সেকালের কোলকাতায়, “বাবু”দের লক্ষণ ছিল- নয়টা
“মনিয়া বুলবুল আখড়াই গান
খোষ পোষাকী যশমী দান
আড়িঘুড়ি কানন ভোজন
এই নবধা বাবুর লক্ষণ”
এই বাবুয়ানীতে বাইজীর নাচগান ছিল অপরিহার্য ।
পুরোহিতের মন্ত্র নয়- মৃণ্ময়ী রূপ প্রাণ পেত,
বাইজীদের নাচগানে । পুজোর মরসুমে
শারদীয় বার্তায় বাইজীদের নিত্য উপস্থিতি ছিল অপরিহার্য ।
বাবুদের বাড়ীতে, এইসব নাচাগানার প্রচলন আগে থেকেই ছিল, তবে
পুজো উপলক্ষে প্রথম বিবরণ পাওয়া যায়-খ্রীঃ ১৭৯২ সালে ।
আলো ঝলমল, এই আসরের উদ্যোক্তা ছিলেন – পোস্তার সুখময়
রায় ।
তাঁর বাড়ীর নাচই নাকি ছিল-
শহর কোলকাতার সবচেয়ে ভালো । আসর ঠাণ্ডা রাখার জন্য চলতো বিরামহীন টানা পাখা
।
প্রভু ইংরেজদের ভজনা, ঈশ্বর ভজনার থেকেও অগ্রাধিকার পেতো ।
কারণটা সহজেই বোঝা যায়- টাকা কামাই ।
বিয়েতেই চলতো বাই – নাচ । প্রভুরা আসতেন নিমন্ত্রিত হয়ে ।
বাবুদের বাইজী প্রীতি ছিল অফুরন্ত, কারণ ঔপনিবেশিক
শাসনকর্তা ইংরেজদের শাসনের অন্য স্তম্ভ ছিল – যৌনতা ।
অবশ্য- কোলকাতায় এই আদি পেশা ছিল, আগে থেকেই ।
তথ্য দিয়ে রেভারেণ্ড লঙ জানিয়েছেন – ১৭৫৩ সালে কোম্পানি কর্তারা ঈশ্বরী ও বুভী নামে দুটি
মেয়ের বিষয় সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে নিলাম করে, ৫৩৯ টাকা ৪ আনা ৩ পাই উপার্জন করেছিলেন
।
তাদের অপরাধ সম্বন্ধে কিছু জানা যায় নি, তবে তাঁরা নগরকুল
বধূ ছিলেন এটা জানা গিয়েছিল ।
পলাশির পর, সিরাজের ভাণ্ডার থেকে যখন নগরের কোলকাতা দখলের
সময় ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় তখন “ব্ল্যাক জমিন্দার” গোবিন্দ মিত্রের দুজন রক্ষিতাও ক্ষতিপূরণ পান । তাঁদের নাম-রতন
আর লতা ।
এঁরা কি অসামান্যা রূপসী ছিলেন না নৃত্যগীতে পটিয়সী রমণী –
আর জানার কোনো উপায় বোধহয় নেই ।
১৮১৯ সালের ১৬ ই অক্টোবর – সমাচার দর্পণ লিখছে :-
“শহর কলিকাতার নিকী নামে এক প্রধান নর্তকী ছিল, কোনো
ভাগ্যবান লোক তাহার গান শুনিয়া ও নৃত্য দেখিয়া অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইয়া এক হাজার
টাকা মাসিক বেতন দিয়া তাহাকে চাকর করিয়া রাখিয়াছেন”
নিকীকে বর্ণণা করা হত – হিন্দুস্তানের ক্যাটালনি । অন্য
বাইজীদের মানদণ্ড ছিলেন- নিকী ।
এক রাতের নজরাণা ছিল ১০০ পাউণ্ড বা ১ হাজার টাকা আর
সমমূল্যের একজোড়া শাল ।
মনোহারি অলঙ্কার
পরতেন আর মণিমুক্তো খচিত গয়না ।
চোখে কাজল, ঠোঁট আর দাঁত রক্তিম, সিঁথি করা চুল মাথার পেছনে
বেণীবদ্ধ ।
সোনালি রুপালি পোশাকে সারা অঙ্গ ঢাকা । তাই শরীরের গঠন ঠিক
বোঝা যেত না ।
চার্লস ডয়লি ঊনিশ শতকের বিখ্যাত চিত্রকর ও লেখক ।
তিনি লিখছেন :-
“But hark, at Nickie’s voice –
such, one never hears
From Squalling nautchness ,
straining their shrill throats
In natural warblings, how it
great our ears,
And brilliant gingling of
delicious notes,
Like nightingles that the forest floats…..”
( বানান অপরিবর্তিত )
নিকী, নিকী, নিকী,- ঊনিশ শতকের কোলকাতা তিন দশক ধরেই
যেন নিকীর করায়ত্তে।
প্রথম নিকী যখন আত্মপ্রকাশ করেন- তখন তাঁর বয়স ১৪ কি
১৫ । তারপর ত্রিশ বৎসর রাজত্ব করার পর তাঁর আর খোঁজ পাওয়া যায় নি ।
==
তথ্যঋণ :- ঐতিহাসিক অনৈতিহাসিক
তথ্যঋণ :- ঐতিহাসিক অনৈতিহাসিক
শ্রী পান্থ
আনন্দ পাবলিশার্স
ISBN- 81-7756-233-9