Saturday, November 29, 2014

শ্রি কিসনো সেলুন ও দূর্গা সহায়



(বানানের দায়িত্ব আমার নয়)
==============

আমি এমনিতেই আলসে লোক । অবসরের পর ল্যাদ খাওয়া আরও বেড়ে গেছে । 


বিদেশ প্রবাসী ছোট ভাই দাড়ি কাটার জন্য ফোম, ইউজ অ্যাণ্ড থ্রো রেজর ( ভেতরে আবার তিনটে ব্লেডের টুকরো সযত্নে ঠুসে লাগানো) মানে ওই যে স্যান্ডুইচ রেজর বলে যাকে, সে সব দিয়ে যায় বছরান্তে দেশে এলে।

 কিন্তু কালে ভদ্রে নিজের দাড়ি নিজে কামাই । একে তো চিরকালীন বিতৃষ্ণা আর এখন বেশীক্ষণ দাঁড়াতে পারি না । চোখের দৃষ্টি শক্তিও কম , ফলে ঠিক মত কাটতে পারি না দাড়ি ( নিজের) ।


চাকরি করা কালীন রোজ দাড়ি কাটতে হতো । ওই দুঃখে ম্রিয়মাণ হয়ে থাকতাম মাঝে মাঝে ।

আদৌ বাস্তবে নেই, এইরকম   রক্তের সম্পর্কের লোক মারা যেতেন ফলে অশৌচ রাখতে হত, এবং দাড়ি কাটতাম না ।

কখনও বা আদৌ না হওয়া- বারবারস্ ইচের জন্য দাড়ি কাটা হত না । মানে, এইসব বাম- ডান- অজু হাত দিতে হত, দাড়ি না কাটার জন্য ।

অবসর পাওয়ার পর ঠিকই করে ফেলেছিলাম – জীবনে আর দাড়িই কাটবো না ।
বেশ রবি দাদু টাইপ চেহারা আর হাতে লীলাকমল নিয়ে বসে থাকবো ইজিচেয়ারে ( সিতু মিঁয়ার লেখা থেকে ধার করা শব্দ) ।

কিন্তু, জীবনে কে আর প্রতিজ্ঞা রাখতে পেরেছে এক ভীষ্ম ছাড়া ?

গণ্ড দ্বয়ে অজস্র চুলকুনি আর তিষ্ঠোতে দিল না ।  দিনরাত, মাছি তাড়ানোর মত করে হাত দুটো খালি গালের এপাশ আর ওপাশে কণ্ডূয়ন করে যাচ্ছে ।

একদিন ধূত্তোরি বলে বেরিয়ে পড়লাম, সেলুনের খোঁজে । সাদা কালো দাড়ি তখন সদ্য কচি ধানগাছের মত হাওয়ায় দুলতে লেগেছে, একটু হাওয়াতেই ।

দেখলাম- একটা নতুন সেলুন হয়েছে, হরির দোকান থেকে এগিয়ে ।  সেলুনের নামটাও বেশ আকর্ষণীয় ।


পর পর তিনটে চেয়ার -গদি আঁটা । সামনে পেছনে বড় বড় আয়না । জানলাম তিন ভাইয়ের দোকান । মানে, জিজ্ঞেস করার আগেই হিসটিরি জিওগেরাফি সঅঅঅব জানা হয়ে গেল আমার !


রাজশাহীর লোক শুনে- আরও গদগদ । নাম ধাম সব জেনে নিলো তিন ভাই- কৃষ্ণ, হরি, মধু ।

বরিশাল “পপারে বাড়ী আছিল । ভীষণ ভগবান ভক্ত ওরা । ডেলি “কিস্নের নাম লেখে একশো আটবার ।

দাড়ি কাটার পর জিজ্ঞেস করেছিলাম কত দিতে হবে?

কত্তা, হয় তো তিরিশ টাকা, তা আফনে হইলেন গিয়া পাড়া আর ওইপারের লোক, কুড়ি ট্যাহাই দিয়েন !

বেরাম্ভন মাইনসের থিকা বেশী নিমু কিয়ার লাইগ্যা ? পাপ –পুইন্য বইলা কথা আছে তো নিকি?”

প্রসঙ্গত, তখন ষ্ট্যাণ্ডার্ড রেট ছিল পাঁচ  বা  সাত টাকা ।
+++++++++++++++

পরপর তিনদিন চন্দ্রশেখর আসে নি । সকালে হরির চায়ের দোকানে দেখা হয়েছিল ।

কেন আসছে না জিগ্গেস করাতে বলল – এখন সিজন ! তাই বাড়ীতে এসে দাড়ি কাটতে পারছে না  ও !

আশ্চর্য হয়েই জিজ্ঞেস ( এবারে ঠিক বানান )  করেছিলাম- চুল দাড়ি কাটার আবার সিজন কি?

জবাব এলো – শীত আসছে, তাই টপাটপ বুড়ো, বুড়ীরা মরে আর ঘাটকাজের কাজ তো লেগেই থাকে রোজ ।


আগামীকাল একটা বৌভাতের “লিমন্ত আছে, তাই সন্ধেবেলায় বেরিয়ে পড়লাম দাড়ি কাটাতে  ( কাটতে নয় কিন্তু) ।

সকাল হলেই রোব্বার ,তাই তিল ধারণের “এস্থান থাকবে না সেলুনে ।

যেতেই দেখলাম- কৃষ্ণের মুখ বিষণ্ণ ।

একদিনের একটা বাসী কাগজে  প্রয়াত তপন বাবুর ছবি দেখিয়ে বলল – ইনি গত হইসেন, হেয়ার লাইগ্যা মন খারাপ ।

আমিও বললাম- জানি খবরটা, খুব পণ্ডিত মানুষ ছিলেন, কীর্তিপাশার জমিদার বংশের ছেলে ।

কৃষ্ণ গম্ভীর হয়ে বলল – পণ্ডিত, কি কন ? জানেন উনি কাব্যতীর্থ আছিলেন ।

=========
কথা না বাড়িয়ে দাড়ি কাটিয়ে চলে এলাম- এক অজানা তথ্য তপনবাবুর সম্বন্ধে জেনে।

( এখন কুড়ি টাকাই নেয়, তবে বেশ যত্ন নিয়ে দাড়ি কেটে দেয় )









No comments: