Sunday, November 2, 2014

ধুঢ়ুম্- ধ্রাস‌্



( এই ঘটনা কাল্পনিক । বাস্তবের  কোনো চরিত্র, ঘটনা , পরম্পরার সাথে কোনো মিল নেই । এই রকম ঘটনা যদি আগে কোথাও ঘটে থাকে, তবে সেটা সম্পূর্ণ কাকতালীয় )
===========

বেশী দিন আগের কথা নয় । বছর তেরো হবে !  আমি সদ্য অবসর নিয়েছি চাকরী থেকে ।  তখনও সেভাবে সোসাল নেটওয়ার্কিং চালু হয় নি, তাই হরির দোকানেই আড্ডাটা হয় ।

পাল বাবুর হঠাৎ সখ জাগলো-  আমার ফ্ল্যাটের  ঠিক উল্টো দিকেই ,পাড়ার মধ্যেই যাত্রা পালা করা হবে ।

যাত্রা করার জন্য  প্রচুর পয়সা নেবে, চিৎপুর পার্টিরা – কর বাবুর সময়োচিত ভাবনা, কথার মাধ্যমে বেরিয়ে এলো ।

কেন ? আমরাই পালা করবো, বাইরের পার্টি আনবো কেন ? পাল বাবুর জবাব ।

এবারে সবাই একটু নড়ে চড়ে উঠে, স্মৃতি মেদুর হয়ে অনেকেই নিজের নিজের যাত্রা দেখার কথা বলতে লাগলেন ।

ঘন্টা খানেক পর অনেক বাত বিতণ্ডার পর ঠিক হলো, আমাদের চাতালের শেষে যে ক্লাব ঘর আছে, সেখানেই রিহার্সাল হবে ।

চাতালটা আইনত মিউনিসিপ্যালিটির রাস্তা হলেও কানা গলি । গাড়ী – ঘোড়ার ঝামেলা নেই ।

জায়গাও লম্বা হওয়ার ফলে, দর্শকদের অসুবিধে হবে না । ক্লাবঘরের সামনেই যাত্রাটা হবে ।

ঠিক ষ্টেজ না হলেও  একটু উঁচু না করলে, সবাই আবার দেখতে পাবে না, তাই ঠিক হলো- ডেকোরেটারকে বলতে হবে, পাটাতন লাগাতে , অল্প উঁচু করে ।

এবারে যাত্রা পালার বিষয় বস্তু নির্বাচন । বাকবিতণ্ডার পর ঠিক হলো- রামায়ণের একটা অংশ নিয়ে পালা হবে ।

হনুমান – রাবণের যুদ্দু টুদ্দু থাকবে, বেশ মারকাটারি জমজমাটি ব্যপার সাপার ।

মুখার্জ্জী বাবু অনেক উৎসাহ নিয়ে- কলেজ ষ্ট্রীটে গিয়ে দু তিনটি রামায়ণের ওপর লেখা যাত্রা পালার বই কিনে নিয়ে এলেন ।

ওই বইগুলো থেকেই  অনেক সংশোধন আর পরিমার্জনের পর লেখা হল পালা – হনুমানের লঙ্কা বিজয় ।

ব্যানার্জ্জী বাবুর অনেক চেনা জানা চিৎপুরে । গদা , পোশাক সব নিয়ে তিনি গাড়ী করে হাজির  পাড়াতে, যাত্রা পালা হওয়ার আগের দিন । ক্লাব ঘরেই রাখা হলো সব ।

মহেন্দ্রক্ষণে মেক আপ ম্যান আসবে বিকেল চারটের সময় । রোববারের বাজারে, উত্তেজনায় সবাই থরথর করে কাঁপছে ।
হঠাৎ দেখা গেল- হনুমানের গদাটাই নেই । কেউ নিয়ে গেল নাকি ? না যাতে পালা না হয়, তার জন্য কারও কীর্তি ?

যা!!!!!!!! এবারে কি হবে ? রোববার , তাই  দোকান পাট সব বন্ধ ।

অভিজ্ঞ মেক আপ ম্যান বলল – আরে দাদা ঘাবড়াচ্ছেন কেন ? ক্রিকেটের উইকেট তো আছে দেখছি । তার ওপরে একটা বড় ডাবের খোলা লাগিয়ে দিচ্ছি । তার ওপরে রাংতা । দেখতে একদম গদা লাগবে ।

যথা সময়ে অভিনয় আরম্ভ হলো । চরম ক্ষণে হনুমান বীর দর্পে রাবণের দিকে তেড়ে গেল- গদা ঘুরিয়ে  ।

অত স্পিডে গদা ঘোরানোর ইমপ্যাক্ট, গদার মুণ্ডু মানে ডাবটা নিতে পারল না ।
ছিটকে দর্শকদের মাঝে ।
 যার মাথায় পড়লো- সে তো চিপটাং ।

কোঁকাতে কোঁকাতে বলল – আমিই গদাটা লুকিয়ে রেখেছিলাম । হনুমান আমায় শাস্তি দিলেন ।

সমস্বরে আওয়াজ :- জয় বজরং বলীর জয় ।

==========
গদার আঘাত এখনও চলছে ।









No comments: