লেখাপড়ার
কথা ভাবলে,
আজও শিউরে উঠি। এই বয়সেও দুঃস্বপ্ন দেখি, পরীক্ষার হলে কিস্সু লিখতে পারছি না, আর দরদর করে ঘেমে যাচ্ছি।
পরীক্ষার খাতাতে মুজতবা সাহেব নাকি এ্যায়সা
আ্যানসার ঝেড়েছিলেন, যে পরীক্ষককেরা বলেছিলেন-
-এনকোর! ( ফিরসে বা
রিপিট) আর সেই ক্লাসে তাঁকে আবার রেখে দিতেন। পরের বছর পর্য্যন্ত পরীক্ষককেরা অপেক্ষা করতেন, কখন আবার এইরকম উত্তর মুজতবা সাহেব লিখবেন।( এটা মুজতবা সাহেব নিজেই লিখে
গেছেন)
এনকোর ব্যপারটা একটু বুঝিয়ে বললে বোধহয় ভালো
হয়। আগেকার দিনে, যাত্রা থিয়েটারে কোন সিন ভালো লাগলে, দর্শকেরা
বলতেন--এনকোর!
(ইংরেজী শব্দ) আর কুশীলবেরা সেই দৃশ্যটি আবার অভিনয়
করতেন!
এ দিক দিয়ে আমার পরীক্ষককেরা আমাকে এনকোর না
বললেও,
ফার্ষ্ট কল বা থার্ড কলেও আমাকে পাশ করাতেন না! ফলং-
প্রহারং। আবার দাদু গিয়ে বণ্ড দিয়ে আমাকে ওপরের ক্লাসে ওঠাতেন।
ঋষি বঙ্কিম বলেছিলেন:- ( মুজতবা সাহেবের রেফারেন্স)
“ছাত্র জীবন হইত বড় সুখের জীবন
যদি না থাকিত এগ-জামি-নেশন!”
একটা চালু কথা(গুজব?) আছে। ঋষি বঙ্কিমও নাকি প্রথম
সুযোগে স্নাতক পর্যায়ে পাশ করতে পারেন নি।
যেহেতু,
ওই পরীক্ষা কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পরীক্ষা ছিল, সঙ্গে
সঙ্গে গ্রেস মার্ক দিয়ে পাস করানো হয়! ( প্লিজ, গুজবে কান দেবেন না)
ওই দুই লাইনের কবিতাটা পড়ে মনে হয়, কথাটা সত্যি হলেও হতে পারে। যাই হোক, রেডুকুৎসিও আব আ্যবসার্ডাম ( রিডিউসড টু আ্যবর্সাড থিংস্- আবার
মুজতবা সাহেব!!!) সূত্রে আমি পরীক্ষার ব্যাপারে মুজতবা সাহেব আর ঋষি বঙ্কিমের সমগোত্রীয়!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
এক তালেবর ম্যাট্রিকে ফেল করে, নাকি বলেছিল:- ম্যাট্রিকুলেশন এক্সামিনেশন ইজ এ গ্রেট বদারেশন টু আওয়ার নেশন। ফাদারস আ্যডভাইস ফর কালটিভেশন আ্যাণ্ড মাদারস কনশোলেশন।
সেই মাতব্বরটি ( আমার কাছে
এখনও প্রাতঃস্মরণীয়) ইতিহাসে, বাবর সম্বন্ধে লিখেছিল-
বাবর ওয়াজ এ গ্রেট এম্পপেরর। হি ফ্যাটাচুলেটেড
আ্যণ্ড ল্যাটাচুলেটেড। হি অলসো পারপেনডিকুলারলি গরমরালাইজড এভরিথিং!
আরও ছিল, কিন্তু
সেটা আর জানা যায় নি!
( দেশের কি দুর্গতি! মুন্না ভাইয়ের ভাষায় “ওয়াট লগা
দিয়া!” আর মুন্নাভাই
জেলে ।)
হেসে উড়িয়ে দিলেন তো! তা ঠিকই করেছেন। এসব অবাস্তব কথা পড়াই উচিত নয়! মহা পাপ!
আমার তখন ক্লাস সেভেন। সংস্কৃত শেখান হচ্ছে।
পণ্ডিত মশাই শেখাচ্ছেন- বৃক্ষ (
উচ্চারণ করেছিলেন- বৃখ্স)
হইতে লম্ফ প্রদান কর।
বৃক্ষাৎ উল্লম্ফ!
শান্তি (আমাদের পাগলা দাশু) বলল- স্যার, থুড়ি পণ্ডিতস্যার- ট্রাম হইতে লম্ফ প্রদান কর, এর সংস্কৃত
কি হবে?
