Wednesday, March 4, 2015

টুকরো- টাকরা -১


শুরুই করি শেয়ালদা থেকে । কোচে তো উঠলাম । আমার সাইড আপার আর ওনার সাইড লোয়ার ।
আগে হলে, আমার আপার বার্থে ওঠার কোনো সমস্যা ছিল না, কিন্তু লাম্বার স্পোনডিলোসিসের পর, ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক এই সব করা একদম বারণ ।
নামেই সিনিয়ার সিটিজেন, বার্থ অ্যালট করার সময় এই সব বয়স- টয়স মানে না, এটা প্রায়ই ঘটে ।
তখনও লোক আসা শুরু হয় নি কোচে ।
তিরতিরে এসির ঠাণ্ডা হাওয়ায় ঘেমে যাচ্ছি উৎকণ্ঠায় । উনি, ছেলে এবং বৌমারও উদ্বেগ ।
অবশেষে একজনের আগমন । আশা নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার বার্থ নাম্বারটা বলবেন ?
আই ডোন্ট আন্ডারষ্টাণ্ড বেঙ্গলী । - উত্তর এলো
এতো মহা বিপদ ! উত্তেজিত হয়ে একটা বক্তৃতা দিতে আরম্ভ করবো ভাবছিলাম, তবে ভদ্রলোকের মোবাইলে ফোন আসাতে বুঝলাম – তিনি তেলুগু ভাষী এবং হায়দ্রাবাদের খবরাখবর নিচ্ছেন ।
তাঁর কথাবার্তা শেষ হতেই সপাটে ব্যাট চালালাম – তেলুগু ভাষায় ।
খানিক চমক খেয়ে ভদ্রলোক তোতলাতে লাগলেন । ছেলে বলল – ক্যানো, এই সব ভাষা বলো, বলতো ? সেই কবে শিখেছিলে, এখন আর অভ্যেস নেই । ওনার লোয়ার বার্থ থাকলেও আর দেবেন না ।
এর মধ্যেই ধাতস্থ হয়ে, ভদ্রলোক আমাকে বললেন :- দীর্ঘ নয়দিন বাদে আমার মাতৃভাষা শুনলাম । না, না, আমারও আপার বার্থ, না হলে আপনাকে দিতে কোনো অসুবিধে ছিল না ।

এটাই ইংরেজী করে বলতে বললাম – ওনাকে । ছেলেকে ইংরেজী ভাষায় বুঝিয়ে দিলেন তিনি ।
ছেলেও কি চমকালো ? বুঝলাম না ।
ও জিজ্ঞেস করল:- আমার বাবা ঠিকঠাক আপনার মাতৃভাষা বলতে পারছেন ?
সহাস্যে জবাব এলো :- তোমারও তো বাবার মাতৃভাষাটা শেখা উচিত । উনি দ্যাখো, কি সুন্দর বাংলা বলছেন, আর তুমি পারবে না তেলুগু বলতে?
ইতিমধ্যে আর একজনের আগমন । চান্স না নিয়ে ইংরেজীতেই বললাম :- আপনার আপার বার্থ না লোয়ার ?
আমার লোয়ার । কিন্তু, কেন ?
কারণটা বলতেই সানন্দে রাজী হলো বয়সে নবীন ছেলেটি ।
একে একে অন্য কুশীলবদের আগমন ।
ট্রেন ছেড়ে দিল ।
আরম্ভ হলো আড্ডা ।
নবীন ছেলেটি ভূটানের পারো যাবে । ওখানেই কাজ করে, পেশায় এঞ্জিনিয়ার । আপাত গন্তব্য হাসিমারা । ওখান থেকে ফুন্টসোলিং, তারপর গাড়ী করে, পারো । ওয়ার্ক পারমিট আছে, তাই ফুন্টসোলিংয়ে নতুন করে ঝামেলা নেই ।
কথাবার্তা ইংরেজীতেই হচ্ছিল । এর মধ্যে, তেলুগু ভদ্রলোকটি তাঁর মাতৃভাষায় শুরু করলেন আমার সঙ্গে আড্ডা।
বললেন :- ইংরেজীতে পোষাচ্ছে না ।
আমারও ঝটিতি উত্তর :- আমারও কি পোষাচ্ছে ? সব মনে মনে অনুবাদ করাটা , চাট্টিখানি ব্যাপার নাকি ? চলুন তেলুগুতেই কথা বলি । তেলুগু বিড্ডা ( তেলুগু লোক) বলে কথা ।
অবাক হয়ে দেখলাম, সেই নবীন ছেলেটিও আড্ডাতে যোগ দিল ।
জিজ্ঞেস করাতে বলল :- আমার বাড়ী ওডিশার ব্রহ্মপুর ( গঞ্জাম) । আমার মাতৃভাষা ওডিয়া, কিন্তু তেলুগুটাও ভালো বলতে পারি ।
আমাকে আর পায় কে ?
একজন বাঙালি ফুট কাটলেন :- এই সব বাঁদরের কিচির মিচির শুনে মাইরি কান ঝালাপালা হয়ে গেল !
উনি চোখ পাকিয়ে, আমাকে আর নিজেকে দেখিয়ে বললেন :- আমরা বাঙালি ।
শুনে ভদ্রলোক মিয়োনো বিস্কিটের মত হয়ে সকালের বাসী খবরের কাগজটা মুখস্ত করতে শুরু করলেন ।
চা এলো । ওরা আমায় এবং বৌকে খেতে অনুরোধ করলেন । আমি অরাজী ।
প্রশ্ন ধেয়ে এলো :- আরে আমরা আপনাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়াবো না । এই দেখুন- আমাদের পরিচিতি পত্র ।
কুণ্ঠিত হয়ে বললাম- সমস্যাটা সেখানে নয় । চা খেলেই সিগারেট খেতে ইচ্ছে করবে, আর সেটা খাওয়া যাবে না । এমন কি, টয়লেটে ঢুকে খেলেও প্রচুর টাকা ফাইন ।
হেসে প্রমোদ পণ্ডার ( ততক্ষণে নাম জেনে গেছি ) উত্তর :- চলুন তো, কোচ অ্যাটেনডান্টকে ম্যানেজ করতে পারি কিনা !
অগত্যা, কোচের দরজা ঠেলে টয়লেটের সামনে বসা অ্যাটেনডান্টকে জিজ্ঞেস করল:- প্রমোদ ।
অ্যাটেনডান্ট দোনোমোনো করে বলল :- দরজা খুলে রেখে খেতে পারেন, তবে তিনটে সর্ত ।
কি কি?
এক । অন্য পাসেঞ্জার এলে আপনাদের সিগারেট ফেলে দিতে হবে
দুই । আমাকেও একটা সিগারেট দেবেন
তিন :- এই প্রথম এবং শেষবার ।
প্রমোদ বলল :- আরে ভাই, রাতের খাবার পর আর সকালে টিপিনের পর ?
ঠিক আছে । তবে আর খাবেন না !
মহা আনন্দে সুখটান দিয়ে ফিরে এলাম ।
তারপর?

পরে লিখবো

No comments: