ঘনাদা আর টেনিদার পর তারিণী খুড়ো । পুরো নাম-তারিণীচরণ বাঁডুজ্জে । বাঁড়ুজ্জে- “বন্দ্যোপাধায়” পদবীর চলতি নাম ।
গল্পের স্টক খুড়োর অঢেল । নানা ধরণের চাকরী করতে গিয়ে ভদ্রলোক সারা ভারতবর্ষ
ঘুরে বেড়িয়েছেন । অভিজ্ঞতার ঝুড়ি একেবারে ভর্তি হয়ে টইটুম্বুর । বিচিত্র সেই সব অভিজ্ঞতা, আর তাই
গল্পগুলোও নানা স্বাদের ।
তারিণী খুড়োর মতে, আর্টের খাতিরে যেটুকু কল্পনার আশ্রয় নিতে হয় সেটুকু
ছাড়া আর নাকি সবই সত্যি!! অবশ্য এই
আর্টের খাতিরে কল্পনার আশ্রয় নেবার কথাই বা কে স্বীকার করে? আমাদের নমস্য ঘনাদা করেননি, টেনিদাও করেননি।
তারিণী খুড়ো প্রায়ই বলেন, “আমার মনের সব কপাট খোলা। আমি হাঁচি, টিকটিকি, ভূত-প্রেত, দত্যি-দানা, বেদ-বেদান্ত, আইন্সটাইন-ফাইন্সটাইন
সব মানি।”
বোঝো ঠ্যালা !!!
অবিবাহিত এই মানুষটি থাকেন কলকাতার শোভাবাজারের বেনেটোলায়, পুরোপুরি
ঠিকানাটা কাউকে বলেছেন বলে তো মনে পড়ে না । বিকেলের চা-জলখাবার খাওয়ার
জন্যই বেনেটোলা থেকে বালিগঞ্জে আসেন তিনি গল্প শোনাতে। বাস না পেলে পুরো রাস্তা হেঁটেই
পাড়ি দেন। বাস ভাড়া বাঁচাতে, তিনি রোজই হেঁটে আসেন- এটা আমার আন্দাজ । কোত্থাও অবশ্য লেখা নেই এই বাস ভাড়া বাঁচানোর কথাটা ।
ঘনাদার মতোই লম্বা-চওড়া গল্প বলতে
ভালবাসেন তারিণী খুড়ো। ভুতের গল্প থেকে হাসির গল্প কি নেই তার ঝোলায়! অধিকাংশ গল্পেই দেখা যায় আসন্ন ঝামেলা বা
সমস্যা থেকে তারিণী খুড়ো বেঁচে গেছেন স্রেফ উপস্থিত বুদ্ধির জোরে। অনেক সময় আবার ভাগ্যের জোরেও কেটেছে ফাঁড়া। খুড়োর জন্ম বাংলার
মধ্যবিত্ত পরিবারে হলেও কাজকর্মের সূত্রে নিজেকে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন পুরো ভারতে। তাই বেশ একটা সর্বভারতীয় ফ্লেভার তাঁর সব গল্পেই ।
স্কুল পড়ুয়া ন্যাপলা, ভুলু, চটপটি, সুনন্দরা
হচ্ছে এই সব গল্পের শ্রোতা ।
কেমন মানুষ তারিণী খুড়ো? জীবনে প্রচুর রোজগার করেছেন। কিন্তু সারাক্ষণ টাকার
পেছনে আদৌ দৌড়ননি। মাঝে মাঝে রোজগারের ওপর বিতৃষ্ণা এসে গেলে সব ছেড়েছুড়ে
স্রেফ ভ্রমণের নেশায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্যকে কখনো খুব একটা
গুরুত্ব দেননি। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটাই তারিণী বাঁডুজ্জের অভ্যেস। তাঁর
নেশা দুটিও খুবই সামান্য। তাঁর নেশা দুটিও খুবই সামান্য। দুধ-চিনি ছাড়া চা আর এক্সপোর্ট কোয়ালিটির বিড়ি।
তারিণী খুড়োর সাথে রক্তের
কোন সম্পর্ক নেই এই সব খুদে শ্রোতাদের। তিনি ওদের বাবা-কাকাদের দেশের পড়শি সূত্রে খুড়ো, ওদেরও খুড়ো। আসলে খুড়ো নিজেকে বৃদ্ধ ভাবতে আদৌ রাজি
নন। ওর শ্রোতাদের মধ্যে ন্যাপলা একবার খুড়োকে দাদু বলে ডেকেছিল। খুড়ো তাতে বেজায়
চটেছিলেন। আর চটবেন নাই বা কেন? ওঁর সঙ্গে যখন আমাদের প্রথম পরিচয় হয় তখন তাঁর বয়স
চৌষট্টি। কিন্তু আদৌ অথর্ব নন তিনি। ছ’ফিট শরীরটা এই বয়সেও মজবুত। তারিণী খুড়োর মতে ৩৩টি শহরে তিনি ৫৫ রকম কাজ করেছেন।
তার সবকটির হদিশ আমরা পাইনি। তবে যা পেয়েছি তাই বা কম কি ! করদ রাজ্যগুলির জনাকয়েক রাজার সেক্রেটারি কিম্বা
ম্যানেজার, ব্যবসায়ী বা প্রাক্তন অভিনেতার সেক্রেটারি, ম্যাজিশিয়ানের ম্যানেজার, ফিল্ম কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজার। আবার স্বাধীন
ব্যবসাতেও তিনি আছেন। কখনো শিল্পীর মডেল, কখনো খবরের কাগজের ফ্রি-ল্যান্স জার্নালিস্ট এমন কি কখনো বা জ্যোতিষীও। স্টেজে এবং স্টেজের বাইরে অভিনয়ও করেছেন তারিণীচরণ
বাঁডুজ্জে। ৩৩টা শহরের পুরো হিসেবও নেই আমাদের কাছে। কোলকাতা লক্ষ্ণৌ, পুনে, আজমীর, হায়দ্রাবাদ, নাগপুর, ডুমনিগড়, ধুমলগড়, মার্তন্ডপুর, মন্দোর, তারাপুর, ছোট নাগপুরে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর সেইসব অভিযান কাহিনী। সব
জায়গাগুলির হাল-হদিশ হয়তো ম্যাপে পাওয়া যাবে
না। কিন্তু তাতে অবিশ্বাস করার কিছু নেই। ভগবানের সৃষ্টিতে ডিফেক্ট থাকে, আর মানুষের তৈরি ম্যাপে ভুল থাকতে পারে না?
সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্ট এই তারিণী খুড়ো
চরিত্রটির পুরো জীবনটাই রোমঞ্চকর ঘটনায় ভরপুর।
যারা এই সব গল্প পড়তে চাও- তারা পড়তে পারো :- “তারিণী খুড়োর অভিযান” বই আর সত্যজিৎ রায়ের ছেলে সন্দীপ রায়ের “ যেখানে ভূতের ভয় ” চলচিত্রটি দেখতে
পারো। চলচিত্রে মোট
তিনটে গল্পের মধ্যে প্রথম দুটো সত্যজিৎ রায়ের লেখা , শেষেরটা শরদিন্দু
বন্দ্যোপাধ্যায়ের ।
কৃতজ্ঞতা :- “তারিণী খুড়োর অভিযান”
বিডি নিউজ টোয়েন্টি ফোর ডটকম/তামিম আবদুল্লাহ
ইন্টারনেট
দিয়ালা কিশোর পত্রিকায় প্রকাশিত
দিয়ালা কিশোর পত্রিকায় প্রকাশিত