ফার্ষ্ট বয় কার্ত্তিক ভদ্রের উত্তর:- ট্রাম-
অ কারান্ত শব্দ, নর শব্দের ন্যায়, সুতরাং ওটা
হবে-
ট্রামাৎ উল্লম্ফ!
পণ্ডিতস্যার খেপে গেলেন। বললেন:-
ওহে শাখামৃগের ( বাঁদর)
দল! ট্রাম, ইংলণ্ডিয় যবন শব্দ। সংস্কৃত ভাষায় যাবনিক শব্দের প্রবেশ নিষিদ্ধ!!!!!!
তবে, কি হবে
পণ্ডিতস্যার?
দাঁড়া, একটু
চিন্তা করতে দে!
শান্তি উঠে দাঁড়াল!
-এ কি—খাড়াইলি
ক্যান?
(পণ্ডিতস্যার, রেগে গেলে বা হতচকিত হলে মাতৃভাষা বলতেন)
-আপনেই তো কইলেন!
-বলদা! তরে কখন
খাড়াইতে কইলাম!!!!!
-ছ্যার! অহনেই তো
কইলেন!
-ওও বুঝসি। বয়! বয়!
ভাবতে দে।
-কিন্তু ছ্যার!
-ক
- ওই যে বলদা কইলেন, হেইডার সমসক্রিত কি হইবো? বলদা তো
দুয়ো সম্প্রদায়ই কয়!
হেইডা কি যাবনিক শব্দ?
-ছ্যামড়া, তুই তো মহা
বজ্জাত! এইডা ন্যায়ের প্রশ্ন! হেইগুলা বোঝোনের বয়স তোগো হয় নাই!
- ছাড়ান দ্যান। অহনে কন, টেরামের সমসক্রিত কি হইবো?
-শকট
- এই দ্যাহেন, তা অইলে গিয়া, বলদা গাড়ীর
সমসক্রিত কি?
-ওইটা পরে কমু অনে! টেরাম গাড়ীর তো টিক্কি থাহে! তা হইলে
গিয়া- শিখা! আছে-
সমন্বিত। লাইন- লৌহবর্ত্ম!
ইলেকট্রিকে চলে- বিদ্যুশ্চালিত। উমমমমমম! ভাবতে দে!!! তা অইল হইবো গিয়া- শিখা সমন্বিত লৌহবর্ত্মে
বিদ্যুশ্চালিত স্বতশ্চল শকটঃ।
বুঝছস?
পুরাডা
দাঁড়াইল গিয়া -শিখা সমন্বিত লৌহবর্ত্মে বিদ্যুশ্চালিত স্বতশ্চল শকটাৎ উল্লম্ফ!
আমরা স্বতঃর্স্ফূত ভাবে হাততালি দিয়ে উঠলাম।
শুনে পণ্ডিতস্যার হাঁফ ছাড়লেন! শান্তি, শুধু আস্তে একটা ফুট কেটেছিল- টেরাম, তলে হইল গিয়া জাতে বাউন!!!!
শিখা আসে কইতাসেন!!! পণ্ডিতস্যার বোধহয় শুনতে পান নি বা শুনেও উপেক্ষা করেছিলেন।
তখনও কি পণ্ডিতস্যার জানতেন, আরও কি অপেক্ষা করে আছে তাঁর জন্য? দুই বছর ধরে এনকোর পাওয়া আর একটি ছিল, গদা। ভালো নামটা আর মনে নেই! ওই নামে
ডাক শুনতে অভ্যস্থ ছিল সে। ফলে ভালো
নামে ডাক শুনলে, ও নিজেও উত্তর দিত না। কারণ বোধহয় একটাই ছিল- ভালো নামটা ও নিজেও ভুলে গেসল। ##গদা খুব “শিব্রাম চক্কোত্তি” পড়ত!###
তা গদা হঠাৎ কাঁচুমাচু হয়ে জিজ্ঞেস করল-
-ছ্যার! একডা
শ্লোকের মানে একডু কইয়া দেবেন?
- আরে ক না! সংস্কৃত শ্লোকের মানে কইতে পারুম না!!!! তইলে কিসের আমি হরিহর দেবশর্মণ?
- কইলাম তইলে- বলে করযোড়ে, মুদিত নয়নে; গদা সুর করে শুরু করল: -
হবর্তাবা কহিপ্তাসা, টজেগে ন
শকেডুএ।
রন্তগাযু শদে ইব সীবাঙ্গবঃ।।
স্পষ্টতই
পণ্ডিতস্যার কুলকুল করে ঘামছেন, দেখতে
পেলাম। তখন, ইস্কুলে ইলেকট্রিক ছিল না। রতন, জোরে জোরে
পাখার হাওয়া করতে লাগল। সাথে, পণ্ডিতস্যার
মাথাকে বাম থেকে ডান দিকে ঘোরাতে শুরু করলেন। শান্তি জিজ্ঞেস করল:-
-মাথাডা ঘোরান ক্যান, পণ্ডিতস্যার?
