Saturday, March 21, 2015

মনের ছিটমহল -৪





মার্চ মাস প্রায় শেষ । অল্প অল্প ঠাণ্ডা হাওয়া । নামেই বসন্ত । অজানা আতঙ্ক সারা সাতক্ষীরা শহর জুড়ে ।

তবু সূর্য ডুবছে । মনে হলো অনিচ্ছা সহকারেই চলে যাচ্ছে অস্তাচলে । একটা মলিন আলো জ্বলে উঠলো ঘরে ।

হাসান সাহেবের ঋজু আশী বছরের দেহটা থেকে চল্লিশ ওয়াটের আলো ঠিকরচ্ছে বলে মনে হলো ।

দূরের মসজিদ থেকে এষার আজান ভেসে আসছে ।  ম্রিয়মান সেই আজান । মনে হয় কেঁদে যাচ্ছে পরিবার পরিজনদের মৃত্যুতে ।

একটা থমথমে আবহাওয়া, সারা ঘর জুড়ে ।

হাসান সাহেব, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন :- যাই, এষার আজান আদা করে আসি ।

জলিল ভাই বললেন – আব্বা খুব ধর্মপ্রাণ মানুষ ! পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদা তো করেনই, উপরন্তু ভোরবেলা, মানে আপনারা যাকে ব্রাহ্মমুহূর্ত বলেন – সেই সময়ে তাহাজ্জুত্ নামাজও আদা করেন । খুব কম লোকই করেন এটা ।

পরিমলদা বললেন – তাহলে, মোট ছটা  ! বাকি নামাজগুলো কি ?

ফজর, জোহর, আসর, এষা, মগরীব  ।


এই সময় একজন ঢুকলেন । গায়ে চাদর আর পরণে ধুতি । গলায় কণ্ঠিমালা ।

আমাদের দেখেই বললেন :- নমস্কার মেহমানরা ।  বড় সাহেব, ডাকি পাটাচেন আপনাদের রান্না করি দেবার জন্য । আমি গোবিন্দ । জেতে বৈরাগী  !
মানে ?

বৈরাগী হলো গে- মড়া নিয়ে যাবার সময়, যারা আগে আগে যায় খোল কত্তাল বাজিয়ে ।

হিন্দুও কমি আসিছে । আর বাকী বৈরাগীরা তো  চলে গ্যাসে দেশ ছাড়ি ইণ্ডিয়াতে ।

বড় সাহেব আমারে রাখি দেসেন । দু বিঘা জমিও খয়রাত করসেন আমারে । ওই খান সেনাদের হাত থেকেও বাঁচাচেন ।

উনি না থাকলে আমার বড় মাইয়াটারে খুবলে খাইতো খান সেনারা । মাগো !
জলিল ভাই ইতি মধ্যে আবার ঢুকলেন  ঘরে ।
আসলে, আমার আম্মী নাই । আমার বৌটারও শরীল খারাপ । বিছানা থেকে উঠতেই পারছে না । রান্না করার কেউ নাই ।  গোবিন্দ ভাই দুবেলা রেঁধে দিয়ে যাচ্ছে, এই কয় দিন ।
আব্বা তাই একটু মজা করেই বলেছেন । তাছাড়া, হিন্দুরা মেহমান হয়ে এলে আমাদের সিধে দেওয়াই রেওয়াজ ।

ব্রাহ্মণরা তো ছোট লোক দের হাতে খেতো না । তাই ওরা সিধে দিতো ।

ছোট লোক শব্দটা কানে খট্ করে লাগলো ।

কিন্তু, তার তো দরকার ছিল না । আমরা তো দুপুরে হোটেলেই খেয়েছি । সেখানেই খেতাম ।

পাগল নাকি ? রাতে আর সেই হোটেল খোলা পাবে না ভাই ।  খান সেনারা আসার পর থেকেই স্বাভাবিক জীবন বন্ধ সব । আস্তে আস্তে হবে ।  শুনছি শ্যাখ সাহেবের কুনো খবর নাই । হারামীরা মাইরাই ফালালো কিনা কে জানে !
++++++++++++++

(চলবে)



No comments: