Saturday, August 24, 2013

যারা যারা জানতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি:-
=
১. দুর্গার গমনাগমন কি করে ঠিক হয়?


২. ঠিক কখন গমন এবং আগমন ঘটে?


৩. গমনাগমনের ফলাফল কোন সময় থেকে ঘটতে শুরু করে এবং কতদিন স্থায়ী হয়?

=
উত্তর :-


=
১. গমনাগমন - রবি এবং সোম - গজ, মঙ্গল এবং শনি - ঘোটক, বৃহস্পতি এবং শুক্র - দোলা, বুধ - নৌকা,



২. আগমন - মহা সপ্তমী, গমন - বিজয়া দশমী



৩. গমনাগমনের ফল - দুটোই একই সঙ্গে চলতে থাকে


=
ঋণ :- শ্রী হিমাংশুকুমার স্মৃতিতীর্থ
=
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকার ব্যবস্থাপক










কোন দিনে আগমন ও গমনে কি যানবান ব্যবহার করা হবে সেই ব্যাপারে বলা হয়েছে-রবৌ চন্দ্রে গজারূঢ়া, ঘোটকে শনি ভৌময়োঃ, গুরৌ শুক্রে চ দোলায়াং নৌকায়াং বুধবাসরে।সপ্তমীর দিনে যদি রবিবার এবং সোমবার হয়, তাহলে দুর্গার আগমন ও গমন হবে গজে। ফল-গজে চ জলদা দেবী শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা। ঠিক এই রকমই শনিবার ও মঙ্গলবারে দুর্গার আগমন ও গমন হলে, ঘোটকের প্রভাব থাকবে। অর্থাৎ ফল-ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে। যদি বুধবারে দেবী দুর্গার আগমন ও গমন হয়, তাহলে তিনি আসবেন এবং যাবেন নৌকায়। ফল-শস্যবৃদ্ধিস্তুথাজলম। আবার দুর্গার আগমন ও গমন যদি বৃহস্পতি ও শুক্রবারে হয় তাহলে তিনি দোলায় আসবেন এবং যাবেন। ফল-দোলায়াং মরকং ভবেৎ
 পৌরাণিক যুগ থেকে আজ পর্যন্ত দেখা গেছে যে, গজ গোড়া থেকেই বিশেষ সম্মানীয় জায়গায় নিজের স্থান করে নিয়েছে। দেব-দেবী ছাড়াও রাজা, মহারাজা, জমিদারদের কাছেও গজরাজকীয় মর্যাদা পেয়েছে। হয়তো তাই দেবী দুর্গার গজে আগমন ও গমনকে কেন্দ্র করে বলা হয়েছে-গজে চ জলদা দেবী শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা।অর্থাৎ এই আগমন ও গমনে বসুন্ধরা শস্যপূর্ণ হয়ে মানুষকে সুখ, স্বাচ্ছন্দ্যে ভরিয়ে তুলবে। অন্যদিকে ঘোটক দেব-দেবী ও মানুষের কাজে ব্যবহৃত হলেও গজের মতো মর্যাদা না দিয়ে ঘোটকে মায়ের আগমন ও গমন নিয়ে বলা হয়েছে-ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে। অর্থাৎ ঘোটকে আগমন ও গমনে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রেও অস্থিরতা প্রকাশ পাবে। যেমন, রাজনৈতিক উত্থান, পতন, সামাজিক স্তরে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, গৃহযুদ্ধ, দুর্ঘটনা, অপমৃত্যু ইত্যাদির প্রভাব বাড়বে। আবার নৌকায় আগমন ও গমনে বলা হয়েছে শস্যবৃদ্ধিস্তুথাজলম। এ ক্ষেত্রে প্রবল বন্যা, ঝড়, অতিবৃষ্টি ইত্যাদির জন্যে একদিকে প্লাবন ও ক্ষয়ক্ষতি এবং অন্যদিকে দ্বিগুণ শস্যবৃদ্ধি। এর মধ্যে দোলায়আগমন ও গমন সবচেয়ে অশুভ। তাই দোলা সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে, দোলায়াং মরকং ভবেৎ। মহামারি, ভূমিকম্প, যুদ্ধ, মন্বন্তর, খরা ইত্যাদির প্রভাবে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু তো ঘটাবেই, আবার সেই সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতিও হবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, একমাত্র গজ ছাড়া দেবী দুর্গার অন্য তিন যানবাহনের মাধ্যমে ধ্বংস বা লয়কে ব্যবহার করা হয়েছে। শুধুমাত্র গজই প্রয়োজনমতো বৃষ্টিধারায় বসুন্ধরাকে ধন-ধান্যে সমৃদ্ধ করে তোলে ।


Saturday, August 3, 2013

জলসা বা ফাংশান, যে নামই হোক ।
অনেক যন্ত্রপাতি, মঞ্চে গাইছেন কোনো ভদ্রলোক ।।
আহা আহা বাহা বাহা মাথা নড়ে প্রথম আসনে   ।
এমন মুগ্ধ শ্রোতা কখনও কোথা পায় নি জীবনে ।।
গান শেষে জিজ্ঞাসে, কেমন লাগল অনুষ্ঠান ?
খ্যামা দ্যান, কানে ছিল ওয়াক ম্যান, তাই পরিত্রাণ !!!!!!!


Friday, July 12, 2013

তারিণী খুড়ো



ঘনাদা আর টেনিদার পর তারিণী খুড়ো । পুরো নাম-তারিণীচরণ বাঁডুজ্জেবাঁড়ুজ্জে-  “বন্দ্যোপাধায়পদবীর চলতি নাম ।
গল্পের স্টক খুড়োর অঢেল নানা ধরণের চাকরী করতে গিয়ে ভদ্রলোক সারা ভারতবর্ষ ঘুরে বেড়িয়েছেন অভিজ্ঞতার ঝুড়ি একেবারে ভর্তি হয়ে টইটুম্বুরবিচিত্র সেই সব অভিজ্ঞতা, আর   তাই গল্পগুলোও নানা স্বাদের ।
তারিণী খুড়োর মতে, আর্টের খাতিরে যেটুকু কল্পনার আশ্রয় নিতে হয় সেটুকু ছাড়া আর নাকি সবই সত্যি!! অবশ্য এই আর্টের খাতিরে কল্পনার আশ্রয় নেবার কথাই বা কে স্বীকার করে? আমাদের নমস্য ঘনাদা করেননি, টেনিদাও করেননি।
তারিণী খুড়ো প্রায়ই বলেন, “আমার মনের সব কপাট খোলা। আমি হাঁচি, টিকটিকি, ভূত-প্রেত, দত্যি-দানা, বেদ-বেদান্ত, আইন্সটাইন-ফাইন্সটাইন সব মানি। বোঝো ঠ্যালা !!!
অবিবাহিত এই মানুষটি থাকেন কলকাতার শোভাবাজারের বেনেটোলায়, পুরোপুরি ঠিকানাটা কাউকে বলেছেন বলে তো মনে পড়ে না । বিকেলের চা-জলখাবার খাওয়ার জন্যই বেনেটোলা থেকে বালিগঞ্জে আসেন তিনি গল্প শোনাতে। বাস না পেলে পুরো রাস্তা হেঁটেই পাড়ি দেন। বাস ভাড়া বাঁচাতে, তিনি রোজই হেঁটে আসেনএটা আমার আন্দাজ । কোত্থাও  অবশ্য লেখা নেই এই বাস ভাড়া বাঁচানোর কথাটা ।
ঘনাদার মতোই লম্বা-চওড়া গল্প বলতে ভালবাসেন তারিণী খুড়ো। ভুতের গল্প থেকে হাসির গল্প কি নেই তার ঝোলায়অধিকাংশ গল্পেই দেখা যায় আসন্ন ঝামেলা বা সমস্যা থেকে তারিণী খুড়ো বেঁচে গেছেন স্রেফ উপস্থিত বুদ্ধির জোরে। অনেক সময় আবার  ভাগ্যের জোরেও কেটেছে ফাঁড়া। খুড়োর জন্ম বাংলার মধ্যবিত্ত পরিবারে হলেও কাজকর্মের সূত্রে নিজেকে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন পুরো ভারতে।  তাই বেশ একটা সর্বভারতীয় ফ্লেভার তাঁর সব গল্পেই ।
স্কুল পড়ুয়া ন্যাপলা, ভুলু, চটপটি, সুনন্দরা হচ্ছে এই সব গল্পের শ্রোতা ।
কেমন মানুষ তারিণী খুড়ো? জীবনে প্রচুর রোজগার করেছেন। কিন্তু সারাক্ষণ টাকার পেছনে আদৌ দৌড়ননিমাঝে মাঝে রোজগারের ওপর বিতৃষ্ণা এসে গেলে সব ছেড়েছুড়ে স্রেফ ভ্রমণের নেশায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্যকে কখনো খুব একটা গুরুত্ব দেননি। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটাই তারিণী বাঁডুজ্জের অভ্যেস। তাঁর নেশা দুটিও খুবই সামান্য। তাঁর নেশা দুটিও খুবই সামান্য। দুধ-চিনি ছাড়া চা আর এক্সপোর্ট কোয়ালিটির বিড়ি।
তারিণী খুড়োর সাথে  রক্তের কোন সম্পর্ক নেই এই সব খুদে শ্রোতাদেরতিনি ওদের বাবা-কাকাদের দেশের পড়শি সূত্রে খুড়ো, ওদেরও খুড়ো। আসলে খুড়ো নিজেকে বৃদ্ধ ভাবতে আদৌ রাজি নন। ওর শ্রোতাদের মধ্যে ন্যাপলা একবার খুড়োকে দাদু বলে ডেকেছিল। খুড়ো তাতে বেজায় চটেছিলেন। আর চটবেন নাই বা কেন? ওঁর সঙ্গে যখন আমাদের প্রথম পরিচয় হয় তখন তাঁর বয়স চৌষট্টি। কিন্তু আদৌ অথর্ব নন তিনি। ছফিট শরীরটা এই বয়সেও মজবুততারিণী খুড়োর মতে ৩৩টি শহরে তিনি ৫৫ রকম কাজ করেছেন। তার সবকটির হদিশ আমরা পাইনি। তবে যা পেয়েছি তাই বা কম কি ! করদ রাজ্যগুলির জনাকয়েক রাজার সেক্রেটারি কিম্বা ম্যানেজার, ব্যবসায়ী বা প্রাক্তন অভিনেতার সেক্রেটারি, ম্যাজিশিয়ানের ম্যানেজার, ফিল্ম কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজার। আবার স্বাধীন ব্যবসাতেও তিনি আছেন। কখনো শিল্পীর মডেল, কখনো খবরের কাগজের ফ্রি-ল্যান্স জার্নালিস্ট এমন কি কখনো বা জ্যোতিষীওস্টেজে এবং স্টেজের বাইরে অভিনয়ও করেছেন তারিণীচরণ বাঁডুজ্জে। ৩৩টা শহরের পুরো হিসেবও নেই আমাদের কাছে। কোলকাতা লক্ষ্ণৌ, পুনে, আজমীর, হায়দ্রাবাদ, নাগপুর, ডুমনিগড়, ধুমলগড়, মার্তন্ডপুর, মন্দোর, তারাপুর, ছোট নাগপুরে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর সেইসব অভিযান কাহিনী। সব জায়গাগুলির হাল-হদিশ হয়তো ম্যাপে পাওয়া যাবে না। কিন্তু তাতে অবিশ্বাস করার কিছু নেই। ভগবানের সৃষ্টিতে ডিফেক্ট থাকে, আর মানুষের তৈরি ম্যাপে ভুল থাকতে পারে না?
সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্ট এই তারিণী খুড়ো চরিত্রটির পুরো জীবনটাই রোমঞ্চকর ঘটনায় ভরপুর।  যারা  এই সব গল্প পড়তে চাও- তারা পড়তে পারো :- “তারিণী খুড়োর অভিযান বই আর সত্যজিৎ রায়ের ছেলে সন্দীপ রায়ের যেখানে ভূতের ভয় চলচিত্রটি দেখতে পারোচলচিত্রে মোট তিনটে গল্পের মধ্যে প্রথম দুটো সত্যজিৎ রায়ের লেখা , শেষেরটা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের  ।
   
কৃতজ্ঞতা :- তারিণী খুড়োর অভিযান
                বিডি নিউজ টোয়েন্টি ফোর ডটকম/তামিম আবদুল্লাহ
                ইন্টারনেট

দিয়ালা কিশোর পত্রিকায় প্রকাশিত



Thursday, June 20, 2013

ল্যাহাপড়া

লেখাপড়ার কথা ভাবলে, আজও শিউরে উঠি। এই বয়সেও দুঃস্বপ্ন দেখি, পরীক্ষার হলে কিস্সু লিখতে পারছি না, আর দরদর করে ঘেমে যাচ্ছি।
পরীক্ষার খাতাতে মুজতবা সাহেব নাকি এ্যায়সা আ্যানসার ঝেড়েছিলেন, যে পরীক্ষককেরা বলেছিলেন-

-এনকোর! ( ফিরসে বা রিপিট) আর সেই ক্লাসে তাঁকে আবার রেখে দিতেন। পরের বছর পর্য্যন্ত পরীক্ষককেরা অপেক্ষা করতেন, কখন আবার এইরকম উত্তর মুজতবা সাহেব লিখবেন।( এটা মুজতবা সাহেব নিজেই লিখে গেছেন)
এনকোর ব্যপারটা একটু বুঝিয়ে বললে বোধহয় ভালো হয়। আগেকার দিনে, যাত্রা থিয়েটারে কোন সিন ভালো লাগলে, দর্শকেরা বলতেন--এনকোর! (ইংরেজী শব্দ) আর কুশীলবেরা সেই দৃশ্যটি আবার অভিনয় করতেন!
এ দিক দিয়ে আমার পরীক্ষককেরা আমাকে এনকোর না বললেও, ফার্ষ্ট কল বা থার্ড কলেও আমাকে পাশ করাতেন না! ফলং- প্রহারং। আবার দাদু গিয়ে বণ্ড দিয়ে আমাকে ওপরের ক্লাসে ওঠাতেন।
ঋষি বঙ্কিম বলেছিলেন:- ( মুজতবা সাহেবের রেফারেন্স)
ছাত্র জীবন হইত বড় সুখের জীবন
যদি না থাকিত এগ-জামি-নেশন!
একটা চালু কথা(গুজব?) আছে। ঋষি বঙ্কিমও নাকি প্রথম সুযোগে স্নাতক পর্যায়ে পাশ করতে পারেন নি। যেহেতু, ওই পরীক্ষা কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পরীক্ষা ছিল, সঙ্গে সঙ্গে গ্রেস মার্ক দিয়ে পাস করানো হয়! ( প্লিজ, গুজবে কান দেবেন না)
ওই দুই লাইনের কবিতাটা পড়ে মনে হয়, কথাটা সত্যি হলেও হতে পারে। যাই হোক, রেডুকুৎসিও আব আ্যবসার্ডাম ( রিডিউসড টু আ্যবর্সাড থিংস্- আবার মুজতবা সাহেব!!!) সূত্রে আমি পরীক্ষার ব্যাপারে মুজতবা সাহেব আর ঋষি বঙ্কিমের সমগোত্রীয়!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
এক তালেবর ম্যাট্রিকে ফেল করে, নাকি বলেছিল:- ম্যাট্রিকুলেশন এক্সামিনেশন ইজ এ গ্রেট বদারেশন টু আওয়ার নেশন। ফাদারস আ্যডভাইস ফর কালটিভেশন আ্যাণ্ড মাদারস কনশোলেশন।

সেই মাতব্বরটি ( আমার কাছে এখনও প্রাতঃস্মরণীয়) ইতিহাসে, বাবর সম্বন্ধে লিখেছিল-
বাবর ওয়াজ এ গ্রেট এম্পপেরর। হি ফ্যাটাচুলেটেড আ্যণ্ড ল্যাটাচুলেটেড। হি অলসো পারপেনডিকুলারলি গরমরালাইজড এভরিথিং!

আরও ছিল, কিন্তু সেটা আর জানা যায় নি! ( দেশের কি দুর্গতি! মুন্না ভাইয়ের ভাষায় ওয়াট লগা দিয়া! আর              মুন্নাভাই জেলে ।)

হেসে উড়িয়ে দিলেন তো! তা ঠিকই করেছেন। এসব অবাস্তব কথা পড়াই উচিত নয়! মহা পাপ!

আমার তখন ক্লাস সেভেন। সংস্কৃত শেখান হচ্ছে। পণ্ডিত মশাই শেখাচ্ছেন- বৃক্ষ ( উচ্চারণ করেছিলেন- বৃখ্স) হইতে লম্ফ প্রদান কর।
বৃক্ষাৎ উল্লম্ফ!

শান্তি (আমাদের পাগলা দাশু) বলল- স্যার, থুড়ি পণ্ডিতস্যার- ট্রাম হইতে লম্ফ প্রদান কর, এর সংস্কৃত কি হবে?
ফার্ষ্ট বয় কার্ত্তিক ভদ্রের উত্তর:- ট্রাম- অ কারান্ত শব্দ, নর শব্দের ন্যায়, সুতরাং ওটা হবে-

ট্রামাৎ উল্লম্ফ!

