Tuesday, February 11, 2014

বাই ও নিকী বাই



সেকালের কোলকাতায়, “বাবু”দের লক্ষণ ছিল- নয়টা


“মনিয়া বুলবুল আখড়াই গান
খোষ পোষাকী যশমী দান
আড়িঘুড়ি কানন ভোজন
এই নবধা বাবুর লক্ষণ”

এই বাবুয়ানীতে বাইজীর নাচগান ছিল অপরিহার্য ।

পুরোহিতের মন্ত্র নয়- মৃণ্ময়ী রূপ প্রাণ পেত, বাইজীদের নাচগানে ।  পুজোর মরসুমে  শারদীয় বার্তায় বাইজীদের নিত্য উপস্থিতি ছিল অপরিহার্য ।

বাবুদের বাড়ীতে, এইসব নাচাগানার প্রচলন আগে থেকেই ছিল, তবে পুজো উপলক্ষে প্রথম বিবরণ পাওয়া যায়-খ্রীঃ ১৭৯২ সালে ।

আলো ঝলমল, এই আসরের উদ্যোক্তা ছিলেন – পোস্তার সুখময় রায় ।
তাঁর বাড়ীর নাচই নাকি ছিল-  শহর কোলকাতার সবচেয়ে ভালো । আসর ঠাণ্ডা রাখার জন্য চলতো বিরামহীন টানা পাখা ।

প্রভু ইংরেজদের ভজনা, ঈশ্বর ভজনার থেকেও অগ্রাধিকার পেতো । কারণটা সহজেই বোঝা যায়- টাকা কামাই ।

বিয়েতেই চলতো বাই – নাচ । প্রভুরা আসতেন নিমন্ত্রিত হয়ে ।

বাবুদের বাইজী প্রীতি ছিল অফুরন্ত, কারণ ঔপনিবেশিক শাসনকর্তা ইংরেজদের শাসনের অন্য স্তম্ভ ছিল – যৌনতা ।

অবশ্য- কোলকাতায় এই আদি পেশা ছিল, আগে থেকেই ।
তথ্য দিয়ে রেভারেণ্ড লঙ জানিয়েছেন – ১৭৫৩ সালে  কোম্পানি কর্তারা ঈশ্বরী ও বুভী নামে দুটি মেয়ের বিষয় সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে নিলাম করে, ৫৩৯ টাকা ৪ আনা ৩ পাই উপার্জন করেছিলেন ।
তাদের অপরাধ সম্বন্ধে কিছু জানা যায় নি, তবে তাঁরা নগরকুল বধূ ছিলেন এটা জানা গিয়েছিল ।

পলাশির পর, সিরাজের ভাণ্ডার থেকে যখন নগরের কোলকাতা দখলের সময় ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় তখন “ব্ল্যাক জমিন্দার” গোবিন্দ মিত্রের  দুজন রক্ষিতাও ক্ষতিপূরণ পান । তাঁদের নাম-রতন আর লতা ।
এঁরা কি অসামান্যা রূপসী ছিলেন না নৃত্যগীতে পটিয়সী রমণী – আর জানার কোনো উপায় বোধহয় নেই ।
১৮১৯ সালের ১৬ ই অক্টোবর – সমাচার দর্পণ লিখছে :-


“শহর কলিকাতার নিকী নামে এক প্রধান নর্তকী ছিল, কোনো ভাগ্যবান লোক তাহার গান শুনিয়া ও নৃত্য দেখিয়া অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইয়া এক হাজার টাকা মাসিক বেতন দিয়া তাহাকে চাকর করিয়া রাখিয়াছেন”

নিকীকে বর্ণণা করা হত – হিন্দুস্তানের ক্যাটালনি । অন্য বাইজীদের মানদণ্ড ছিলেন- নিকী ।
এক রাতের নজরাণা ছিল ১০০ পাউণ্ড বা ১ হাজার টাকা আর সমমূল্যের একজোড়া শাল ।
মনোহারি অলঙ্কার  পরতেন আর মণিমুক্তো খচিত গয়না ।
চোখে কাজল, ঠোঁট আর দাঁত রক্তিম, সিঁথি করা চুল মাথার পেছনে বেণীবদ্ধ ।

সোনালি রুপালি পোশাকে সারা অঙ্গ ঢাকা । তাই শরীরের গঠন ঠিক বোঝা যেত না ।

চার্লস ডয়লি ঊনিশ শতকের বিখ্যাত চিত্রকর ও লেখক ।

তিনি লিখছেন :-

“But hark, at Nickie’s voice – such, one never hears
From Squalling nautchness , straining their shrill throats
In natural warblings, how it great our ears,
And brilliant gingling of delicious notes,
Like nightingles  that the forest floats…..”
( বানান অপরিবর্তিত )

নিকী, নিকী, নিকী,- ঊনিশ শতকের কোলকাতা তিন দশক ধরেই যেন নিকীর করায়ত্তে
প্রথম নিকী যখন আত্মপ্রকাশ করেন- তখন তাঁর বয়স ১৪ কি ১৫ । তারপর ত্রিশ বৎসর রাজত্ব করার পর তাঁর আর খোঁজ পাওয়া যায় নি ।






















==
তথ্যঋণ :- ঐতিহাসিক অনৈতিহাসিক
শ্রী পান্থ
আনন্দ পাবলিশার্স
ISBN- 81-7756-233-9



জীবন

সক্কালবেলা প্রেশার কুকারের সিটির মত তীক্ষ্ণ আওয়াজ- বলি, কত ঘুমবে ?

বাজার যাবে না ?


ওনার ধারণা-  আমার ঘুমের রিকোয়েস্ট টাইমড্ আউট !  রাতে বেলায় ঘুমের পিঙ্গ রিপ্লাই কেটে কেটে যায় , সিটির হিসহিস আওয়াজে, সেটা ওনাকে কে বোঝাবে  ?“

হাঁই দাবড়ে, হুকুম দাবড়েবলে থলির পাল্কি নিয়ে বাজারে ছুটতে হয় ।  হরির চা আজ বন্ধ ।শুনলাম- আগামী দুদিন নাকি ব্যাঙ্কে ধর্মঘট । হরি চা বেচা পয়সা জমা রাখতে পারবে না বলে , বন্ধ রেখেছে দোকান ।


ঠুংরী তালে মুখস্থ করতে করতে বেরিয়ে পড়ি :-


পমকিন লাউ কুমড়ো, কোকোম্বর শসা

বিঞ্জেল বার্তাকু  আমিমানে চাষা


রিক্সায় উঠতেই, মনে হয় চালক কৃষ্ণ বলছে :-


উঃ কি ভারি মাল রে বাবা
নাঃ! এটা একটা হাতি ।
উঃ এর কি ভীষণ ওজন
এসো এটাকে আমি নাবিয়ে দি


রাতে পুরনো কোলকাতার বই পড়েছি, তাই  বুঝতে পারি, এই ছড়াগুলো মাথায়, কন্ট্রোল- এস্ হয়ে বসে আছে ।


ঈশ্বর গুপ্তর আমল নেই, যে বাজারে মাছের দোকানে বলব :-


কুড়ি দরে কিনে লই, দেখে তাজা তাজা

টপাটপ খেয়ে ফেলি ছাঁকা তেলে ভাজা


বেগুনের নধর কান্তি দেহ দেখে মনে পড়ে মুকুন্দ রামকে :-


হরিদ্রা চন্দন তেল আনিল দুবলা
বার্তাকুর অঙ্গে দিয়ে দূর কৈল মলা


নতুন আলু দেখে মনে হয় :-চামড়া ফর্সা করার জন্য দরকার- পাথর, ঝামা, বালি সাবাং ।

হঠাৎ আলিবাবার গুপ্ত ধনের মত দেখতে পাই :-


রূপেতে মোহিত করে মহিমা অসীম ।

সর্ব্ব রোগ নাশ করে এ হাঁসের ডিম ।।

সিদ্ধ খাও ভাজা খাও সব দিকে হিত ।

ব্যঞ্জন করিয়া খাও আলুর সহিত ।।


 না কিনলে অভিশাপ  :-


ঘৃণায় যে নাহি খায় এ হাঁসের ডিম ।

মরুক সে না খেয়ে তেতো নিম ।।

বৃথাই রসনা তার বৃথা তার মুখ ।

কোন কালে নাহি পায় আহারের সুখ ।।


গুপ্ত ঈশ্বরেরবাক্য অবহেলা করি- এই সাহস নেই ।

রোব্বারের বাজার, তাই কমলাকান্তের সেই আক্ষেপকে দূর করার সিদ্ধান্ত নিলাম, হাঁসের ডিম কেনার পর ।

কমলাকান্ত বলেছিলেন :-

অধ্যাপক ব্রাহ্মণগণ সংসারের ধূতরা ফল । আমি অনেকদিন হইতে মানস করিয়াছি যে, কুক্কুট মাংস ভোজন করিয়া হিন্দু জন্ম পবিত্র করিব- কিন্তু এই অধম ধুতুরা গুলার কাঁটার জ্বালায় পারিলাম না

আমি নিজে ধুতুরা- বিকল্পে ধুস্তূর পুষ্প । তাই সিনা টান করে কিনে ফেললাম দেড় কেজি মাংস ।

পাপহলে গোপালকে একটা নকুলদানা দেবো । বিদ্যেসাগর বলেছিলেন গোপাল অতি সুবোধ বালক ।

আমার এই দিক থেকে  কোন চাপ নেই । কিন্তু- ওনার কণ্ঠ তো আর বেলীফুলের মত মিষ্টি গন্ধে ভরা নয় । ভয়ে ভয়ে বাড়ী ফিরতেই হবে ।


অন্তরে কোথায় যেন সেই চল্লিশ বছর আগের রাস্তায় ভেসে বেড়ানো গানের কলি :-

মেরা মনকা দরওয়াজা খুলা হ্যায়, অন্দর ঘুসকে তালা লগা দে” 


রান্না বান্না ও জীবন

বয়স যখন কামড় বসায়, তখন পরনির্ভরতা বেড়ে যায় । শরীরে আর যুত থাকে না । এককালে, আমার স্ত্রী একাহাতে সব সামলেছেন ।

আখা, ঘুঁটে –গুল – কয়লা দিয়ে সাজনো, রান্না করা, শীলে বাটনা বাটা, বাজার করা, বাসন মাজা, ঝাড় দেওয়া, ছেলেদের পড়াশোনার তদারকী করতেন হাসি মুখে ।

আমার তো ঘোরাঘুরির চাকরী । তাই বেশী সাহায্য করতে পারতাম না । তাঁর দরকারও ছিল না, ওনার ।

এসব দেখে,   পরিচারিকা রাখলাম ।  কারণ, ওনার ওপর প্রচণ্ড ষ্ট্রেস যাচ্ছিল । অল্প পয়সা রোজগার করি । তবুও, এই “ বড়লোকী” টা করলাম ।
না, এখনকার হিসেবে টাকাটা যৎসামান্য হলেও আমার কাছে সেটা মহামূল্যবান । কাজে ফাঁকি কিন্তু দেখি নি সেই পরিচারিকার ।

শরীর খারাপ থাকলেও আসতেন উনি । চিন্তা থাকতো না ।
ধীরে ধীরে, অবস্থা একটু হলেও পাল্টালো । মালদা শহরে দেখলাম রান্নার গ্যাস এসেছে ।

ডিষ্ট্রিবিউটার ছেলেটি আমার অতিপরিচিত । আমাকে ধরে বসলো- একটা গ্যাস নিন।
দেখুন – কোনো ঝামেলা নেই । অন্য লোকেরা নিচ্ছে না ভয়ে ।
দাম ৪৫০ টাকা- দুটো সিলিণ্ডার, বার্নার আর গ্যাসের দাম নিয়ে । বললাম – ক্যাস দিতে পারবো না, কিস্তিতে শোধ করবো । ছেলেটি- তাতেই রাজী ।
চলে এলো গ্যাস বাড়ীতে ।
হিতৈষীরা এসে বললেন – আগুন টাগুন লাগতে পারে যে কোনো সময়ে । সাবধান !! এক প্রতিবেশী এসে আমাকে দাবড়ালেন ।
তাঁর বক্তব্য- তিনি জানেন, সিলিণ্ডার বার্ষ্ট করতে পারে । দুর্ঘটনা ঘটলে তাঁর বাড়ীই আগে ফল ভোগ করতে পারে ।
পরের দিন, ইংলিশবাজার থানার ওসি এসে হাজির । আমার বিরুদ্ধে  অভিযোগ , আমি আগুন লাগানোর সরঞ্জাম বাড়ীতে এনে পাড়ার নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেছি ।
সরেজমিনে দেখে, হেসে বড়বাবু বললেন – আমাকেও তালে একটা কিনতে হচ্ছে । খবর পেয়ে ডিষ্ট্রিবিউটার ছেলেটিও চলে এসেছিল- যাতে আমার কোনো অসুবিধে না হয় ।
সে তো ভারী খুশী ।  ইংলিশবাজার থানার ওসি যখন কিনছেন, তখন আর সেল নিয়ে চিন্তা নেই ।
অন্য লোকেদের ভীড় আমার বাড়ী   - গ্যাসে কি ভাবে রান্না হয় দেখার জন্য ।
তারপর এলো টিভি । এবারও সেল নেই মালদায় । একটা এলপিটি বা লো পাওয়ার ট্রান্সমিটার বসানো হয়েছে । সেটা কতদিন থাকবে লোকেরা সন্দিহান ।
টিভির দোকানের মালিক ওই গ্যাস ডিষ্ট্রবিউটের বন্ধু । একদিন, অ্যান্টেনা, টিভি, বুষ্টার ( বাংলাদেশ টিভি দেখার জন্য ) নিয়ে আমার বাড়ীতে দিয়ে গেল ।
সর্ত-সেই কিস্তি ।
কিছুদিন পরেই ছিল ছাব্বিশে জানুয়ারী । ভাড়া বাড়ীর বারান্দায় শতরঞ্চী আর মাদুর পেতে লোকে লোকারণ্য টিভি দেখতে ।
বাংলাদেশ টিভি দেখে তো আমার ছেলেরা ও তার সহপাঠীদের ধারণাই হয়েছিল- ভারতের রাষ্ট্রপতি – এরশাদ সাহেব ।
একে একে ফ্রিজ, মাইক্রোওভেন, ওয়াশিং মেশিন, ইমালশান হিটার, টোষ্টার, রাইস কুকার এবং আরও কিছু জড়ো হল ।
পরিচারিকারাও ডুব মারতে শুরু করলেন । শুধু মাইনে নেবার আগে পেছু তাঁদের দর্শন নিয়মিত ।
তার ফলে, টেনশন , সুগার, হাইপারটেনশন, ওয়ার্ক সাসপেনশন – ব সন সন করে মাথার ওপর চরকী খায় ।

বয়স হয়ে গেছে- আমাদের ।
অথচ, বলতেও পারছি না- দাও ফিরে সেই অরণ্য, লহ এই নগর ।
রবিদাদু জমিদার ছিলেন- আমার ছাপোষা !!! কবিত্ব ওঁদেরই মানায় ।
যাই বাসন মাজি , আজও পরিচারিকা আসেন নি ।
ভালো থাকবেন ।




কিস্সা ডক্টরোঁকা


 *****
কিছু শব্দের জন্য আগাম মাফী চাইছি
++++++++++


আমার প্রোফাইলে বহু ডাক্তার বন্ধু আছেন । আমি নিশ্চিত, তাঁরা রাগ করবেন না, এই লেখাটা পড়ে ।

হয় কি জানেন, সব পেশাতেই  হাসির উপাদান ছড়িয়ে থাকে । আমাদের নজর এড়িয়ে যায়, সেই সব ঘটনা ।

বেচুবাবু জীবনে প্রচুর ডাক্তার বাবু ও বিবিদের সংস্পর্শে এসেছি । অধিকাংশই গুণী এবং বন্ধু বৎসল আর রসিক । পেশার বাইরে তাঁরা সাহিত্য প্রেমী, তুখোর আড্ডবাজ, থিয়েটার অভিনেতা এবং ভালো গাইয়ে বাজিয়ে । তবে, ঐ যে বলে না – প্রত্যেক গুণী মানুষের মাথায় ছিট থাকে !!! এটা তাঁদের ছিল এবং আছে । আর আছে বলেই তাঁরা এক এক জন পরিপূর্ণ মানুষ ।

কিছু ব্যতিক্রম তো থাকবেই, কারণ ব্যতিক্রমই বিধির নিয়ামক ।

বেচু বাবু লাইনে “ডিটেলিং” বলে একটা শব্দ আছে । কোন একটা নির্দিষ্ট ওষুধের গুণাবলীকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বর্ণণ করাকে ডিটেলিংবলে

অনেক ডাক্তার এই “ডিটেলিং” কে খুব একটা পছন্দ করেন না, যদি না সেটা নতুন মলিকিউল  ( ওষুধের প্রধান উপাদান)  হয় ।

আমাদের সময়ে তো নেট ছিল না, তাই নতুন মলিকিউল এলে আমাদের ডিটেলিং মন দিয়ে শুনতেন তাঁরা ।
পুরোনো মলিকিউল হলে, আর শুনতেন না । শুধু ব্র্যাণ্ড নেম শুনেই খান্ত হতে বলতেন।

অনেক বেচুবাবু আবার এগুলো বুঝেও বুঝতে পারতো না । তারা জোর করে শোনাবেই আর ডাক্তাররা শুনবেন না ।

সবচেয়ে দুঃখের কথা কি জানেন ? এক বেচুবাবুর সাথে – একজন মহিলা চিকিৎসকের প্রেম করে বিয়েটাই ভেঙে যেতে বসেছিল এই “ডিটেলিং” য়ের কারণে ।

মহিলা বলেছিলেন:- তোমার সাথে বিয়ের আগেই যদি একই কথা বারবার শুনতে হয়, তবে আমার পোষাবে নি বাপু ।

বেচু বাবু সাবধান হয়ে গিয়েছিলেন বলে শেষপর্যন্ত বিয়েটা হয় এবং তাঁরা এখন সুখী দম্পতী ।

তখন, আবার ডাক্তার কুলের ষ্টেটাস সিম্বল ছিল- কত বেচু তাঁদেরকে রোজ ভিজিট করেন  ( এখনকার কথা বলতে পারবো না ) ।

এই রকমই এক মহিলা চিকিৎসকের ( গাইনী ) কথা প্রথমে বলি । দিনে প্রায়, ৩০/৩৫ জন রোগী দেখতেন । বাংলা ভাষা প্রেমী , যতটা পারেন, বাংলায় কথা বলেনমেডিক্যাল টার্মের আবার বাংলা নেই তাই বাধ্য হয়েই ইংরেজী  বলতেন  তখন
তবু তাঁর চেষ্টার অন্ত ছিল না
একবার এক মহিলা রোগীকে বলেছিলেন:- আপনার জরায়ু কর্তন করতে (হিসটেক্টটমি) হইবে ।
রোগীর পতন এবং মূর্চ্ছার মত অবস্থা হয়েছিল ।

এহেন জমজমাট  প্র্যকটিশ করা  মহিলাকে আর বেচুবাবুরা ভিজিট করে না । মহিলার “পিষ্টিজে” টানাটানি ।

একবার রাস্তায় আমাকে  দেখে গাড়ী দাঁড় করালেন ।  তারপর সেই অবধারিত প্রশ্নটা ধেয়ে এলো আমার দিকে ।
শুনুন- আপনি একজন সিনিয়ার রিপ্রেজেনটেটিভ । বলুন তো, এত কম রিপ্রেজেনটেটিভ আমায় ভিজিট করছেন কেন ?

বললাম :- যদি অভয় দেন তো বলি !

না না বলুন, আমায় জানতেই হবে কারণটা

যত নষ্টের মূল আপনার চেম্বারে কলিং বেলের ওপর বড় বড় করে লেখাটা !!!!

ভদ্রমহিলা আর মনে করতেই পারেন না, কি লেখা আছে সেখানে !!
বলুন না- কি লেখা আছে ? আমার অমতে কিছু হয় নি !!

না না, সেটা নয়, তবে কি জানেন সবার মন তো সাদা নয় । আপনার যেমন সাদা মনে কাদা নেই !!!

বকবক ছাড়ুন । কথাটা বলবেন তো !
মানে
আহা বলুন না !!!

বলেই ফেলি

হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
লেখা আছে :- টিপিয়া ডাকিবেন ।
++++++++++
এক বেচু বাবু ডায়াবেটিসের একটা ওষুধের ডিটেলিং করছেন ডাক্তার বাবুর কাছে ।
পুরোনো মলিকিউল । তবু বেচু বাবু  একটা বড় ছবি দেখিয়ে ( একজন নগ্ন পুরুষ, শুধু লজ্জাস্থানটা একটা বড় পাতায় ঢাকা ) “ অ” থেকে “৺ ” বলেই যাচ্ছে ।
ডাক্তার বাবু উসখুস করছেন । কিছু বলতেও পারছেন না । অবশেষে শেষ হলো সেই দীর্ঘ ডিটেলিং ।
সমাপ্তির পর বেচু বাবু প্রশ্ন করলেন ডাক্তার বাবুকে :- কোনো প্রশ্ন স্যার ?

একটাই প্রশ্ন !

কি স্যার ?

আচ্ছা, ওই পাতাটা কি পাতা ?

স্যার, এটা তো বলতে পারবো না । তবে, আমাদের মেডিক্যাল ডিপার্টমেন্টকে চিঠি লিখে জেনে আপনাকে বলবো স্যার !!!

এ বাবা, আপনি এত জানেন, অথচ এই পাতাটার নাম জানেন না ?

সত্যি স্যার !!! জানি না !!

আমি বলি ?

বলুন বলুন

সিম্পল !!! ওটা ধনেপাতা !!!

###########








খাওয়া দাওয়া

খাওয়া দাওয়া নিয়ে আমার দুর্বলতা সর্বজনীন । এই বয়সে এসেও, সেই দুর্বলতাটা ভয়ঙ্কর ভাবে বিদ্যমান । খেতে বসলে আর হিতাহিত জ্ঞান থাকে না আমার ।

আমার ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে জল খাওয়া বা কচকচ করে মাংস চিবোনোর  শব্দ শুনে আমার দিকে অনেকেই ( এর মধ্যে আমার “উনিও” আছেন ) ভুরু কুঁচকে তাকান ।

একবার তো পার্ক স্ট্রীটের “স্কাইরুমে” ( এখন ঘচাং ফু হয়ে গেছে ) গিয়ে বলেই দিয়েছিলাম- ও ঠাহুর !!! ঝুলে ( স্যুপ) কদু ( লাউ) দিসো ক্যা?

আশ্চর্য জনক  ভাবে উত্তর এসেছিল :- মিঁঞা,  ধইর‌্যা ফেলসেন দেহি ।

তারপর থেকেই আমার “কনফি” তুঙ্গে । এই সব নাক উঁচুপনাকে – আমি তাচ্ছিল্যর চোখেই দেখি এখন ।




খুব সাম্প্রতিক – প্রশান্তর মেয়ের বিয়েতে, সিদ্ধার্থ দেবের নাতনীর অন্নপ্রাশনে, শ্রীপর্ণা- অনমিত্রের বিয়েতে কব্জী ডুবিয়ে খেয়ে এসেছি ।

ফেসবুকের বন্ধুদের বাইরেও কয়েকটা বিয়েতে– খাওয়াটা জব্বর হয়েছিল ।

বেশীদিন হয় নি, আমার ফেসবুকের বন্ধু অভিজিৎ দত্তের বাড়ীতেও আড্ডা দিতে গিয়ে- ব্রহ্ম খাবার খেয়েছি ।

সুকুমার রায় ক্লাবের পিকনিকের খাওয়ার কথা না বললে , আমার নরকেও স্থান হবে না ।

তাই, আজ একটু খাওয়া দাওয়া নিয়ে অন্য কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলি ।

প্রথমেই বলবো আজ  থেকে প্রায় পঞ্চাশ আগেকার কথা । যাদের বাড়ীতে নিমন্ত্রণ
– তাঁরা আবার বারিন্দির এবং স্বয়ং গৃহকর্তা আবার ডাক্তারও বটে ।

মাটীতে কলাপাতায় পরিবেশন আর মাটীর ভাঁড়ে  জল ।

পদগুলোও বেশ উঁচুমানের । শেষ হয়ে এসেছে খাওয়া, তখন গৃহকর্তার মনে পড়ল শাকটা দেওয়া হয় নি, প্রথম পাতে ।
উনি যথারীতি উচ্চগ্রামে হাঁক ( বারিন্দিররা আবার পেছনে ভর দিয়ে কথা বলেন- বরিন্দের প্রাচীন প্রবাদ)  দিলেন :- ওরে শাকটা নিয়ে আয় ।

নামকরা খাইয়েরা আপত্তি তুলে বললেন :- ওটা আর দিতে হবে না । এখন তো উপরে মিষ্টান্নে ভর্তি । প্রথামত শাক পেটের নীচে থাকার কথা ।

ডাক্তার আবার হাঁক দিলেন বরিন্দ টোনে :-ওরে, শাক গুলো একটা বালতীতে গুলে নিয়ে আয়, সঙ্গে গরুকে ইনজেকশান দেওয়ার মোটা কাঁচের সিরিঞ্জ ।  শাকটা সকলের পেছন দিয়ে ঢুকিয়ে দি । অতিথি সৎকারে ত্রুটি যেন না হয় ।

আপত্য কারীরা সহ সব নিমন্ত্রিতরা দুড়দার করে উঠে দৌড়ে পালিয়েছিলেন সেবার ।

-
পরের একটা অভিজ্ঞতা দিয়ে শেষ করি আপাতত ।

মালদায় গাজল বলে একটা আধা শহর আছে । ইংলিশ বাজার ( শহর এই নামেই পরিচিত) শহর থেকে ছাব্বিশ কিমি দূরে ।

গাজোল থেকে আলাতোড় গ্রাম আরও দশ কিমির মত ।

সম্পন্ন গৃহস্থ । ছেলে ডাক্তার । সেই ছেলের বৌভাতে আমরা নিমন্ত্রিত
গৃহস্থ খুব সজ্জন ব্যক্তি । আবার তথাকথিত “ ভদ্রসমাজে” মেলামেশা নেই বলে, একটু কুণ্ঠিত আর নার্ভাস থাকেন । সেরকম প্রথাগত “ শিক্ষা” নেই তবে টাকার গরমও নেই ।
একমাত্র ছেলেকে ডাক্তারী পড়িয়েছেন, বৌমাও ইংরেজীতে স্নাতকোত্তর ।

আমরা খেতে বসেছি । গৃহস্থ হাত জোড় করে এসেছেন আমাদের সামনে ।

বিনয়ের সঙ্গে বললেন :- বাড়ীতে তো কিছু খেতে পান না, এখানেই ভালো ভালো খাবার খান ।

তিনি কি বলতে চেয়েছিলেন, আমি জানি- বুদ্ধিমান পাঠককে সেটা বলে দিতে হবে না !!!!




কেরা বংলা

*****পশ্চিমবঙ্গ- ওডিশার সীমান্তের একটি গ্রামের লোক এই  প্রথমবার কোলকাতা এবং বইমেলায় এসেছেন ।

এই কথোপকথন কাল্পনিক । কিন্তু, আমার একটা চেষ্টা থাকলো ভাষাটা সম্বন্ধে আপনাদের ধারণা দেওয়ার ।
এই ভাষাটা ওডিয়া মিশ্রিত এবং এটাকে কেরা বাংলা বলে । মাতৃভাষা দিবসের প্রাক্কালে এটা আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি ।
++++++++++++++++++++

লোকটি ফিরে গিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা বলছেন বন্ধুকে । বন্ধুই  প্রথম জিজ্ঞেস করলেন সেই কোলকাতা আসা লোকটিকে :-

-      হই কিরে ( হ্যাঁ রে ) !! কলিকাতা বুলিকি (বেড়িয়ে) আসলি কি?
-      হঁ পরা !!
-      কাঁহিকি গেছিলি সেঠারে ?
-      কলিকতা কেবে (কখনও) যাই নি, আউ সেঠারে ( ওখানে ) বইমেলা হছে তো, সেঁথি পাঁই ( জন্য)
-      তা, কোণ তোরঅ অভিজ্ঞতা, একটু কহ না !!
-      আউ   কুহ না !!! হাওড়ারে তো হুলইলি ( নামলাম ) । বস্ ( বাস) রে উঠি পারছি না । এতে ভীড়অ । হেঁটেকেরে হাওড়া বিরিজ পার হয়ে গেনু ।
-      তা পরঅ ?
-      এতে খরা ( রোদ ) যে, শোসরে ( তেষ্টায় ) আউটি- পাউটি ( হয়রাণ) হয়ে গেনু !! একটা পিণ্ঢা ( দাওয়া) পাছি না, কি একটু বসেকেরে পানি পিবি ( খাব) ।
-      বঢ় কষ্টরঅ কথা !! হউ, (আচ্ছা)  তা পরে ?
-      গুটিয়ে ( একটা) পানি বোতল কিনেকেরে আগে শোস মিটালাম । ট্যাস্কি খণ্ডে (একটা) ভি মিলি গেল ।  মিলন মেলা প্রাঙ্গনরে হুলই দেলা সেই ড্রাইভরঅ । হেঁটেকেরে যাছী তো যাছী। কেতে লুকঅআমার মনে  লাগল কি এটা হাট । কেতে ঝিঅ, (মেয়ে) পুঅ ( ছেলে ) একা সাঙ্গরে বুলছে ( ঘুরছে ) ।
-      সতে সতে ? ( সত্যি, সত্যি )
-      হঁ পরা ! আমি তো দেখে কাবাআ ( অবাক )  ।
-      হেঁটেকেরে তোর অন্টা ( কোমর) বথা হেই নি ?
-      হেইথিলা, তবে ঘাসঅ উপরে মঝিরে মঝিরে বসে পড়ছিলাম আর কি !!!
-      বহি কিনিলু কি?
-      হঁ !! তিনি চারি খণ্ড কিনেকেরে ট্যাস্কি  করেকেরে হাওড়াতে আসেকেরে বস্ রে চঢ়ি ঘরে  পলাই ( চলে) আসলাম ।  বাপ্পা ( বাপরে ) আউ ( আর ) যেতাম নি ।

-      ভলঅ !! ভলঅ ।

ছোটবেলার ইচ্ছে

ছোটবেলায় কত ইচ্ছে ছিল আমার । একবার স্কুলের কোন ক্লাসে যেন রচনা লিখতে বলা হয়েছিল পরীক্ষায় । বড় হয়ে, তুমি কি হতে চাও ?

একলাইনে লিখেছিলাম রেল ইঞ্জিন ড্রাইভার । তারপর আর কিছু লিখি নি । শিক্ষক খুশী হয়ে আমাকে দশে , শূন্য দিয়েছিলেন ।

ইংরেজীতে প্রায়ই হ্যাভ আর হ্যাজ গুলিয়ে যেত । একটু বড় হয়ে একটা গল্প পড়েছিলাম আমারই মত একটি ছেলের ।

হ্যাভ আর হ্যাজয়ে গুলিয়ে গিয়েছিল বলে, শিক্ষক তাকে হাজার বার আই হ্যাভ লিখতে বলে বাড়ী চলে গিয়েছিলেন ।

ছেলেটি কিন্তু নির্দ্দেশ অবজ্ঞা করে নি । হাজার বার আই হ্যাভ লেখার পর দেখে- স্কুলে দরওয়ান ছাড়া আর কেউ নেই ।

তাকেই খাতাটা জমা দিয়ে লিখেছিল ( হাজার বার ইংরেজী লিখেছিল বলে, আর বাংলা লিখতে ওর মন সরছিল না ) :-

স্যার,

আই হ্যাজ রাইটেড- আই হ্যাভ থাউজাণ্ড টাইমস্, অ্যান্ড আই হ্যাজ ওয়েন্ট টু মাই হাউজ ।

শেষে কি হয়েছিল, সেটা আর গল্পকার লেখেন নি বা লিখলেও মনে নেই ।

আমার ছোট বেলায় আবার ফিরে যেতে ইচ্ছে করে আর সবার মত ।


রচনায় লিখবো বড় হয়ে রাজ্যসভার সদস্য হবো অ্যান্ড আই হ্যাজ নো গিভড্ মেনী মেনী money !!