Friday, June 27, 2014

নাটকে উপেক্ষিত



রবীন্দ্রনাথ তাঁর “ কাব্য উপেক্ষিতা” বইতে লিখেছিলেন :-


“লক্ষ্মণ রামের জন্য সর্বপ্রকারে আত্মবিলোপ সাধন করিয়াছিলেন
, সে গৌরব ভারতবর্ষের গৃহে গৃহে আজও ঘোষিত হইতেছে, কিন্তু সীতার জন্য ঊর্মিলার আত্মবিলোপ কেবল সংসারে নহে, কাব্যেও। লক্ষ্মণ তাঁহার দেবতা যুগলের জন্য কেবল নিজেকে উৎসর্গ করিয়াছিলেন, ঊর্মিলা নিজের চেয়ে অধিক নিজের স্বামীকে দান করিয়াছিলেন। সে কথা কাব্যে লেখা হইল না। সীতার অশ্রুজলে ঊর্মিলা একেবারে মুছিয়া গেল।”

আমি যাঁর কথা বলবো- তিনি পুরুষ হলেও,নাটকের জন্য নিজে নিবেদিত প্রাণ ছিলেন।
 নিজের চেয়েও বেশী- নাটককে দান করেছিলেন অনেক কিছু ।
রিভলভিং ষ্টেজ বা ঘূর্ণায়মান মঞ্চ বাংলা পেশাদার নাটকে, সফল প্রয়োগ তাঁরই  অবদান । তিনি নাটকটা লিখেছিলেন----- এটার কথা মাথায় রেখে ।
নাটকে ফ্লাশ ব্যাক – তাঁরই আনা ।

 নাটককে চার অঙ্কে ভাগ করে সাজান------ অন্যতম কীর্তি ।
নাটকে সলিলকি বলার জন্য মাইকের ব্যবহার – ইনিই তো এনেছিলেন ।

সঙ্গীত শিল্পী হিসেবেও তিনি এক সময় নিয়মিত রেওয়াজ করেছিলেন । নজরুলের কাছেও তালিম নিয়েছিলেন গানের ।
তাঁর গান শোনার কথা বিভূতি ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখে গিয়েছেন- ডায়েরীতে ।
“ পুরুত” বাবা হরিচরণের ছেলে । মা- সত্যবতী । জিয়াগঞ্জে কায়ক্লেশে দিন গুজরান হতো ।
যজমানী বৃত্তি করলেও হরিচরণ ছিলেন- নাট্যানুরাগী । পূর্ব পুরুষ কনৌজের “ মিশ্র” পদবী ধারী ব্রাহ্মণ, পরে ভট্টাচার্য্য ।
পুরুতের ছেলে অভিনয় করে- এটা, হরিচরণের বাবা বঙ্কবিহারী মেনে নিতে পারেন নি ।

ফলে –অপরেশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় পেশাদারী অভিনয়ের জন্য জিয়াগঞ্জ  ( আগের নাম- বালুচর) থেকে কোলকাতায় আসার জন্য ডাক দিলেও, আসতে পারেন নি- পিতৃ আজ্ঞার জন্য ।
ছেলেবেলায়, বাবা হরিচরণের অভিনয় দেখেছিলেন--- রিজিয়া নাটকে । বক্তিয়ারের – ভূমিকায় অভিনয় করে সুনাম হরিচরণের ।
হরিচরণ এদিকে খুব সতর্কই থাকতেন , যাতে তাঁর বড় ছেলে- বগলা, অভিনয় জগতে না আসে ।
শৌখিন নাটকের দলে, হরিচরণের অজ্ঞাতেই অল্প বয়সে---- মহিলার রোলে অভিনয় করেছিলেন ।
ওই যে প্রবাদ আছে না-------- বিধির বিধান !
এই বিধানই “ সেতু” গড়ে দিয়েছিল অভিনয়, নাটক লেখা, চিত্রনাট্য লেখার জন্য পরবর্তী জীবনে ।
কিছুটা অসুস্থতা, কিছুটা পারিবারিক দারিদ্র্য- বগলাকে সেভাবে পড়াশোনা করতে দেয় নি ।
 বাড়ী থেকে পালিয়েই তিনি কোলকাতায় চলে আসেন ।
ওই যে ছোটবেলায় দস্যু মোহন পড়তাম না ? মনে আছে সেই বিখ্যাত ডায়ালগ- “কোথা হইতে কি হইয়া গেল,দস্যু মোহন বাঁচিয়া উঠিল” !
অনেকটা সেই ধাঁচেই শ্রীমান বগলার বিয়ে হলো মৃণালিনীর সঙ্গে- ১৯২৮ সালের ৫ ই জুন ।
মৃণালিনীর বড়দা আশুতোষ ভট্টাচার্য্যের আগ্রহে আর পড়ানোর ফলে- টালা হাইস্কুলে ভর্তি হয়ে এন্ট্রাস পরীক্ষায় পাশ করে মা সরস্বতীর অন্য সাধনায় লেগে পড়লেন ।

 প্রবীণ পাঠক নিশ্চয়ই আঁচ করতে পারছেন --- কে এই বগলা ?

যাঁরা নবীন--------- তাদের জন্য থাকুক সাসপেন্স ।

এই বর্ণাঢ্য চরিত্রকে না লিখলে ----- বাংলা নাটকের ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না ।
বগলাকে উপেক্ষিত করে রেখেছেন, যাঁরা-------- তাদের উপেক্ষা করেই ধরলাম কলম- থুক্কু কি বোর্ড  এই অক্ষম হাতে ।
কথায় আছে- পূজা করা, মন্ত্র না জানলেও ভক্তি ভরে দেবতার পায়ে ফুল রাখলেও সেই পূজা সিদ্ধ হয় ।

দেখা যাক, কি করা যায়-------- আমার কৈশোর বয়সের এই অমিয় , ভুবনের স্রষ্টাকে নিয়ে ।



বগলার হাতের লেখাটা বড় চমৎকার । এই হাতের লেখার সুবাদেই বন্ধু, যুগান্তর বাংলা দৈনিকের মালিক সুকোমল কান্তি ঘোষ চাকরী দিলেন ওই পত্রিকায় ।


একটা মুশকিল তৈরি হলো । সুকোমল বাবু যখন চেম্বারে ঢোকেন সহকর্মীদের সাথে মিটিং করতে- তখন সবাই উঠে দাঁড়ালেও বগলা আর ওঠে না ।

এটা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হলো সহকর্মী মহলে ।  বগলা নট নড়ন চরন নট কিচ্ছু ।

মনে করে- সুকোমল তো আমার বন্ধু, ওকে দেখে উঠে দাঁড়ানো আবার কি !

সুকোমলবাবু বেগতিক দেখে বগলাকে আড়ালে ডেকে বলেছিলেন- আমি যখন ঘরে ঢুকবো তখন বাইরে থেকে গলা খাঁকারি দেবো, তুই উঠে দাঁড়াবি ।

বগলা খেপচুরিয়াস হয়ে চাকরি ছেড়েই দিল ।

এবার আসরে নামলেন- তুষারকান্তি ঘোষ  ।

বললেন :- বগলা, তুই যে চাকরিটা ছাড়লি, তালে খাবি কি? এদিকে তো বিয়ে করে বসে আছিস !!