পণ্ডিতস্যার খেপে গেলেন। বললেন:-
ওহে শাখামৃগের ( বাঁদর) দল! ট্রাম, ইংলণ্ডিয় যবন শব্দ। সংস্কৃত ভাষায় যাবনিক শব্দের প্রবেশ নিষিদ্ধ!!!!!!
তবে, কি হবে পণ্ডিতস্যার?
দাঁড়া, একটু চিন্তা করতে দে!
শান্তি উঠে দাঁড়াল!
-এ কিখাড়াইলি ক্যান? (পণ্ডিতস্যার, রেগে গেলে বা হতচকিত হলে মাতৃভাষা বলতেন)
-আপনেই তো কইলেন!
-বলদা! তরে কখন খাড়াইতে কইলাম!!!!!
-ছ্যার! অহনেই তো কইলেন!
-ওও বুঝসি। বয়! বয়! ভাবতে দে।
-কিন্তু ছ্যার!
-
- ওই যে বলদা কইলেন, হেইডার সমসক্রিত কি হইবো? বলদা তো দুয়ো সম্প্রদায়ই কয়! হেইডা কি যাবনিক শব্দ?
-ছ্যামড়া, তুই তো মহা বজ্জাত! এইডা ন্যায়ের প্রশ্ন! হেইগুলা বোঝোনের বয়স তোগো হয় নাই!

- ছাড়ান দ্যান। অহনে কন, টেরামের সমসক্রিত কি হইবো?
-শকট
- এই দ্যাহেন, তা অইলে গিয়া, বলদা গাড়ীর সমসক্রিত কি?

-ওইটা পরে কমু অনে! টেরাম গাড়ীর তো টিক্কি থাহে! তা হইলে গিয়া- শিখা! আছে- সমন্বিত। লাইন- লৌহবর্ত্ম! ইলেকট্রিকে চলে- বিদ্যুশ্চালিত। উমমমমমম! ভাবতে দে!!! তা অইল হইবো গিয়া- শিখা সমন্বিত লৌহবর্ত্মে বিদ্যুশ্চালিত স্বতশ্চল শকটঃ।
বুঝছস?
পুরাডা দাঁড়াইল গিয়া -শিখা সমন্বিত লৌহবর্ত্মে বিদ্যুশ্চালিত স্বতশ্চল শকটাৎ উল্লম্ফ!
আমরা স্বতঃর্স্ফূত ভাবে হাততালি দিয়ে উঠলাম। শুনে পণ্ডিতস্যার হাঁফ ছাড়লেন! শান্তি, শুধু আস্তে একটা ফুট কেটেছিল- টেরাম, তলে হইল গিয়া জাতে বাউন!!!! শিখা আসে কইতাসেন!!! পণ্ডিতস্যার বোধহয় শুনতে পান নি বা শুনেও উপেক্ষা করেছিলেন।
তখনও কি পণ্ডিতস্যার জানতেন, আরও কি অপেক্ষা করে আছে তাঁর জন্য? দুই বছর ধরে এনকোর পাওয়া আর একটি ছিল, গদা। ভালো নামটা আর মনে নেই! ওই নামে ডাক শুনতে অভ্যস্থ ছিল সে। ফলে ভালো নামে ডাক শুনলে, ও নিজেও উত্তর দিত না। কারণ বোধহয় একটাই ছিল- ভালো নামটা ও নিজেও ভুলে গেসল। ##গদা খুব শিব্রাম চক্কোত্তি পড়ত!###
তা গদা হঠাৎ কাঁচুমাচু হয়ে জিজ্ঞেস করল-
-ছ্যার! একডা শ্লোকের মানে একডু কইয়া দেবেন?
- আরে ক না! সংস্কৃত শ্লোকের মানে কইতে পারুম না!!!! তইলে কিসের আমি হরিহর দেবশর্মণ?
- কইলাম তইলে- বলে করযোড়ে, মুদিত নয়নে; গদা সুর করে শুরু করল: -

হবর্তাবা কহিপ্তাসা, টজেগে ন শকেডুএ।
রন্তগাযু শদে ইব সীবাঙ্গবঃ।।

স্পষ্টতই পণ্ডিতস্যার কুলকুল করে ঘামছেন, দেখতে পেলাম। তখন, ইস্কুলে ইলেকট্রিক ছিল না। রতন, জোরে জোরে পাখার হাওয়া করতে লাগল। সাথে, পণ্ডিতস্যার মাথাকে বাম থেকে ডান দিকে ঘোরাতে শুরু করলেন। শান্তি জিজ্ঞেস করল:-
-মাথাডা ঘোরান ক্যান, পণ্ডিতস্যার?
-আরে, হাওয়ার ইস্পিড বাড়াইতেসি, লগে মাথা থিকা শ্লোকের মানে বাইর করনের চেস্টা!
ঢং ঢং করে ক্লাস শেষ করার ঘন্টা পড়ল। ক্লাস থেকে বেরিয়ে, পণ্ডিতস্যার দৌড়ে টীচারস রুমের দিকে চলে গেলেন। পরে, টিফিনের জন্য আধঘন্টা ছুটি। সবাই গদাকে চেপে ধরলুম। ক, শ্লোকটার মানে ক- শান্তির চিৎকার! গদা শুরু করল:- আরে ওই শ্লোকটা বুঝছস, কতকগুইলা খবরের কাগজ আর সাময়িক কাগজের নাম উল্টাইয়া দিসি। লগে, ইব আর বিসর্গ জুইড়া দিসি।
- খুইল্যা ক!
- হবর্তাবা= বার্তাবহ, কহিপ্তাসা= সাপ্তাহিক,টজেগে ন শকেডুএ= এডুকেশন গেজেট, রন্তগাযু= যুগান্তর, শদে= দেশ, সীবাঙ্গব = বঙ্গবাসী। বোঝসস?
টিফিন পিরিয়ড শেষ হল। ইংরাজীর ক্লাস। স্বয়ং হেডস্যার আসবেন। আমরা সবাই তটস্থ।
হেডস্যার এসেই বললেন- তোদের আজ ইংরাজী কথপোকথন শেখাব। আ্যাই গদা, তোকে আমি ইংরাজীতে জিজ্ঞেস করব আর তুই ইংরাজীতেই উত্তর দিবি। বুঝেছিস? গদা মাথা নাড়ল। সেটাতে, হ্যাঁ, না কিছুই বোঝা যায় না।
হেডস্যার শুরু করলেন-
-হোয়াট ইজ ইওর ফাদার?
- মাই ফাদার ইজ আমব্রেলা ফ্যাকটরী।
- হোয়াট?
- মানে ছ্যার, আমার বাবায় ছাতাকলে কাম করে!
হেডস্যার খানিক চোখ বন্ধ করে বসে থাকলেন। কিছু যেন বোঝার চেস্টা!!!!!
এরপর শান্তি! ( সবাই লাষ্ট বেঞ্চ, আমি সহ)
- হোয়াট মেটেরিয়ালস ইউ ইউজ ফর ইয়োর হাউজ?
- মাই হাউজ ইজ চ্যাকার ব্যাড়া ছ্যার!
- হোয়াট ইজ চ্যাকার ব্যাড়া? (হেডস্যারের হুংকার!!!)
- ছ্যার, চ্যাকার ব্যাড়া? দাউ দিয়া কাটিং ব্যাম্বু ঝাড়া। পাতলা পাতলা কাটিং তাড়া। ইঞ্চি ইঞ্চি গাড়া গাড়া। পেরেক দিয়া ঠুকিং ব্যাড়া! দ্যাট ইজ কলড্ চ্যাকার ব্যাড়া!
সহ্যের সীমা অতিক্রম করলে যা হয় আর কি! সপাং সপাং করে লাষ্ট বেঞ্চের সবাইকে বেত মেরে তিনি ছিটকে বেরিয়ে গেলেন ক্লাস থেকে!!!!!!!!
আমরা, পকেটমারের মত মার খেতে  অভ্যস্থ ছিলাম । গায়েই লাগল না ।
পরের ক্লাস, বিজন স্যারের। অঙ্ক!!!!!!! তাও আবার আ্যলজেবরা! বেতের মারের ব্যাথাকে নো পরোয়া ।

বিজন স্যার বোর্ডে, বড় বড় করে লিখলেন:-
এক্স=১০
ওয়াই=
তাহলে এক্স/ওয়াই= ?
শান্তি!!! তুই বোর্ডে আইয়া অঙ্কটা কইষা দে!!!
শান্তি বীরদর্পে বোর্ডে গেল। চক দিয়ে লিখতে লাগল:-
)১০(৪১
     

-------------
    
-------------

      
-------------


        X
সুতরাং, এক্স/ওয়াই=৪১
বিজন স্যার বার বার করে চশমা খোলেন আর পরেন । ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে হাঁ করে তাকান আর কি যেন ভাবতে থাকেন উদাসীন ভাবে ।
ঢং করে ছুটির ঘন্টা!  লাফ দিয়ে বিজন স্যার বেরিয়ে গেলেন।
শান্তি চীৎকার করে বলল- ল্যাহাপড়া!!!!!
আমরা কোরাসে বললুম- এনকোর!!!!!!!