কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ট্রেনে নামল, অমল হাসিমারা ষ্টেশনে ।
ষ্টেশন থেকে বেরিয়েই দেখল- অমল বোস “ ডুবপাড়া টি এষ্টেট” লেখা একটা বোর্ড নিয়ে
দাঁড়িয়ে, একজন। প্লেনে যাবার কথা বলেছিল কোম্পানি, কিন্তু বাবার বাধা । কে জানে, প্লেনে আবার কি সব গণ্ডগোল হচ্ছে
আজকাল ।
কাছে যেতেই লোকটা নমস্কার করে বলেছিল :- স্যার, আপনিই তো
অমল বোস? আমাদের বাগানের নতুন সায়েব ?
মাথা হেলিয়ে হ্যাঁ বলতেই, একটা হুডওয়ালা মারুতি জিপের কাছে
নিয়ে বলেছিল :- উঠুন স্যার!
প্রায় জনহীন ছিমছাম ছোট ষ্টেশনের বাইরের দোকান থেকে পাঁচ
প্যাকেট সিগারেট কিনে উঠে পড়েছিল জীপে- অমল । একটা সুন্দর সুবাস ভেসে আসছে –
চারিদিক থেকে ।
হঠাৎ মাথার ওপর দিয়ে গর্জন । অমল জানতো- হাসিমারা ভারতীয় বায়ু সেনার এয়ার
বেস । বুঝলো- একটা জেট উড়ে গেল, মাথার ওপর দিয়ে ।
তারপর চিলাপাতার জঙ্গল দিয়ে যাত্রা শুরু । ড্রাইভারের নাম,
খগেন বর্মন । কথায় কথায় নিজের পরিচয় দিল । কোচবিহারের
আদি বাসিন্দা । ত্রিশ বছর ধরে কাজ করতে করতে এখন হেড ড্রাইভার । সারা রাস্তা, বকবক করে বুঝিয়ে গেল চা বাগানের
কালচার । চিলাপাতা জঙ্গলের হাতী আর
বাইসনের কথা ! কয়েকটা অজানা পাখী ছাড়া আর কিছু দেখা গেল না যদিও ।
বোতল থেকে কয়েক ঢোঁক জল খেয়ে অমল বলেছিল- আচ্ছা, খগেন বাবু
এবারে একটা হোটেল থেকে দুপুরের খাবার খেলে হতো না ?
খগেন পান চিবোতে চিবোতে হেসে বলেছিল :- আমাকে, বাবু বলবেন
না, নাম ধরেই ডাকবেন । এই জঙ্গলে আপনি হোটেল খুঁজতিসেন ? চলেন চলেন- আগত্ বাগানে চলেন । আপনার বাংলো তে চান টান করে
লাঞ্চো খাবেন ।
মানে ?
আরে কোম্পানীর কাজ তো সকাল
বিকেল ! হাত পুড়িয়ে রান্না করে খেলে কাজ করবেন কখন ? তা
ছাড়া, কোম্পানিরই তো সব পরপাটি ! মালি, কেয়ার টেকার আছে । সব ব্যবস্থা আছে , কোম্পানিরই করা ।
অমল বুঝল – পরপাটি মানে প্রপ্রার্টি ।
কথা বাড়ায় নি অমল । সুন্দর মাখনের মত রাস্তা পেরিয়েই ফরেষ্ট
চেক পোষ্ট । সেটা পেরিয়ে একটু যেতেই ডুবপাড়া টি এষ্টেটের মোরামের রাস্তা শুরু ।
বাঁ দিকে একটা কালি মন্দির । খগেন ষ্টিয়ারিং এক হাতে রেখে, অন্য হাত দিয়ে একটা
নমস্কার ছুঁড়ে দিল, ভক্তি ভরে ।
দু ধারে চা গাছ ।
ধার গুলোতে সিট্রোনিলা গাছ দিয়ে বেড়ার মত করা । এই গাছ চেনে অমল। এই গাছ
থেকেই মশা মারার তেল বের করা হয় । ঝাঁঝাল গন্ধ বেশ ।
চা গাছের মাঝে মাঝে লম্বা গাছ । কোর্সে পড়া ছিল, তবে চাক্ষুষ দেখল এই প্রথম- শেড
ট্রি । চা গাছকে ছায়া দেওয়াই কাজ ওদের । চা গাছ খুব সুখী, একটুতেই এলিয়ে পড়তে পারে
। চা গাছকে আগলে রাখাই কাজ এই শেড ট্রিদের ।
শেড ট্রি গুলোর
গুঁড়ি থেকে একটু ওপর পর্যন্ত সাদা রঙ করা । জেনেছিল- সাদা রঙটা, গুঁড়িতে পিঁপড়ের
আনাগোনা আটকানোর জন্য । বাগানের গাড়ীটা দেখে
বড় গেট টা খুলে দিল গেটকিপার । একটা
স্যালুটও পেল অমল ।
ডান দিকে সশব্দে চলা, চায়ের সুগন্ধ ছড়ান ফ্যাকটরির পাশ দিয়ে বাঁদিকে একটা বড় দোতালা কাঠের বাড়ীর সামনে খগেন
দাঁড় করিয়েছিল গাড়ীটা ।
বড় সায়েবের আপিস দোতালায় । সিনিয়ার ম্যানেজার হিসেবেই পরিচিত ।
যান, দেখা করে আসেন । আমি অপেক্ষা করতেসি, আপনাকে বাংলো
পৌঁছে আমি চলে যাব খেতে । -খগেন বলেছিল ।
ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে এই চা বাগানে প্রথম আসা, অমলের
। শান্তিনিকেতন থেকে কৃষি বিজ্ঞানে স্নাতকত্তোর পাশ করার পর , কাগজ দেখে একটা
দরখাস্ত দিয়েছিল, কপাল ঠুকে ।
চাকরীটা হয়েও যায়, বেশ কড়া ইন্টারভিউর পর । বেশ কয়েকজনকে ডেকেছিল
কোম্পানি । দুজন সিলেক্টেড, তার মধ্যে অমল একজন । অন্যজন আসামের চা বাগানে পোষ্টিং
পেয়েছে ।
উত্তর বঙ্গ, তার ওপর চা বাগানে কাজ শুনে মার প্রচণ্ড আপত্তি
ছিল । বাবা খুব একটা বাধা দেয় নি । তাই
মায়ের আপত্তি ধোপে টেঁকে নি ।
হিন্দি সিনেমায় রঙীন চা বাগান দেখে আকর্ষণটা বরাবরই ছিল
অমলের ।
বাবার আর মাত্র এক বছর চাকরি ছিল তখন । প্রাইভেট একটা আপিসে
কাজ । মাইনে পত্তর তেমন না হলেও চলে যেত ওদের তিনজনের ।
হাতি বাগানে বাবার পৈত্রিক বাড়ীটা থাকার ফলে , খুব একটা
কষ্ট হয় নি । তবে অমল বুঝতে পারছিল, শান্তিনিকেতনের হোষ্টেলে থেকে ওকে পড়ানোর জন্য
বেশ চাপে ছিল বাবা।
তাই আর রিস্ক নেয় নি ।
একটু অপেক্ষা করতেই ডাক এলো বড় সায়েবের কাছ থেকে। জুতো, মোজা আর বেল্ট পরা হাফ প্যান্টের ওপর হাফ হাতা সার্ট গোঁজা । উনিই বাগানের
সর্বেসর্বা । সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবেই তাঁর পরিচয় ।
চেয়ার থেকে উঠে হাত বাড়িয়ে বললেন- গুড আফটার নুন মিঃ বোস !
ওয়েলকাম টু আওয়ার টি এষ্টেট ! দিস ইজ এ
গ্রুপ অফ মফারসন লিমিটেড ।
অমল হাত মিলিয়ে বলল :- গুড আফটার নুন স্যার ।
ওকে !! প্লিজ গো টু দি আদার রুম অ্যাটাচড্ টু মাই অফিস ।
সাইন দেয়ার ফর ইয়োর প্রেজেন্স ওভার হিয়ার অ্যাণ্ড গো টু ইয়োর বাংলো অ্যাণ্ড
ডিপোজিট এ কপি অফ ইয়োর অ্যাপয়েণ্ট লেটার প্রোভাইডেড উইথ দ্য অরিজিনাল ওয়ান । হ্যাভ
ইয়োর থ্রি এস অ্যাণ্ড লাঞ্চ । রিপোর্ট হিয়ার অ্যাট ফোর পি. এম ।
অমল প্রয়োজনীয় কাজ সেরে কাঠের সিঁড়ি দিয়ে নেমে খগেনের জীপে উঠলো । ঘড়িতে সময় তখন বেলা একটা ।
ভালো করে স্নান করে , বেরোতেই বেয়ারা কিষণ বলল :- টেবিল পে খানা লাগাউঁ সাব ? ইয়া চায় দুঁ পেহলে ? কিষণের সাথে আলাপ করিয়ে দিয়েছে খগেন ।
ট্রেনেই অনেকবার চা খাওয়া হয়ে গেছে তার । তাই চা আর খেলো না
। বলেই দিল
হাঁ ! খানা লগাও ।
রান্নাটা আহামরি কিছু নয়, তবে সাজানো টেবিল আর প্লেট , ছুরি
চামচ দেখে মনে মনে হেসে ফেলেছিল অমল ।
ঠিক করে ফেলেছিল – মা – বাবাকে নিয়ে আসবে । তারপর না হয়
কিষণকে মা রান্না শিখিয়ে দেবে । এই রান্না
বেশীদিন খাওয়া যাবে না ।
তার আগে দেখে নিয়েছে- একটা সাজানো গোছানো গেষ্ট রুম আছে ।
সাধারণত কোম্পানির লোকেরা বাইরে থেকে এলে পদমর্যাদা অনুযায়ী গেষ্ট রুমে থাকে ।
তবে, অমল জুনিয়ার, তাই এখানে গেষ্টের আসার সম্ভাবনা কম । অসুবিধে হবে না, মা-বাবা
এলে । এলেও আরও একটা ঘর আছে । আসবাব পত্র সবই কোম্পানির । মায়, তোয়ালে, সাবান,
দাড়ি কাটার সরঞ্জাম, তেল, সাবান সবই মজুদ।
ঠিক চারটের সময় খগেন গাড়ী নিয়ে এলো । চালাতে চালাতে বলল :-
এবার আপনাকে পৌঁছে দিয়েই আমার ডিউটি শেষ । কাল থেকে আপনার ব্যবস্থা নিজেই করতে হবে
।
মানে, এতবড় চা বাগানটা আমি কি হেঁটে ঘুরবো নাকি, দেখাশোনা
করতে ?
হা হা হা ! আগে তো
সায়েবরা সাইকেলে চড়ে ঘুরতেন সারা বাগান । ট্রাক্টরে করে যেতেন, কাছে পিঠের বাজারে
। পাতা নিয়ে যাবার জন্য একটা বড় চার চাকার
ট্রলি থাকে, ট্রাক্টরের সঙ্গে । এখন অবশ্য সবাই মোটোর সাইকেলে ঘোরে । আপনি মোটোর সাইকেল কেনার জন্য ব্যাংক লোন
পাবেন, আর মাসে বিশ লিটার তেলও পাবেন- তবে, এক বছর বাদে ।
এক বছর বাদে কেন ?
পার্মিনেন্ট হলেই তো পাবেন !
অফিসে পৌঁছতেই, বড় সায়েব সব ম্যানেজার দের সাথে পরিচয় করিয়ে
দিলেন । ফ্যাক্টরি তো বটেই, তার সাথে
বাগানের ইরিগেশন, গুয়াটেমালা গ্রাসের পাতা বা সিট্রোনিলা গাছ ছেঁটে মাটিতে ফেলে
জৈবিক সার করা, পেষ্টিসাইড স্প্রে , ওয়ার্কারদের ওয়েলফেয়ার, ফ্রি রেশন, দরকারে
রেশন মাপা পর্যন্ত, জ্বালানি কাঠ, ফ্রি চা , চা গাছের স্যাপলিংস্ জমিতে লাগান, ইয়ং
ট্রিস্ নারচার করা- সব বুঝে নিতে হবে
ওঁদের কাছ থেকে একে একে, এই এক বছরে ।
অমল হেসে ঘাড় নাড়ল
।
নাও গেট রেডি টু গো টু আওয়ার ক্লাব, হুইচ ইজ ওয়ান্স ইন এ
উইক টাইম । উই মিট দেয়ার এভরি থার্সডে
। দি ক্লাব ইজ ইন আ গাডের্ন, জাষ্ট টোয়োন্টি কিলোমিটারস্ ফ্রম হিয়ার । ইউ
উইল বি ইনট্রোডিউসড্ দেয়ার ।
হাও কান আই আকপ্মানী ইউ স্যার ?
নো প্রোবলেম , ইউ উইল বি পিকড্ আপ বাই মিঃ মিশ্রা আওয়ার
সিনিয়ার অ্যাসিন্টান্ট ম্যানেজার টু হুম ইউ উইল রিপোর্ট নাও অনওয়ার্ডস ।
ক্লাবে গিয়ে কোম্পানির আরও যে সব বাগান আছে ডুয়ার্সে, তাদের
অফিসারদের সাথে পরিচয় হলো ।
বড় গ্লাসে একটা পাতিয়ালা পেগ হুইস্কি ঢেলে- কোম্পানির অন্য বাগানের একজন অ্যাসিণ্টান্ট
ম্যানেজার বললেন – চীয়ার্স !
এই জায়গায় বিনোদন বলতে,
সপ্তাহে একবার দেখা করা সবার সাথে । জম্পেশ ক্রিকেট বা ফুট বল ম্যাচ হলে বড়
স্ক্রীনে সে সব দেখা হয়, একসাথে । ম্যানেজারদের ,মিসেসদের মধ্যে নানা রকম প্রতিযোগিতাও হয় । আলপনা দেওয়া
থেকে শুরু করে, মায় বড়ি দেওয়া, আচার থেকে, ওয়াইন তৈরি করা পর্যন্ত ।
প্রাইজের ব্যবস্থাও থাকে ।
============
২
===========
সন্ধে বেলায় ডুয়ার্সের এই চা বাগানের অফিসার্স বাংলোতে
একা বসে টিভি দেখছিল অমল ।
ডি.টি.এইচ কানেক্সান আর টিভিও কোম্পানির ।
মূল চা বাগান থেকে একটু দূরে এই বাগানটা আউট ডিভিশন নামেই পরিচিত । অনেকটা মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন , আন্দামানের
মত । বাংলোটা তাই একটেরে । পাশে একটা কাঠের উঁচু বাড়ীতে থাকেন আউট হাসপাতালের
কম্পাউণ্ডার । আশে –পাসে চা গাছের সারি ।
রাতের বেলা চৌকিদার থাকে ।
খবরের কাগজ আসে
আঠেরো কি মি দূরের সদ্য জেলা হওয়া শহর থেকে । আসতে আসতে বেলা এগারটা । সেই সময় অমল থাকে
ফিল্ডে । মনে হয়, কোলকাতার সূর্য এখানে উদয় হয় বেলা এগারটায় ! লাঞ্চে, ফিরে উত্তরবঙ্গ সংস্করণের কাগজে চোখ
বুলোয় ।
কিষণ এসে জিজ্ঞেস করল- আজ ডিনারমে কেয়া লেঙ্গে সাব ?
ফ্রিজ মেঁ কেয়া হ্যায় ?
য়্যাদা সব্জী নেহী , লেকিন চিকেন হ্যায় সাব !
ঠিক হ্যায়, চিকেন কারি অওর চাওল বনাও । শুনো- ফ্রিজ সে বরফ
,পানি অওর কাবার্ডসে হুইস্কিকা বটল লানা , সাথমে গ্লাস । স্যালাড্ ভি বনাকে লানা
। কল, কিসি কো ভেজেঙ্গে বাজার মেঁ । ইদানীং এই অভ্যেসটা হয়ে গেছে তার । অবশ্য কিনতে হয় না । বিভিন্ন ম্যানেজাররা
কোলকাতার হেড অফিসে গেলে উপহার পান । তার থেকে জুটে যায় অমলের ।
========
৩
৩
========
সেল ফোনের শব্দে চটকা ভাঙল অমলের । সিনিয়র অ্যাসিটাণ্ট
মানেজার মিশ্রজীর ফোন নং টা ভেসে উঠলো সেল ফোনের স্ক্রীনে । কোম্পানীর
গুড ইভনিং স্যার !
গুড ইভনিং ! শুনো বোস, কল বিএলআরও কো লোগ আয়েঙ্গে ।
গার্ডেনকা জো জমিন হ্যায়, ও কুছ সিভিল
লোগোঁনে ক্যাপচার কর রক্খা হ্যায় । উধার আভি স্যাপলিংস্ লগানা হ্যায় । মৈঁ আপকো,
পর্চা ভেজতা হুঁ অভি, ও জরা সাথ মেঁ রখনা । কাম মেঁ আয়েগা শায়দ ।
ইয়েস স্যার !
এই কয়দিনে অমল বুঝে গেছে – কোম্পানি কালচার । দেখা হলেই বা
ফোন এলে উইস করতে হয়।
সকাল সাতটা থেকে ডিউটি শুরু । আউট ডিভিশনে একটা চক্কর মারে অমল । একটা
সেকেণ্ড হ্যাণ্ড মোটোর সাইকেল কিনে নিয়েছে আপাতত । পেট্রলটাও পাচ্ছে কোম্পানি থেকে।
মিশ্রজি ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ।
চা বাগানে তোলা চা পাতার ওজন হচ্ছে । স্থানীয় ভাষায়- মেলা । তা মেলাই বটে । বেলা বারোটায় কাজ শেষ ওয়ার্কারদের । মধ্যে এক ঘন্টা খাওয়ার ছুটি, তারপর আরও দু থেকে তিন ঘন্টা চলে দুটো পাতা, একটা কুঁড়ি তোলার কাজ ।
নতুন চা গাছ লাগান দরকার । বেশীর ভাগ চা গাছ প্রায় একশো
বছরের ওপর পুরোনো । তাই ফলন কম ।
সাড়ে এগারটা নাগাদ , বিনাপুর লাগোয়া বাগানের জমিতে বিএলআরওর
লোকজন এসেছে ।
শাসক দলের স্থানীয় এক নেতা কি সব বোঝাচ্ছে ওদের ।
একটা জায়গায় দোকান করার তোড়জোড় চলছে, গুয়াটেমালা গ্রাস
কেটে । অমল গিয়ে বলল :- একি ! আপনারা
বাগানের জমিতে দোকান করছেন কেন ?
নেতা মাড়ী বের করা হাসি হেসে বলল :- ওই যে আপনাদের বড়
সাহেব, আমাদের দুর্গা পুজোর চাঁদা হাজার টাকা দিয়েছেন ! তাই । চাঁদাটা বাড়াতে
বলুন, আমি চলে যাব । না হলে কিন্তু, ওয়ার্কাররা ঝামেলা বাধাবে ।
বিএলআরওর লোকেরা চুপ । অমল পর্চা দেখিয়ে বলল – এই দেখুন,
আমাদের এটা রেকর্ডেড জমি বাগানের । এটা ইলিগাল এনক্রোচমেন্ট ।
অবাক হয়ে দেখল অমল, তাও কথা সরছে না ওনাদের ।
হঠাৎ কোত্থেকে বুধিয়া সোরেন মাটি ফুঁড়ে দাঁড়াল, কিছু
ওয়ার্কার নিয়ে ।
তুরা টাকা লিয়ে কি করিস হামাদের জানা আছে । বেশী কথা বলবি
না । ই মাটি হামাদের খেতে দেয় । ঝামেলা
করবি তো হামরা একশো লোক লিয়ে তুর কেলাবে
ঝামেলা করব , বুঝলি ? ওই দিক যানা কেনে, দুকান করবি তো !
নেতা একটু পেছিয়ে গেলে , আপিসের বাবুরাও নড়ে চড়ে বসল ।
মিশ্রাজী কোথা থেকে খবর পেয়ে চলে এসেছেন ।
নেতাকে বললেন :- আপ অগর হাজার রুপেয়া লেঙ্গে তো ঠিক হ্যায় ।
আশপাশ অওর ভি পুজা হোতা হ্যায় । সব কো দেনা পড়তা হ্যায়, সমঝে নেতাজী ?
বুধিয়া ঘাড় নেড়ে বলল – ঠিক! নেতা বেগতিক বুঝে মোটোর সাইকেলে
ষ্টার্ট দিলেন।
বুধিয়া সোরেন থুতু ফেলে বলল – শালা !
একটু পরেই বড় সাহেব ফোন করলেন অমলকে :- গুড ইভনিং । ওয়েল
ডান । নাও প্লিজ কাম টু দা অফিস । আই হ্যাভ এ গুড নিউজ ফর ইউ ।
=====
আজই কনফার্মেশনের চিঠি পেল অমল ।
আজই কনফার্মেশনের চিঠি পেল অমল ।
তপতীর সাথে তার প্রেমটা অনেকদিনের । শান্তি নিকেতনের দু বছরের জুনিয়র তপতী
। কলেজেই পরিচয় ।
মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে তারই মত । বার্ণপুরে বাড়ী ওদের । ইদানীং আর ফোন করা হয়ে ওঠে না । তপতী মাঝে মাঝে
ফোন করে ঠোঁট ওল্টায় অভিমানে । দু পক্ষের অভিভাবকরা জানলেও , এখনই বিয়ে করার
সিদ্ধান্ত ছিল না দু জনেরই ।
মাকে ফোন করে কনর্ফামেশনের খবরটা জানিয়ে, তপতীকে ফোন করল ।
বাব্বা, সাহেবের ফুরসত হলো ! তপতীর ফিরতি জবাব ।
অত জানি না !
তুই আমার সারাজীবনে, শেড ট্রি হয়ে
থাকবি ? জবাব দে ।
কেন রে ? এত তাড়া কিসের, আর তা ছাড়া তোর ওই ধ্যাদ্দাড়া
ডুবপাড়া যাব না আমি। বয়েই গেছে আমার ।
আমি এখন নিজেই চা গাছ, এই খানেই প্ল্যান্টেড হয়ে গেছি ।
আসবি না, বৃক্ষছায়া হতে ?
খিল খিল করে হেসে তপতী বলল – যাঃ !