ভগবৎবিশ্বাসী বগলা নাকি বলেছিল – কপালে যা আছে, তাই হবে ।

তুষারবাবু হেসে ফেলে শিশিরকুমার ইনস্টিটিউটে ইস্যুয়িং অফিসারের চাকরী করিয়ে দিলেন ।


এই খান থেকেই জীবনের মোড় ঘুরলো বগলার । ইনস্টিটিউটে প্রচুর বই পড়ে সাহিত্য আর নাটক সম্বন্ধে আরও স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হলো ।



গল্প লিখতে শুরু করল বগলা । ভারতবর্ষ, প্রবাসী, গল্পলহরী পত্রিকায় ছাপা হতেই পাঠকরা অভিভূত  ।


বগলা প্রথম উপন্যাস লিখল------- শ্রী সমীরণ সেন । সেটা ১৯৩৭ য়ের ফেব্রুয়ারী বা বাঙলার ১৩৪৪ সালের মাঘ মাস ।


এর পরেই পরেই বগলা যোগ দিল পেশাদার মঞ্চে । প্রথমে নাট্যকার পরে অভিনেতা হিসেবেও যোগ দিল ।

নাটক লেখা শুরু করতেই, অনুরাগী ডঃ পশুপতি নাথ ভট্টাচার্য্য বগলাকে নিয়ে গেলেন-   রবি ঠাকুরের কাছে ।


আবদার করে বললেন :- এই ছেলেটি নাটক লিখছে, একটা নতুন নাম দিন না বগলাকে !!

রবীন্দ্রনাথ নাম করণ করলেন :- বিধায়ক


বগলা রঞ্জন ভট্টাচার্য্য হলেন – বিধায়ক ভট্টচার্য্য

তার পর ?



এবারে, ফিরে আসি এই পরিবারের সাথে আমার যোগাযোগ হলো- কি ভাবে, সেই প্রসঙ্গে ।

বিধায়ক ভট্টাচার্য্যের, ন ছেলে বিশোভন ( বুদ্ধ ) মালদায় এসেছিল ইণ্ডিয়ান ওভারসীজ ব্যাংকের অফিসার হিসেবে ।

তখন তো আর এটিএম ছিল না, তাই একদিন টাকার দরকার হওয়াতে ঢুকে গেলাম, রাজমহল রোডের ব্র্যাঞ্চে ।

উইথড্রয়াল স্লিপে, টাকার অংক লিখে-চলে গেলাম কাউন্টারে । প্রদীপ বাগচী বসে সেখানে । ( আমার বন্ধু তালিকায় আছে এখন)

বলল:- রামকৃষ্ণদা, আপনি পাশবই আনেন নি ?

না রে, রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম । হঠাৎ টাকার দরকার পড়ল তো, তাই চলে এলাম তোদের ব্যাংকে ।

প্রদীপ বলল :- এখন তো নিয়ম হয়েছে, পাশবই ছাড়া তো টাকা তোলা যাবে না, উইথড্রয়াল স্লিপে !

উপায় বল, তাড়াতাড়ি!  টাকার খুব দরকার আমার ।

তাহলে এক কাজ করুন ( আঙুল দিয়ে দেখিয়ে)- ঐ ভদ্রলোকের কাছে চলে যান, তিনি স্লিপে সাইন করলে টাকা দিয়ে দেবো ।

উনি তো আমায় চেনেন না, সাইন করবেন কেন ?

আরে যান না---- নাট্যকার বিধায়ক ভট্টাচার্য্যের নাম শুনেছেন ?

সে কি রে ! শুনবো না কেন ? তবে, তার সঙ্গে ঐ ভদ্রলোকের বা টাকা তোলার সম্পর্ক কি ?

ওনারই ছেলে বিশোভনদা । সাইন করে দেবেন,  মানুষ হিসেবে প্রচণ্ড ভদ্রলোক !

নতুন এলো বুঝি, মালদায় ?

হ্যাঁ

যদি না দেয়?

তালে আমার অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে আপনাকে দেবো ধার হিসেবে, কাল তুলে দিয়ে দেবেন, তবে দরকার হবে না ।

গেলাম অফিসারের কাছে । ব্র্যাঞ্চের ঠিক মধ্যেখানে টেবিলে বিরাজমান । ঝুঁকে পড়ে কি সব কাগজ পত্তর দেখছে ।

সামনের চেয়ারটা দেখিয়ে বললাম- বসবো ?

আরে হ্যাঁ হ্যাঁ বসুন ! একটু ওয়েট করুন, কয়েকটা সাইন করে আপনার সমস্যাটা শুনছি ।

কাজ শেষ করে, বুদ্ধ বললো- এবার বলুন, কি করতে পারি আপনার জন্য ?

দুরুদুরু বুকে, আমার স্লিপটা এগিয়ে দিলাম ।   পেছনে চৌধুরী বাবু বসে কাজ করছেন ।

হেসে বলল ----- হঠাৎ টাকার দরকার পড়েছে বুঝি ?

হ্যাঁ ।

কি চৌধুরী বাবু, চেনেন তো এনাকে ?

চৌধুরী বাবু  হেসে ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বললেন ।

খস খস করে সাইন করে বুদ্ধ হেসে বলল – এবার থেকে একটু যত্নবান হবেন । আমরাও তো চাকরি করি নাকি ?

তারপর থেকেই জমে গেল বন্ধুত্ব । একটা আলাদা আকর্ষণও ছিল – বিধায়ক ভট্টাচার্য্য ।

কৈশোরে , অমরেশ- অমিয়- ভুবনে আমার মত অনেকেরই মজে থাকত যে !

ব্যাংকে মাঝে মাঝেই ঢুকে পড়তাম আড্ডার জন্য ।  তারপর একদিন, একটা একাংক নাটক হলো-------- মিছিল, রচনা সুভাষ বসু ।

ব্যাংকের ষ্টাফেরাই করবে বুদ্ধর পরিচালনায় আর বাইরে থেকে কাষ্টমার বলতে আমি সহ আর একজন মাত্র  !

খুব হিট করেছিল একাংক নাটকটা ।

বিমোচনের ( বাসু) সঙ্গে পরিচয় অরকুটে “ বারোমাসে তের পার্বণ” নামে একটি কম্যুনিটিতে ।

বিশুদ্ধ  সিদ্ধান্ত পঞ্জিকার তারিখ নিয়ে - ঝগড়া দিয়ে শুরু । আমার একটা ভুল হয়েছিল- চোখে চশমা না থাকার জন্য ।

ওটা নিয়ে খুব গরমা- গরমি ! লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান অবস্থা  । বাসু তখনও রিটায়ার করে নি । 

শেষে আমারই ভুল দেখে কেটে পড়ি ।

মধুরেণ সমাপয়েৎ ওই কম্যুনিটির পিকনিকে । তখনই জানলাম- বুদ্ধ ওর দু বছরের বড় দাদা ।
=============
এখন মাঝে মাঝেই চলে যাই ওদের------ বেলগাছিয়ার মিল্ক কোলোনীর বাড়ীতে, আশু বাবুর বাজারে বাজার করার সময় ।

সকালের আর এক দফা চা হয়, আর চলে দু ভাইয়ের সঙ্গে তুমুল আড্ডা ।

ওদের সব ভাই বোন আর বিধায়ক ভট্টাচার্য্যের নাতি নাতনীদের নাম  ।
==============

পাঁচ ভাইয়ের নাম যথাক্রমে বিনায়ক, বীতশোক, বিমোহন, বিশোভন এবং বিমোচন । এদের তিন দিদির নাম বল্লরী, বেতসী এবং বনানী। বিনায়ক আর বেতসী অন্যলোকে চলে গেছেন। বনানী এই সময়ের বিখ্যাত শ্রুতি-নাট্যকার । পরের প্রজন্মের দুই ছেলে বিবস্বান এবং বিপর্ণক এবং তিন মেয়ে বনজা, বেনুকা এবং বল্লিকা।============= 

বিধায়ক ভট্টাচার্য্য যখন পেশাদার মঞ্চে এলেন, তখন রমরমা চলছে- পৌরাণিক, ঐতিহাসিক  নাটকের ।

মন্মথ রায় এবং শচীন সেনগুপ্ত এই সব নাট্যরচনার জন্য বহু প্রশংসিত এবং খ্যাতির অধিকারী তো বটেই ।

সেখানে, বিধায়ক বাবু কিন্তু প্রথম থেকেই তুমুল জনপ্রিয়তার অধিকারী হয়েছিলেন । সেই প্রতিযোগিতার মধ্যে জনপ্রিয়তা পাওয়া সহজ কথা নয় ।

এছাড়াও- সেই সময়ের দেশের, সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতি খুব একটা আশাপ্রদ পরিস্থিতিতে ছিল না ।

অহীন্দ্র চৌধুরী, সেই কালো সময়ের স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন :- 
“উনিশ শ চল্লিশ । একটা বিষণ্ণ বৎসর । পৃথিবী জুড়ে যুদ্ধের বিভীষিকা । ত্রাসের কালো ছায়া ভারতের আকাশে । 

একদিকে  পরাধীনতার কঠিন নিগড়, অন্যদিকে শিকল ভাঙার স্বপ্ন । এই দুর্যোগের মধ্যেও  বর্ষ বিদায়ের মুহূর্তে নববর্ষের উৎসবের সমারোহ” । 

এসবের পরিপ্রেক্ষিতে দরকার ছিল বলিষ্ঠ নাট্যকারের । বিধায়ক বাবু সেই স্থানটা পূরণ করতে পেরেছিলেন ।

এই কথা আজ কয়জন মনে রেখেছেন------- এটাই আমার বিনীত জিজ্ঞাসা !! 

উনিশ শ চল্লিশ সালের ২৪ শে ডিসেম্বর রত্নদীপ নাটকের উদ্বোধন হয়েছিল । রঙমহল মঞ্চে এরপর অভিনীত হল কুহকিনী ( ২২/০২/১৯৪১)

তারপর চিরন্তনী (১৮/০৭/১৯৪২) । এর পরে শ্রী বিশ্বনাথ ভাদুড়ীর প্রস্তাব অনুযায়ী বিপ্রদাস উপন্যাসকে নাটকাকারে তৈরি করলেন । 

শ্রী রঙ্গম মঞ্চে সেই নাটকের অভিনয় হয়--- ২৫ শে নভেম্বর ১৯৪৩ । 

শরীর খারাপ হওয়াটা তাঁর বোধহয় বিধিলিপি ছিল । তা সত্বেও সেই কাজ একটা বালিশে ওপর ভর করে শুয়ে ভীষণ তাড়াতাড়ি শেষ করতে হয় । 

শিশিরকুমার ভাদুড়ী এই নাটকের পরিচালনা বা অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না । 

শ্রী রঙ্গম মঞ্চে আরও একটা নাটক অভিনীত হয় – তাই তো । এই নাটকের সাথেও শিশিরকুমার কোনো ভাবেই জড়িত ছিলেন না । 

বিপ্রদাসের থেকেও কম সময়ে এই নাটক বিধায়ক ভট্টাচার্য্যকে লিখে দিতে হয় । 

“ তোমার পতাকা”  নাটকের প্রথম দুটো দৃশ্য শুনে শিশিরকুমার খুশী হয়েছিলেন, কিন্তু শরীর খারাপের জন্য ঠিক সময়ে শেষ করতে পারেন নি বলে-বাংলা মঞ্চ তাঁদের একসাথে পায় নি । 


একটু পেছিয়ে যাই তাঁরই কায়দায় ! সেই ফ্ল্যাস ব্যাক ! 

বিধায়ক যখন নতুন নাটক প্রথম লিখলেন- সেটি মঞ্চস্থ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাঁরই বন্ধু- সুকোমল কান্তি ঘোষ । 

কেউ কেউ যথারীতি আপত্তি তুললেন । কোথাকার কে এক – বগলা না বিধায়ক, সে নাটক লিখেছে আর সেটা মঞ্চস্থ হবে পেশাদারী ভাবে, বললেই হলো ? 

বিধায়ক তো আর দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, গিরিশচন্দ্র, অমৃতলাল বা ক্ষীরোদ প্রসাদ নয় ! সুকোমল বলে কি, ঞ্যাঁ? 

শেষ পর্যন্ত নাটকটি অভিনয় যোগ্য কিনা, সেই নিয়ে বিধায়ককে  রীতিমত ইন্টারভিউ দিয়ে নিজেকেই পাঠ করে শোনাতে হয়েছিল । 

নার্ভাস হয়ে, কাঁপা কাঁপা গলায় পড়ে শোনালে -----  সবাই চমৎকার বলে নাটকটা অভিনয় করার অনুমতি দিলেন । 

নাটকের নাম ? দেহযমুনা !!!

বিধায়ক নিজে এক মহিলা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন । রঙমহল থিয়েটারে এই নাটকটা বক্সে বসে দেখেছিলেন কে ? 

“সমস্ত বাংলার হৃদয় জয় করেছিলেন” যিনি--------- সেই প্রখ্যাত নাট্যকার  যোগেশচন্দ্র চৌধুরী । 

তিনি বলেছিলেন :- একটু কাট ছাঁট  করে নিলেই নাটকটা দাঁড়িয়ে যাবে । 

 রঙমহলে “বৃহস্পতিবারের নাটক” হিসেবে অভিনীত হল---- দেহযমুনা ,মেঘমুক্তি, নাম দিয়ে,  ১৩ ই জুলাই ১৯৩৮। 



বিড়ম্বনায় ভরা, বিধায়ক ভট্টচার্য্যের জীবন আরও একবার বিপদে পড়ল কালিকা থিয়েটার্স সিনেমা হলে রূপান্তরিত হওয়ার পর ।
মৌলিক নাটক “ খেলাঘর” মঞ্চস্থ হয়েছিল কালিকা থিয়েটার্সে – উনিশ শ ছেচল্লিশের নয়ই অগাষ্ট ।
এই নাটকেই তিনি প্রথম পেশাদার মঞ্চে অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন ।
এর আগে শরৎচন্দ্রের  “ মেজদিদি” র নাট্যরূপ দিয়েছিলেন কালিকায়- সাতেরোই ডিসেম্বর উনিশ শ পঁয়তাল্লিশে অভীনিত হয়
উনিশ শ একান্নতে , কালিকা থিয়েটার্স- সিনেমা হলে রূপান্তরিত হলো ।
সেই চুক্তির বিপদ তাঁকে আরও ছয় বছর ভোগ করতে হয়েছিল
কিন্তু, তিনি বিধায়ক । প্রকৃত ধ্যানী আর আত্মশক্তির জোরেই তিনি নিজেকে তৈরি করে আবার ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, নতুন যুদ্ধের জন্য ।
তাই চূড়ান্ত খ্যাতি পেলেন------বিশ্বরূপা থিয়েটার হলে, “ক্ষুধা” নাটকে ।
উনিশ শ সাতান্নর পয়লা এপ্রিল এই নাটক আরম্ভ হয়ে ৫৭৩ রজনী একটানা চলেছিল।
জনপ্রিয়তা এমন তুঙ্গে উঠেছিল------ এই বই ছাপা হলে, তিন বছরের মধ্যে তিনটি সংস্করণ হয়েছিল ।
কারণটা তিনি নিজেই লিখে গেছেন :-

“বাঙালি জাতি আজকের দিনে  এই নাটকের মধ্যে তাঁদের সত্যি কারের অসহায় জীবনযাত্রার ছবি দেখতে পেয়েছেন বলেই একে গ্রহণ করেছেন ।”

আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, বিধায়ক বাবু তাঁর জীবনসংগ্রামের সঙ্গে জনগণের সংগ্রাম মিশেল দিয়ে, এই নাটক লিখেছিলেন । নিজের অসহায় অবস্থার কথা এখানেও এসেছিল ।

তাঁর  আরেকটি স্মরণীয় সৃষ্টি ---------- সেতু, নাটক । আসল নাটকটি কিরণ মৈত্রের লেখা । তার বর্ধিত রূপ দিয়েছিলেন বিধায়ক ভট্টাচার্য্য ।
 ১০৮২ রজনী চলেছিল এবং এটি  এশিয়ান রেকর্ডপরে অবশ্য কাশী বিশ্বনাথ মঞ্চে “ এন্টনী কবিয়াল” এই রেকর্ড ভেঙে দেয় । দর্শকরা অভিভূত বিশ্বরূপায় “ লগ্ন” নাটক মঞ্চস্থ হলো- ৭ ই মে ১৯৬৪ ।

পরিচালক হিসেবে দেখা দিলেন – রাসবিহারী সরকার ।

চমৎকারিত্বে, অভিনবত্ব আনতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হলো – কাগজে থিয়েটারস্কোপ হিসেবে।

একটি ষ্টেজকে চারভাগে ভাগ করে, আলো জ্বালানো হচ্ছিল  যেখানে অভিনয় হচ্ছে, খালি সেই খানে ।
 কিছু লোকের চক্রান্ত ( এরা কারা, সে সম্বন্ধে পরিবারের লোকেরা বলতে চান নি) এবং লগ্ন নাটক সে ভাবে না চলাতে বিশ্বরূপা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিধায়ক ভট্টচার্য্যের সম্পর্কের অবনতি শুরু হলো ।
কোনো রকমে সেই সম্পর্ক টিঁকেছিল – রাধা ( তারশঙ্করের লেখা)  নাটক পর্যন্ত ।

১৯৬৬ সালের পয়লা এপ্রিল ।

বিধায়কবাবু পরিবার নিয়েই থাকতেন- বিশ্বরূপার ষ্টাফ কোয়াটার্সে ।  যাতায়াত সব ঐ আঙিনা দিয়েই , তবু পিওন বুক দিয়ে তাঁকে একটা চিঠি পাঠান হয়েছিল ।
সারমর্ম ছিল :- ইয়োর সার্ভিসেস আর নো লঙ্গার রিকোয়ার্ড ।
তিন মাসের নোটিসও ছিল বাড়ী ছাড়ার জন্য ।
প্রথমে এটা এপ্রিল ফুল বলেই ভেবেছিলেন ।

সেই পরিস্থিতি জানাতে গিয়ে লিখেছিলেন :-

“নৈরাশ্যের আবছা অন্ধকারে বিলীন হবার উপক্রম হলো । মনে হল, পথ বেয়ে উঠতে উঠতে একটা সুউচ্চ পর্বত শিখর চূড়ায় দাঁড়ালাম ।

যার পরে আর পথ নেই । অথচ পেছন থেকে প্রচণ্ড হাওয়া আমাকে ঠেলছে, উৎসাহিত করছে নীচের  অতলস্পর্শিতায় ঝাঁপিয়ে পড়তে এবং যার অর্থ বিলুপ্তি ।”

ছেলে মেয়েরা     তাঁর সদাহাস্য মুখ দেখে, তখন কিছু টের পায় নি একদম ।

সেই ভাগ্যের বিড়ম্বনা । আসছি সেই কথায় ।

বিধায়ক বাবু, নিজে পেশাদার মঞ্চের অত্যন্ত ব্যস্ত ও শীর্ষ স্থানীয় নাট্যকার হওয়া সত্ত্বেও , তাঁর প্রতিটি সফল নাটক শৌখিনরা সহজ আয়োজনে অল্প খরচে যাতে অভিনয় করতে পারেন, তার নির্দেশ দিয়ে গেছেন ।

দুঃখের কথা, তাঁর বহু নাটক এখনও বিভিন্ন দল- ভারতের বাঙালিরা অভিনয় করলেও একবার অন্তত তাঁর পরিবারের কাছে অনুমতি নেওয়ারও প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না । এটুকু ভদ্রতা, আশা করাই যেতে পারে, তাই  না ?

অনেকে নাটক অভিনয় করলেও, নাট্যকারের নাম জানেন না । “ তাহার নামটি রঞ্জনা” এক জ্বলন্ত উদাহরণ !!!
পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে জনপ্রিয় একাঙ্ক নাটক তাহার নামটি রঞ্জনা। সারা পৃথিবীতে, যেখানেই বাঙ্গালী আছেন এই নাটক অভিনয় করেছেন ।

তিনি বলতেন এরা সবাই যদি দশটা করে টাকাও দিত সন্মান-দক্ষিণা হিসাবে তাহলে মনে হয় আমার বা  পরিবারের অর্থ কষ্ট হত না কোনদিন ।

 দুই বাংলায়, জেলায় জেলায় এই নাটক অভিনীত হয়েছে, কলকাতায় রীতিমত কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে, টিকিট বিক্রি করে একটি দল এই নাটক অভিনয় করেছেন দিনের পর দিন কিন্তু নাট্যকারের প্রাপ্য, 'নৈব নৈব চ'

তবে এটা শুধু বিধায়ক ভট্টাচার্য্যের ক্ষেত্রে নয় কোন নাট্যকারকেই সন্মান-দক্ষিণা দেবার কথা ভাবতেই পারেন না আজকের মানুষ ।


 



একে অজ্ঞতা না উপেক্ষা বলবো ?

পরে আসবো এই সব কথায় ।

গত শতকের চল্লিশের দশকে পেশাদার রঙ্গমঞ্চে সামাজিক নাটক রচনা ও প্রযোজনার যে নতুন প্রবাহ দেখা দিয়েছিল, বিধায়ক বাবুই ছিলেন তার সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং কৃতি রূপকার ।

দর্শককে অন্ধকারে রেখে, বিন্দু বিন্দু বিন্যাস দিয়ে পদ্মের পাপড়ী খোলার যে টেকনিক তাঁর আগের বা সমসাময়িক নাট্যকাররা নিয়েছিলেন, সেই গল্প বলার মৃদু ও মধুর পদ্ধতি যে অচল হয়েছে--- সেটা বিধায়ক বাবু ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলেন ।
তিনি জানতেন :- “মঞ্চনাটক লিখতে গিয়ে নাট্যকারের  প্রথম  বাধ্যতা বা আনুগত্য থাকা উচিত দর্শকের কাছে ।”
আরও বলেছিলেন :- দর্শক এক চোখে ভালো আর আর এক চোখে  মন্দ ধরতে পারে। এই দর্শক একই পাত্রে অমৃত ও গরল পান করতে প্রস্তুত । এ এক বিচিত্র দর্শকের যুগ এসেছে  আমাদের থিয়েটারে ।”
আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, বর্তমান যুগে তাঁর কথা ধার করে বলা যেতেই পারে:-
গল্প বা উপন্যাস লিখতে গিয়ে লেখকের প্রথম  বাধ্যতা বা আনুগত্য থাকা উচিত পাঠকের কাছে ।

আজকের দিনে অধিকাংশ বাণিজ্যিক পত্রিকা পাঠক পাচ্ছে না তার কারণ এই অকারণ পোষ্ট মর্ডানিজম । ( পুরোপুরি ব্যক্তিগত মত, ভুল হলে মাফ করবেন )

বিধায়ক বাবু নিছক গতানু গতিকতার ভেতর টিঁকে থাকার জন্য বা জীবিকার স্থায়িত্ব রক্ষার প্রয়োজনে , নিজেকে নাট্যজগতের সঙ্গে জড়িয়ে রাখেন নি ।
দর্শক রুচির সাথে বৈচিত্র্য মেনে নিয়েই  তিনি নাট্যরচনার  পরীক্ষা করে গেছেন অত্যন্ত গভীর এবং অন্তরঙ্গ বিবেচনায় ।
কালিকা এবং বিশ্বরূপা পর্বে দীর্ঘ কুড়ি বাইশ বছর  তাঁর যে বিড়ম্বিত অধ্যায়---- তিনি তাতে প্রশংসা পেয়েছেন প্রচুর ।
মধু সংলাপী বিশেষণে  তাঁর পরিচিতি-----জনপ্রিয়তার  চূড়ো ছুঁয়েছিল ।
ভাট পাড়া কেন এই মধু সংলাপী বিশেষণ দিয়েছিল, সেটা আমরা বরং জেনে নেই কুমার রায়ের লেখায় :-
“আমাদের এক প্রিয় মানুষ ছিলেন নাট্যকার বিধায়ক ভট্টাচার্য্যতাঁর জন্ম শতবর্ষের সূচনা কালে আমরা তার স্মৃতির প্রতি     শ্রদ্ধা জানাই
 মধু সংলাপী নাট্যকারের কিছু সংলাপ উদ্ধৃত করি  আর তো এ সব হবেনা যুগ যে পালটে পালটে যায় তাঁর আমলেও তাঁর আবার যুগ পালটেছে তিনি সেই পরিবর্তনের আঁচের মধ্যেই নাটক লিখলেন


'......স্টুস্পিড তুমি ষ্টুপিড আমি তোমাকে চ্যালেঞ্জ করছি--- তুমি আমাকে কাঁদাও আমি কাঁদবোনা  আমি কাঁদবোনা ( হু হু কাঁদিয়া উঠিল)কিছুতেই আমি কাঁদবোনা '
                                                                   -সত্যপ্রসন্ন, মাটির ঘর ভগবানের উদ্দেশ্যে
===================

'চেয়ে দেখো, বাইরে ওই চাঁদের আলো সমস্ত পৃথিবী নিঃশব্দে ওই আলোতে স্নান করছেআমাদের ও ঘরের জানলা দিয়ে নেমে এসেছে সেই আকাশের আশীর্বাদ'
                                                            প্রদীপ, বিশ বছর আগে
=============

'ঝিনুকের বুকের মধ্যে স্বাতী নক্ষত্রের জল যে লগ্নে পড়লে মুক্তার জন্ম হয়-ঠিক তেমনি করেই নারীর দৃষ্টি পড়লে পুরুষের বুকের মধ্যে প্রেমের জন্ম হয়'
                                                       -বিভাসের চিঠির অংশ, - দ্বিধা
===================

' ওই চেয়ে দেখ সন্ধে হয়ে আসছে, বট গাছের মাথায় একটু পরেই চাঁদ উঠবে , সেই আলোতে এই জনহীন  মাঠঘাট বাঁধ স্বপ্নময় হয়ে যাবে চল বিজন, আমার সঙ্গে, আমরা ওই চাঁদের আলো গায়ে মেখে ওই মাঠের মাঝখান দিয়ে দীঘির পাশ দিয়ে দুর থেকে দুরে চলে যাই
                                                      মালা---- মালা রায় নাটকে

============
 তাকে মধু-সংলাপী উপাধি দিয়েছিলেন- ভাট পাড়া

হয়তো আজকের নাটকে , আধুনিক এই কালে, কোন নাট্যকার এই ধরনের সংলাপ লেখেন না

কিন্তু এখনো পড়তে খারাপ লাগেনাএকটা জিনিস লক্ষ্য করার মত যে  গদ্য সংলাপে-ছোট ছোট বাক্য গঠনের দিকেই নজর দেওয়া হয়েছে

অলঙ্কার বাহুল্য নেই তাঁর ভাষা সরল এবং সেই সঙ্গে মাধুর্য গুণে ভরাসে সময় তাকে মধু-সংলাপী বলা হয়েছিল- সেই সূচনা পর্বের কিছু নাটক থেকে সংলাপ উদ্ধার করলামএইটুকু বোঝাতে যে সে সময়ের দর্শক -সমালোচকরাই সুবিবেচনার পরিচয় দিয়েছিলেন তাঁকে এই বিশেষণে বিভূষিত করে

==========



বিশ্বরূপার অধ্যায় শেষ হলো ।  চোখে অন্ধকার দেখছেন, জীবন ও জীবিকার তাড়নায় ।

ঠিক সময়েই আবির্ভাব –  কৌতুক সম্রাট জহর রায়ের । ভাগ্য বিলুপ্ত হতে হতেও হলো না । খুলে দিলেন এক অন্যতম সার্থকতার পথ ।
শ্রী শ্রী মায়ের প্রতি তাঁর গভীর বিশ্বাস, তাঁকে যে বারবার খাদের কিনারা থেকে তুলে ধরেছিল- এটা তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মেনে গেছেন ।
একটা নাটক লিখে রেখেছিলেন- নিজের শখের দল, “ একত্রিকা”র জন্য ।
 সেই নাটক, জহর রায়ের প্রচণ্ড আগ্রহে রঙমহলে মঞ্চস্থ হলো------ “অতএব” নামে । তারিখ:- ছয়ই অক্টোবর, উনিশ শ ছেষট্টি ।
দিন দশেকের  পরেই – কেতকী দত্তের দলের জন্য লিখে দেওয়া নাটক “ এন্টনী কবিয়াল” মঞ্চস্থ হলো, কাশী বিশ্বনাথ মঞ্চে ।
মাত্র আটদিনে লেখা এই নাটক, তাও অসুস্থ অবস্থায় ( এটা তাঁর সারাজীবনের সংগ্রামের সাথী হয়ে থেকেছিল ) খালপাড়ের কুখ্যাত, অপরিচিত মঞ্চে কেউ দেখতে আসবে কিনা----- ঘোরতর সন্দেহ ছিল সবার ।
আগের নাটক গুলোর অভিজ্ঞতা বলছে- কুড়ি টাকার টিকিট বিক্রী হতো মাত্র গোটা পনেরো ।
হল পুরো খালিই থাকতো  । তাই এই নাটক কেউ দেখতে আসবে কিনা সন্দেহ ছিল ।

