গেস করাতে বলল – এখন
সিজন ! তাই বাড়ীতে এসে দাড়ি কাটতে পারছে না
ও !
আশ্চর্য হয়েই জিজ্ঞেস ( এবারে ঠিক বানান
) করেছিলাম- চুল দাড়ি কাটার আবার সিজন কি?
জবাব এলো – শীত আসছে, তাই টপাটপ বুড়ো,
বুড়ীরা মরে আর ঘাটকাজের কাজ তো লেগেই থাকে রোজ ।
আগামীকাল একটা বৌভাতের “লিমন্ত” আছে, তাই সন্ধেবেলায় বেরিয়ে পড়লাম দাড়ি কাটাতে ( কাটতে নয় কিন্তু) ।
সকাল হলেই রোব্বার ,তাই তিল ধারণের
“এস্থান” থাকবে না সেলুনে
।
যেতেই দেখলাম- কৃষ্ণের মুখ বিষণ্ণ ।
একদিনের একটা বাসী কাগজে প্রয়াত তপন বাবুর ছবি দেখিয়ে বলল – ইনি গত হইসেন,
হেয়ার লাইগ্যা মন খারাপ ।
আমিও বললাম- জানি খবরটা, খুব পণ্ডিত
মানুষ ছিলেন, কীর্তিপাশার জমিদার বংশের ছেলে ।
কৃষ্ণ গম্ভীর হয়ে বলল – পণ্ডিত, কি
কন ? জানেন উনি কাব্যতীর্থ আছিলেন ।
=========
কথা না বাড়িয়ে দাড়ি কাটিয়ে চলে এলাম-
এক অজানা তথ্য তপনবাবুর সম্বন্ধে জেনে।
( এখন কুড়ি টাকাই নেয়, তবে বেশ যত্ন
নিয়ে দাড়ি কেটে দেয় )
No comments:
Post a Comment