( এই ঘটনা কাল্পনিক । বাস্তবের কোনো চরিত্র, ঘটনা , পরম্পরার সাথে কোনো মিল নেই । এই রকম ঘটনা যদি আগে কোথাও ঘটে থাকে, তবে সেটা সম্পূর্ণ কাকতালীয় )
===========
বেশী দিন আগের কথা নয় । বছর তেরো হবে ! আমি সদ্য অবসর নিয়েছি চাকরী থেকে । তখনও সেভাবে সোসাল নেটওয়ার্কিং চালু হয় নি, তাই হরির দোকানেই আড্ডাটা হয় ।
পাল বাবুর হঠাৎ সখ জাগলো- আমার ফ্ল্যাটের
ঠিক উল্টো দিকেই ,পাড়ার মধ্যেই যাত্রা পালা করা হবে ।
যাত্রা করার জন্য প্রচুর পয়সা নেবে, চিৎপুর পার্টিরা – কর বাবুর
সময়োচিত ভাবনা, কথার মাধ্যমে বেরিয়ে এলো ।
কেন ? আমরাই পালা করবো, বাইরের পার্টি আনবো কেন ? পাল বাবুর
জবাব ।
এবারে সবাই একটু নড়ে চড়ে উঠে, স্মৃতি মেদুর হয়ে অনেকেই
নিজের নিজের যাত্রা দেখার কথা বলতে লাগলেন ।
ঘন্টা খানেক পর অনেক বাত বিতণ্ডার পর ঠিক হলো, আমাদের
চাতালের শেষে যে ক্লাব ঘর আছে, সেখানেই রিহার্সাল হবে ।
চাতালটা আইনত মিউনিসিপ্যালিটির রাস্তা হলেও কানা গলি । গাড়ী
– ঘোড়ার ঝামেলা নেই ।
জায়গাও লম্বা হওয়ার ফলে, দর্শকদের অসুবিধে হবে না ।
ক্লাবঘরের সামনেই যাত্রাটা হবে ।
ঠিক ষ্টেজ না হলেও
একটু উঁচু না করলে, সবাই আবার দেখতে পাবে না, তাই ঠিক হলো- ডেকোরেটারকে
বলতে হবে, পাটাতন লাগাতে , অল্প উঁচু করে ।
এবারে যাত্রা পালার বিষয় বস্তু নির্বাচন । বাকবিতণ্ডার পর
ঠিক হলো- রামায়ণের একটা অংশ নিয়ে পালা হবে ।
হনুমান – রাবণের যুদ্দু টুদ্দু থাকবে, বেশ মারকাটারি
জমজমাটি ব্যপার সাপার ।
মুখার্জ্জী বাবু অনেক উৎসাহ নিয়ে- কলেজ ষ্ট্রীটে গিয়ে দু
তিনটি রামায়ণের ওপর লেখা যাত্রা পালার বই কিনে নিয়ে এলেন ।
ওই বইগুলো থেকেই
অনেক সংশোধন আর পরিমার্জনের পর লেখা হল পালা – হনুমানের লঙ্কা বিজয় ।
ব্যানার্জ্জী বাবুর অনেক চেনা জানা চিৎপুরে । গদা , পোশাক
সব নিয়ে তিনি গাড়ী করে হাজির পাড়াতে,
যাত্রা পালা হওয়ার আগের দিন । ক্লাব ঘরেই রাখা হলো সব ।
মহেন্দ্রক্ষণে মেক আপ ম্যান আসবে বিকেল চারটের সময় ।
রোববারের বাজারে, উত্তেজনায় সবাই থরথর করে কাঁপছে ।
হঠাৎ দেখা গেল- হনুমানের গদাটাই নেই । কেউ নিয়ে গেল নাকি ?
না যাতে পালা না হয়, তার জন্য কারও কীর্তি ?
যা!!!!!!!! এবারে কি হবে ? রোববার , তাই দোকান পাট সব বন্ধ ।
অভিজ্ঞ মেক আপ ম্যান বলল – আরে দাদা ঘাবড়াচ্ছেন কেন ?
ক্রিকেটের উইকেট তো আছে দেখছি । তার ওপরে একটা বড় ডাবের খোলা লাগিয়ে দিচ্ছি । তার
ওপরে রাংতা । দেখতে একদম গদা লাগবে ।
যথা সময়ে অভিনয় আরম্ভ হলো । চরম ক্ষণে হনুমান বীর দর্পে রাবণের
দিকে তেড়ে গেল- গদা ঘুরিয়ে ।
অত স্পিডে গদা ঘোরানোর ইমপ্যাক্ট, গদার মুণ্ডু মানে ডাবটা
নিতে পারল না ।
ছিটকে দর্শকদের মাঝে ।
যার মাথায় পড়লো- সে
তো চিপটাং ।
কোঁকাতে কোঁকাতে বলল – আমিই গদাটা লুকিয়ে রেখেছিলাম ।
হনুমান আমায় শাস্তি দিলেন ।
সমস্বরে আওয়াজ :- জয় বজরং বলীর জয় ।
==========
গদার আঘাত এখনও চলছে ।
গদার আঘাত এখনও চলছে ।
No comments:
Post a Comment