এন্টনী কবিয়াল নাটকের আকর্ষণ ছিল মাত্র তিনটে:-

বিধায়ক ভট্টাচার্য্যের লেখা ( মামা বাবুর রোলও করেছিলেন )
অনিল বাগচীর সুর
এবং জহর গাঙ্গুলী ( ভোলা ময়রা )

সবিতাব্রত দত্ত – এন্টনী । তখনও সবিতাব্রত সেরকম ষ্টার অ্যাট্রাকশান ছিলেন না ।
কিন্তু, ইতিহাস তখন অন্যরকম ভাবে লেখা হচ্ছিল । দেখতে দেখতে জমে গেল সেই নাটক ।
তাঁর নিজেরই লেখা নাটকের অভিনয় সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল এই এন্টনী কবিয়াল । “সেতু” নাটকের  ১০৮২ রজনী অভিনয় সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল এবং এটাও এশিয়ার রেকর্ড ।


পেশাদার নাটকে সসন্মানে  একটা আসন নিয়ে নিলো কাশী বিশ্বনাথ মঞ্চ ।

ঠিক এই সময়ে , যাত্রাজগতের সুপার হিরো “ স্বপনকুমারের” অনুরোধে লিখলেন – মাইকেল মধুসূদন ।
নব রঞ্জন অপরেরার সেই পালা শুধু নাম ভূমিকার অভিনেতাকে  শ্রেষ্ঠতর সন্মানের শিখরে পৌঁছে দিল না-------যাত্রার ইতিহাসে  একটা নতুন যুগ সৃষ্টি করার  অন্যতম দিগদর্শক হয়ে উঠলো ।
 পরবর্তী ছয় বছর অনেক সাফল্য এনে দিলো তাঁর নাট্য জীবনে ।



ইতিহাসের মতই শিল্পও থেমে থাকে না । ইউরোপে দেখছি- বিভিন্ন নাটকে এবং মঞ্চে  নানা রকমের মতবাদ এবং রীতি পদ্ধতির আনাগোনা ।
কোলকাতার পেশাদার মঞ্চে এই সব করার সাহস খুব একটা ছিল না—তার কারণ, যে পয়সা ঢালা হচ্ছে, সেই পয়সাটা তুলতে হবে । এটাই স্বাভাবিক !!

পেশাদার মঞ্চের স্বার্থে কতজনই বা গিরিশ ঘোষ বা বিনোদিনীর মত আত্মত্যাগ করেছেন ?

এ ছাড়াও ছিল- কিছু বড়লোকদের খেয়াল । এই মঞ্চ কিনছেন তো এই ছেড়ে চলে যাচ্ছেন ।

যে সতু সেন, বাংলার মঞ্চে প্রথম ঘূর্ণায়মান ষ্টেজ নিয়ে এসেছিলেন, সেটা নানা অসুবিধের কারণে বেশী ব্যবহার করা হয় নি ।

এবারে যে সমস্ত বৈজ্ঞানিক উপায় ও পদ্ধতির  সাহায্যে মঞ্চ বাস্তবতার দিকে এগিয়ে চলেছিল, সিনেমা আসার সাথে- তার এগিয়ে চলার রীতি হল বন্ধ ।

একই সঙ্গে—ঘরের ঘটনা, রাস্তার রকমারী, আপিসের বাস্তবতা বিশ্বাস যোগ্য ভাবে কেন্দ্রীভূত করতে পারল না ।
তখনি দরকার হলো- সর্বৈব নাট্যধর্মী প্রথার


নতুন আঙ্গিক দিতে হবে ।  না হলে দর্শক মঞ্চমুখো হবে না ।

বিধায়ক বাবু  সেই আঙ্গিক  পেশাদার মঞ্চেও ব্যবহার করলেন । (ওনার ব্যক্তিগত জীবনের কিছু মজার ঘটনা পরে লিখবো, পরিবারের অনুমতি নিয়েছি ) ।

“ খেলাঘর” নাটক রচনা করলেন সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে ।

পর্দা উঠলো । স্বয়ং নাট্যকার কাঁচুমাঁচু মুখে হাজির হলেন দর্শকদের সামনে ।

অপরাধীর মত জানালেন :- নাটক লেখা হয় নি ।

দর্শকদের মধ্যে আরম্ভ হলো চিল চিৎকার । তরজা, খেউর শোনার গল্প বা অভিজ্ঞতা দর্শকদের রক্তে ।
আরম্ভ হলো খিস্তি খেউর ।
 কিছু ক্ষণ চুপ থেকে নাট্যকার হাত জোড় করে দর্শকদের বললেন :-
সব পণ্ড করবেন না । আসুন, আমরা এখনি “খেলাঘর” নাটকটি রচনা করিনাট্যাভিনয় তো বাস্তব নয়- খেলা  !
নাট্যকার তখন সব অভিনেতা, অভিনেত্রীদের একে একে ডাকলেন ।
 ধীরাআজ- তুমি মনে কর , একটা খবরের কাগজের সাব এডিটর, রাত্রি জেগে কাজ কর । একটু আধটু নাটকটাও লেখ । এর পরেরটা তুমি তৈরি কর
তোমার নায়কের নাম ধরো--- উমমমমমম্ ( চিন্তার ভান করে ) গোকুল ।

==
এই যে শোনো- তুমি রমা । বুঝলে ?  তুমি যাও- ওই ধীরাজের বৌ হওগে যাও । শান্ত মেয়ে,  ভালবাসতে জানো, কাঁদতে জানো – কিন্তু প্রতিবাদ করতে জানো না ।
===
নরেশ দা, তুমি মনে কর, একজন সমাজ কর্মী – যে বস্তিতে ধীরাজ থাকে । সেখানকার লোকের সুখ দুঃখের খবর তুমি রাখো ।
=======
এই ভাবে নাট্যকার বিধায়ক বাবু, প্রত্যেকটি চরিত্রের পরিচয় জানিয়ে তাদের রোল গুলো সব দর্শকদের বুঝিয়ে দিয়ে বললেন :- 

এবার আমি যাই । ওরা গল্প তৈরি করুক । আমি উইংসের পাশে  দাঁড়িয়ে দেখি গে । যদি ওরা গল্প নষ্ট করে, তবেই আমি ঠিক করে দিয়ে যাবো, নইলে নয় ।
 এরপর নাটকে যেখানে যেখানে “ গোলমাল” ঘটেছিল- সেখানে  বিধায়ক বাবু নিজে এসে “ঠিক” করে দিতেন ।
এই কনসেপ্ট বিধায়ক বাবু চালু করলেন , আর দর্শক হৈ হৈ করে আসতো, চেনা ঘটনা আবার দেখতে ।
===






ঋণ :-  মধু সংলাপী নাট্যকার বিধায়ক ভট্টাচার্য্য
লিখেছেন কুমার রায় 'বহুরূপী' পত্রিকার ১০৬ নম্বর সংখ্যায়, ২০০৬ সালে
====
সন্ধিৎসা 
সাহিত্য- সংস্কৃতির ত্রৈমাসিক পত্রিকা- ২৪ শে নভেম্বর ২০০৬  ও পারিবারিক সূত্র ।

=======
বন্ধুবর ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত এবং তাঁর সহোদরা পলা গুপ্তর – পিসীমা, গীতা সেনগুপ্তের বই :- বিশ্বরঙ্গালয় ও নাটক

















Monday, June 9, 2014

যুদ্দু

বলি, ও মাসী

কি লা ?

