গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ ( পূর্বতন অবিভক্ত ভারত) বরাবরই বহিরাগত আক্রমণ মুখে পড়েছে বারবার ।
প্রথম দিকের আক্রমণের উদ্দেশ্য কিন্তু সাম্রাজ্যবিস্তারের লক্ষ্যে ছিল না । বহুমুখী ধনসম্পদ লুট করাই ছিল এই সব আক্রমণের উপজীব্য ।
ধনসম্পদের মধ্যে মণি মাণিক্য তো ছিলই, তাছাড়া ছিল জ্ঞান বিজ্ঞান, নানা প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের অঢেল প্রাচুর্য ।
আক্রমণ কারীরা বারবারই এসেছে- এই কারণে ।
আমরা ইতিহাসে পড়েছি :- গজনীর সুলতান মাহমুদ (৯৯৭-১০৩০ খ্রীঃ) ভারতে প্রায় ১৭ বার অভিযান চালান । স্থায়ী কোন সাম্রাজ্যের বিস্তার, তার লক্ষ্য ছিল না।
কিন্তু তারও আগে ভারতে আক্রমণ চালায় আরবরা – ব্যবসার কারণে, ৭৭০ খ্রীঃ নাগাদ ।
কোনো ব্যবসা করতে গেলে, দরকার হয় টাকা । আর টাকার কারণেই এই সব আক্রমণ হয়েছিল ।
ড. ঈশ্বরী টোপ্পা বলেন, মাহমুদ ভারতের মন্দিরগুলো আক্রমণ করেছিলেন কারণ, তাতে বিপুল ধনরত্ন ছিল এবং তাদের মধ্যে কয়েকটি ছিল রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের কেন্দ্রস্থল।
সেই সময়কার সামাজিক পরিস্থিতি যদি দেখি, তবে একটা জিনিস আমাদের অবশ্যই জানা উচিত, তখনকার সমাজ মূলত দুটো ভাগে বিভক্ত ছিল – ব্রাহ্মণ এবং অব্রাহ্মণ ।
সাহিত্য- চিত্রকলা- মণি মাণিক্য, সংস্কৃতি সবই এই মন্দির কেন্দ্রিক ছিল আর সেটা আক্রমণ কারীদের চোখ এড়ায় নি ।
ব্রাহ্মণ এবং অব্রাহ্মণ দের মধ্যে ছিল এক প্রচণ্ড ব্যবধান । এই কারণে দৃঢ় কোনো বন্ধন গড়ে ওঠে নি এদের মধ্যে ।
এই কারণেই ভারতীয় শাসন ব্যবস্থায় ফাটল ধরে এবং সেই সময় ভারতীয় রাজনীতি ও সমর পদ্ধতির দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছিল।
এদিকে- তুর্ক, আফগান, মোঘল – এরা ধর্মে এক হলেও , একে অপরকে সহ্য করতে পারতো না ।
এইটুকুতেই দেখা যায়- ধনসম্পদ এবং রাজ্য বিস্তারে ধর্মের চেয়েও বড় জায়গা নিয়েছিল- স্বার্থ সিদ্ধি । আর এই স্বার্থ ছিল- ধনসম্পদ ।
বাবরও প্রথম দিকে ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারে আগ্রহী না হলেও, ভ্যাকুয়াম দেখে এই খানে ঘাঁটি গেঁড়ে বসে যান । যার ফলে ভারতে মোঘল সাম্রাজ্য আসে ।
আমার মনে হয়- পর্তুগীজরা এদিক দিয়ে অনেক চালাক ছিল ।
তারা সঙ্গোপনে তাদের ধর্ম ছড়াতে থাকে ।
পর্তুগীজ মিশনারীরা চট্টগ্রাম, সন্দীপ, শ্রীপুর, বাকলা, চণ্ডিকান (যশোর) তথা দক্ষিণ বঙ্গে বেশী আনাগোনা করত।
আবার, যে সময়ে তুর্ক আফগান ও মোঘল সংঘর্ষ চলছিল সে সময় বাঙালীরা এক প্রকার দিশেহারা হয়েই পড়েছিল। সে সময় জমিদার-জমিদারে, রাজায়-রাজায় আত্ম কলহ তুঙ্গে। দেশে ঐতিহাসিক ছিল না বললেই চলে। এমনকি মোঘল আমলের বই পত্তরেও বিস্তারিত ইতিহাস পাওয়া যায় না।
যেটুকু পাওয়া যায়, তাও ডগমাটিক ।
এই সময়েই ইংরেজরা বণিক হিসেবে এলেও , তারা ধর্মের ভেদাভেদ, জাতপাতের সমীকরন চতুরতার সাথে বুঝে ফেলে ।
“জনগণ” এমন জাঁতাকলে পড়ে গিয়ে নিজেদের পেটের চিন্তা ভুলে সেই ফাঁদে পা দিয়েই বুঝল – এটা মারাত্মক !
ততদিনে যা সর্বনাশ হবার হয়ে গিয়েছে ।
বৌদ্ধ- হিন্দু, হিন্দুদের জাতপাত , ব্রাহ্মণদের গর্ব, মুসলমান--- সব মিলিয়ে এমন একটা পরিস্থিতি যেখানে “ ভাত কাপড়ের” প্রশ্নকে দূরে সরিয়ে রেখে মসনদ দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হলো ।
ফলশ্রুতিতে দেশভাগ, যার বিষময় ফলে আমরা সাধারণ জনগণ এখনও ভুগছি ।
এই কনজিউমারিজমের যুগে এই সব এখনও সেই সব কে ভালো করে বাতাস করা হচ্ছে, যাতে আমরা বিভক্ত হতে হতে পাড়ায় পাড়ায় ভাগ হয়ে যাবো ।
টাকা উপায় করো- এটাই মূল মন্ত্র । তাই নানারকমের সুড়সুড়ি ।
টাকা উপায় করতে হলে- মসনদ দখল জরুরি আর এই সিংহাসন বজায় রাখতে গেলে ছায়াযুদ্ধ আরও দরকারি ।
বহুত্ব বাদী এই উপমহাদেশ তাই এখন ছিন্ন ভিন্ন ।
======
তঙ্কা ধর্ম, তঙ্কা স্বর্গ, তঙ্কা হি পরমং তপঃ
No comments:
Post a Comment