-আরে, হাওয়ার
ইস্পিড বাড়াইতেসি, লগে মাথা থিকা শ্লোকের মানে বাইর
করনের চেস্টা!
ঢং ঢং করে ক্লাস শেষ করার ঘন্টা পড়ল। ক্লাস
থেকে বেরিয়ে, পণ্ডিতস্যার দৌড়ে টীচারস রুমের দিকে চলে গেলেন। পরে, টিফিনের জন্য আধঘন্টা ছুটি। সবাই গদাকে চেপে ধরলুম। ক, শ্লোকটার
মানে ক- শান্তির চিৎকার! গদা শুরু করল:- আরে ওই শ্লোকটা বুঝছস, কতকগুইলা খবরের কাগজ আর সাময়িক কাগজের নাম উল্টাইয়া দিসি। লগে, ইব আর বিসর্গ জুইড়া দিসি।
- খুইল্যা ক!
- হবর্তাবা= বার্তাবহ, কহিপ্তাসা= সাপ্তাহিক,টজেগে ন শকেডুএ= এডুকেশন গেজেট, রন্তগাযু=
যুগান্তর, শদে=
দেশ, সীবাঙ্গব = বঙ্গবাসী। বোঝসস?
টিফিন পিরিয়ড শেষ হল। ইংরাজীর ক্লাস। স্বয়ং
হেডস্যার আসবেন। আমরা সবাই তটস্থ।
হেডস্যার এসেই বললেন- তোদের আজ ইংরাজী কথপোকথন শেখাব। আ্যাই গদা, তোকে আমি
ইংরাজীতে জিজ্ঞেস করব আর তুই ইংরাজীতেই উত্তর দিবি। বুঝেছিস? গদা মাথা নাড়ল। সেটাতে, হ্যাঁ, না কিছুই বোঝা যায় না।
হেডস্যার শুরু করলেন-
-হোয়াট ইজ ইওর ফাদার?
- মাই ফাদার ইজ আমব্রেলা ফ্যাকটরী।
- হোয়াট?
- মানে ছ্যার, আমার বাবায় ছাতাকলে কাম করে!
হেডস্যার খানিক চোখ বন্ধ করে বসে থাকলেন। কিছু
যেন বোঝার চেস্টা!!!!!
এরপর শান্তি! ( সবাই লাষ্ট বেঞ্চ, আমি সহ)
- হোয়াট মেটেরিয়ালস ইউ ইউজ ফর ইয়োর হাউজ?
- মাই হাউজ ইজ চ্যাকার ব্যাড়া ছ্যার!
- হোয়াট ইজ চ্যাকার ব্যাড়া? (হেডস্যারের হুংকার!!!)
- ছ্যার, চ্যাকার
ব্যাড়া?
দাউ দিয়া কাটিং ব্যাম্বু ঝাড়া। পাতলা পাতলা কাটিং তাড়া। ইঞ্চি ইঞ্চি গাড়া গাড়া। পেরেক দিয়া ঠুকিং ব্যাড়া! দ্যাট ইজ কলড্ চ্যাকার
ব্যাড়া!
সহ্যের সীমা অতিক্রম করলে যা হয় আর কি! সপাং সপাং করে লাষ্ট বেঞ্চের সবাইকে বেত মেরে তিনি ছিটকে বেরিয়ে
গেলেন ক্লাস থেকে!!!!!!!!
আমরা, পকেটমারের মত মার খেতে
অভ্যস্থ ছিলাম । গায়েই লাগল না ।
পরের ক্লাস, বিজন স্যারের। অঙ্ক!!!!!!! তাও আবার আ্যলজেবরা! বেতের মারের ব্যাথাকে নো পরোয়া ।
বিজন স্যার বোর্ডে, বড় বড় করে লিখলেন:-
এক্স=১০
ওয়াই=২
তাহলে এক্স/ওয়াই=
?
শান্তি!!! তুই বোর্ডে
আইয়া অঙ্কটা কইষা দে!!!
শান্তি বীরদর্পে বোর্ডে গেল। চক দিয়ে লিখতে
লাগল:-
২)১০(৪১
৮
-------------
২
-------------
২
-------------
X
সুতরাং, এক্স/ওয়াই=৪১।
বিজন স্যার
বার বার করে চশমা খোলেন আর পরেন । ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে হাঁ করে তাকান আর কি যেন
ভাবতে থাকেন উদাসীন ভাবে ।
ঢং করে ছুটির ঘন্টা! লাফ দিয়ে বিজন স্যার বেরিয়ে
গেলেন।
শান্তি চীৎকার করে বলল- ল্যাহাপড়া!!!!!
আমরা কোরাসে বললুম- এনকোর!!!!!!!