ওই বেজিল বলে একটা জায়গা আচে না ?

আচে তো, হুই বিলেইতে

তা হ্যাঁ গা মাসী, ওকানে নিকি যুদ্দু নাগবে?

কি করে জানলি গা ?

ওই বাবুদের বাড়ীতে টিভিতে দেকাচ্চিল ।

তুই দেকলি নাকি ?

দেকেচি গা,  তবে ওই ইঞ্জিরি নেকা গুনো পড়তে পারলুম নি !!আমি কি আর পরা নেকা জানি?

থালে ?

ওই বাবুদের বাচ্চারা খুব নাপাচ্চিল যুদ্দু যুদ্দু বলে

তা, কি নিয়ে যুদ্দু, সেটা পোশনো কল্লি না ?

করেচি তো !

কিচু বল্লে ?

ওই একটা পায়ের বল , কে পাবে সেটা নিয়ে যুদ্দু

অ, তা যুদ্দু যদি একটা বল নিয়ে, থালে সক্কলকে একটা করে দিলেই তে মিট্টে যায়

সেটাই তো বলেছিনু

থা , কি বল্লে ওরা ?

 ওরা তো হেসেই গড়াগড়ি !!!

মরণ ! হুঃ

Sunday, June 8, 2014

বেচু বাবু-২

বেচু বাবুদের কয়েকটা কমন টার্ম আছে । শুধু ওষুধের বেচু নয়, এটা বিভিন্ন পণ্য বিক্রয় প্রতিনিধিরাও ব্যবহার করেন ।

আগে, সে গুলো নিয়ে বলা যাক :-

হেডকোয়ার্টার :- যে জায়গাকে বেস করে একজন বেচু কাজ করবে ।

এরিয়া :- হেডকোয়ার্টার থেকে কোন কোন জায়গায় যাবে, সেই বেচু ।

এক্স ষ্টেশন :- হেডকোয়ার্টার থেকে কোনো জায়গায় গিয়ে কাজ করে আবার ফিরে আসা ।

আউট ষ্টেশন :-হেডকোয়ার্টার থেকে কোনো জায়গায় গিয়ে সেখানে কয়েকটা দিন কাটিয়ে কাজ করা ।
অ্যালাউন্স :- ছুটির দিন এবং রবিবার বাদে, সব জায়গায় কাজ করার জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা থাকে

ট্র্যাভেলিং অ্যালাউন্স :- কোনো জায়গায় যাওয়ার জন্য যাতায়াত ভাড়া দেওয়া হয় ।
আগে, ট্রেনে গেলে ফার্ষ্ট ক্লাসের ভাড়া দেওয়া হত । এখন , ক্ষেত্র বিশেষে এসি, থ্রিটায়ার অথবা কিলোমিটার পিছু  একটা নির্দ্দিষ্ট টাকা ধার্য করা থাকে । অবশ্য অনেক কোম্পানি ফার্ষ্ট ক্লাস দিতো না ।

এছাড়াও পোষ্টাল চার্জ ( এখন ইনটারনেট চার্জও দেওয়া হয় , শুনেছি ), খাম, পেন, এরকম অনেক জিনিস কেনার জন্য টাকা দেওয়া হতো বা হয়, কেনার রসিদ জমা দিলে ।
প্রত্যেক পনেরো বা এক মাস অন্তর টিএ বিল জমা দিতে হতো/ হয় একটা ফর্ম ভরে । সেই টাকা চলে আসে সাধারণত মাইনের সাথে আলাদা ভাবে ব্যাঙ্ক ড্রাফ্ট , মানি ট্রান্সফার এবং এখন সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ।

একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক ডাক্তার/ কেমিষ্ট বা এফএমসিজি ( ফাষ্ট মুভিং কনজিউমার গুডস্) বেচুদের দেখতেই হবে প্রতিদিন ।
দেখে এসে একটা ফর্মে সেই নাম গুলো ভরে রিপোর্ট লিখতে হবে, হয় ফর্মে বা এখন ইন্টারনেটের প্রোফোর্মাতে ।

অনেক কোম্পানিতে খালি ফর্মে ভরে লিখিত ভাবেই পাঠান বেচুরা, একটা সহমত পোষণ করে ইউনিয়ন ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ।

ওষুধ বেচুদের প্রতি বছর একটা করে নতুন লিষ্ট বানাতে হয় ডাক্তার বাবু এবং সেই এরিয়ার কেমিষ্টদের এবং অন্যদের ক্ষেত্রে :- দোকান বা কাষ্টমারের  ।
সেই লিষ্ট ধরে কাজ করতে হয় সারা আর্থিক বছর । প্রযোজনে চিঠি দিয়ে অদল বদল করা যায় কোম্পানিকে জানিয়ে ।
মোটামুটি ভাবে আপনাদের একটা ধারণা দিলাম ।

পরে যাবো, বিভিন্ন ঘটনায় । কোনোটা হাসির, কোনোটা বা দুঃখের বা অধিকারের লড়াই এবং বঞ্চনা আর কাজের ফাঁকির ( যে কাজে আমি অত্যন্ত দড় ছিলাম )।

এই কাজের ফাঁকির একটা পোষাকী নাম আছে – গুবলু ।

=========================


 এই বেচু বাবুদের ছিল, দুটো শ্রেণী বিভাজন । একদল- ওষুধ বেচতো  আর এক দল কনজিউমার প্রোডাক্ট বা আজকাল যেটাকে বলে ফাষ্ট মুভিং কনজিউমার গুডস ( এফ এম সি জি ) ।

দুটো আলাদা রেষ্ট হাউস এই বেচু বাবুদের । একে অপরকে  টেক্কা দেওয়ার প্রবণতা মারাত্মক ভাবে বিদ্যমান।
এরা ভাবে পেশাগত ভাবে আমরা বড়, আর ওরা ভাবে ঠিক উল্টোটা । তবে, একটা জিনিস এদের মধ্যে ছিল, সেটা হলো নিজেদের কোনো ওষুধ দরকার হলে ওরা ওষুধ কোম্পানীর  রিপ্রেজেনটেটিভদের কাছে আসতো আর এরা নিজেদের প্রয়োজন মত কোনো জিনিস কিনতে হলে ওদের শরণাপন্ন হতো ।


ওষুধ তো ফ্রি মিলতোই, আর তেমন হলে কনজিউমার প্রোডাক্টের স্যাম্পেল জুটে যেত মুফতে বা ৫০ % ডিসকাউন্টে ।
এই আদান প্রদানের মধ্যেই গড়ে উঠলো এক হওয়ার প্রবণতা । ভারত বর্ষের সব জায়গাতেই এটা ঘটছিল একসাথে ।



বস পেটাইএকটা আলাদা মাত্রা এনে দিল এই দুদলের মধ্যে । ইতিমধ্যে, কিছু সচেতন ছেলে যোগ দিয়েছে এই বৃত্তিতে । রেষ্ট হাউস এবং ইউনিয়ন এক হলো ।

আমি যেভাবে অল্প কথায় সারলাম ঘটনাটা, সেটা কিন্তু সেভাবে ঘটে নি । নানা স্বার্থ, টিক্রমবাজী পেরিয়ে এক হয়েছিল এই দুই দল । অনেক সময় লেগেছিল এক হতে । 

এক তো হলো, গোলোযোগ বাধলো পশ্চিম বঙ্গের বাইরে যেতেই ! মিলিত হবার এবং কোম্পানীর স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে যখন সরব হওয়ার আহ্বান নিয়ে ছড়িয়ে পড়া হলো ভারতের বিভিন্ন প্রধান শহরে এবং প্রায় প্রত্যেকের দুয়ারে, তখন বিরোধিতা এলো পরিবারের পক্ষ থেকে ।

তাঁরা বলতে লাগলেন, কোম্পানী আমাদের ভাতদেয় , সেই কোম্পানীর বিরুদ্ধে বেইমানী করা বঙালি বাবুদের সাজে । এটা আমাদের সাজে না ।

না, আমি কোন প্রাদেশিকতার কথা বলছি না, এই ঘটনার শুরু পশ্চিমবঙ্গ থেকেই । নিজের ঘরের ছেলেটা ডাক্তার হতে পারে নি, হতে পারে নি ইঞ্জিনিয়ার !! তাও তো গলায় টাইঝুলিয়ে সরকারী চাকুরেদের থেকে বেশী পয়সা আনছে  ! তখন খুঁচিয়ে ঘা করা কেন বাপু ?
ছেলেও বহিরঙ্গের কথা পরিবারকে জানায়  , কিন্তু বলতে পারে না, তাকে রোজ ১০ বোতল রক্ত ঝরাতে হয়, নিজের চাকরীটা রাখতে ।

রাতে শুতে যাবার সময়, একান্তে ভাবে :- যাক! আজকের দিনের মত আমার চাকরীটা থাকলো ।

অন্য অঙ্গ রাজ্যে আবার ভিন্ন সমস্যা । যে সব ঘর থেকে এই বেচু বাবুরা আসতো তখনকার দিনে, তাদের পরিবারে কোনো না কোনো ব্যাবসা/ধান্ধা আছে । সেখানে আবার চাকরি না করলে বিয়ের বাজারে দর ওঠে না বা সমাজে কল্কে পাওয়া বড় কঠিন ।
টাই ঝুলিয়ে ছেলে যখন বাড়ীর গাড়ী নিয়ে হুস করে বেরিয়ে যেত অন্য লোকেদের ঈর্ষাকাতর চোখকে উপেক্ষা করে, তখন পরিবার পরিজনের বুক গর্বে ভরে উঠতো ।

এরা করবে, কুলি কামিনদের মত ইউনিয়ন ????? ছ্যা ছ্যা !   ইজ্জত কা সওয়াল  !

চাকরী গেলেও এদের দুঃখ ছিল না, কারণ ততদিনে বিয়ে হয়ে গিয়ে দো/তিন পেটি ডাউরি মিল গয়া । চলো বরখুরদার, কোই বাত নেহি ! ইস পয়সে মেঁ দুসরা কোই ধান্দা ঢুঁঢ লে ।

আর না গেলেও বসেরপা ধরে মালিস করাটা অবশ্য কর্তব্য । আরও আছে, কিন্তু সে সব ন্যাক্কার জনক কথায় আর গেলাম না ।
এর ওপরে ছিল চুকলি বাজী ।  ধরুন আপনি কোনো একটা  চিঠি দিলেন কোনো সহকর্মীকে, তারই বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া একটা মিথ্যে কথার স্বপক্ষে লড়ার জন্য ।

অম্লান বদনে সেই চিঠি তুলে দিত সেই সহকর্মী, কর্তৃপক্ষের হাতে নিজের পিঠ বাঁচতে।

বলির পাঁঠা তখন আর সে থাকতো না । এসব ভাবতেও গায়ে এখনও কাঁটা দেয় ।

এসব ঘটনা ঘটেছে খোদ আমাদের এই পশ্চিমবঙ্গে ।  এই ভাবে ভাঙতে জুড়তে যখন একটা ঐক্যের চেহারা এলো, তখনই ঢুকলো সূক্ষ্ম ভাবে রাজনীতি ।

ততদিনে  পশ্চিম বঙ্গে ক্ষমতায় বামফ্রন্ট ।  এই বেচু বাবুদের ফন্টে ঢুকতে হবে, যে করেই হোক , এটাই ছিল ধ্যান জ্ঞান ।
শিক্ষিত সব ছেলেদের একসাথে পাওয়াটা তো  লটারি পাওয়া ! যারা এই বৃত্তির প্রাথমিক নিয়ম কানুনটুকুও জানেন না, তাঁরাই হয়ে দাঁড়ালেন ইউনিয়নের হর্তা কর্তা ।

নাম করছি না, তবে  এর আগেই এক বিখ্যাত বড় কোম্পানীর   প্রতিনিধিকে বিনা কারণে বিহার থেকে বদলী করা হয়েছিল ওডিশায় । পরে, আন্দোলনের চাপে সেই কোম্পানি পিছু হটে

পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর , তাকে সামনে রেখে, বামফ্রন্ট     ঝাঁপিয়ে পড়লো এই বেচু বাবুদের জায়গায় । আমরাও বোকার মত শ্রমিকের স্বার্থআদায়ের জন্য  লড়ে যেতে লাগলাম ।

আমরা কেউ বুঝলাম না, কেন একটা লোক যে খুব সামান্য টাকা পায়, তাকে জোর করে আনা হবে মিটিং মিছিলে অন্য বড় কোম্পানির টাকা বাড়ানোর আন্দোলনে ????

যাঁরা বুঝেছিলেন, তাঁরা ভেতরে অনেক লড়েও যখন সুরাহা করতে পারলেন না, তখন আর একটা ইউনিয়ন করে ফেলেছিলেন এর আগেই, বিনা রাজনৈতিক রঙে, কিন্তু এখানেও নেতৃত্বের লোভে  অযোগ্য চুকলি খোর লোকেরা এসে গেল ।

কয়েকজন   বাদে নেতৃত্বের অনেকেই পাল্টে গেলেন । মুখে বিভিন্ন শ্রমিক দরদী কথা, আর ভেতরে কোম্পানির হয়ে দালালি ।

দুটো ইউনিয়নেই একই ব্যাপার ! ছাপ আলাদা । বেচু বাবুদের কথা ভুলে এরা হয়ে দাঁড়াল পরস্পরের ঘোর শত্রু ।


লিখতে লিখতে সময়ের হের ফের হয়ে যাচ্ছে ঘটনার, কিন্তু মোটামুটি ঘটনাটা এই ।