মার্চ মাস প্রায় শেষ । অল্প অল্প ঠাণ্ডা হাওয়া । নামেই বসন্ত । অজানা আতঙ্ক সারা সাতক্ষীরা শহর জুড়ে ।
তবু সূর্য ডুবছে । মনে হলো অনিচ্ছা সহকারেই চলে
যাচ্ছে অস্তাচলে । একটা মলিন আলো জ্বলে উঠলো ঘরে ।
হাসান সাহেবের ঋজু আশী বছরের দেহটা থেকে চল্লিশ
ওয়াটের আলো ঠিকরচ্ছে বলে মনে হলো ।
দূরের মসজিদ থেকে এষার আজান ভেসে আসছে । ম্রিয়মান সেই আজান । মনে হয় কেঁদে যাচ্ছে পরিবার পরিজনদের মৃত্যুতে ।
একটা থমথমে আবহাওয়া, সারা ঘর জুড়ে ।
হাসান সাহেব, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন :- যাই, এষার আজান আদা করে আসি ।
জলিল ভাই বললেন – আব্বা খুব ধর্মপ্রাণ মানুষ ! পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদা তো করেনই, উপরন্তু ভোরবেলা, মানে আপনারা যাকে ব্রাহ্মমুহূর্ত বলেন – সেই সময়ে তাহাজ্জুত্ নামাজও আদা করেন । খুব কম লোকই করেন এটা ।
দূরের মসজিদ থেকে এষার আজান ভেসে আসছে । ম্রিয়মান সেই আজান । মনে হয় কেঁদে যাচ্ছে পরিবার পরিজনদের মৃত্যুতে ।
একটা থমথমে আবহাওয়া, সারা ঘর জুড়ে ।
হাসান সাহেব, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন :- যাই, এষার আজান আদা করে আসি ।
জলিল ভাই বললেন – আব্বা খুব ধর্মপ্রাণ মানুষ ! পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদা তো করেনই, উপরন্তু ভোরবেলা, মানে আপনারা যাকে ব্রাহ্মমুহূর্ত বলেন – সেই সময়ে তাহাজ্জুত্ নামাজও আদা করেন । খুব কম লোকই করেন এটা ।
পরিমলদা বললেন – তাহলে, মোট ছটা ! বাকি নামাজগুলো কি ?
ফজর, জোহর, আসর, এষা, মগরীব ।
এই সময় একজন ঢুকলেন । গায়ে চাদর আর পরণে ধুতি । গলায়
কণ্ঠিমালা ।
আমাদের দেখেই বললেন :- নমস্কার মেহমানরা । বড় সাহেব, ডাকি পাটাচেন আপনাদের রান্না করি দেবার জন্য । আমি গোবিন্দ । জেতে বৈরাগী !
আমাদের দেখেই বললেন :- নমস্কার মেহমানরা । বড় সাহেব, ডাকি পাটাচেন আপনাদের রান্না করি দেবার জন্য । আমি গোবিন্দ । জেতে বৈরাগী !
মানে ?
বৈরাগী হলো গে- মড়া নিয়ে যাবার সময়, যারা আগে আগে যায় খোল কত্তাল বাজিয়ে ।
বৈরাগী হলো গে- মড়া নিয়ে যাবার সময়, যারা আগে আগে যায় খোল কত্তাল বাজিয়ে ।
হিন্দুও কমি আসিছে । আর বাকী বৈরাগীরা তো চলে গ্যাসে দেশ ছাড়ি ইণ্ডিয়াতে ।
বড় সাহেব আমারে রাখি দেসেন । দু বিঘা জমিও খয়রাত করসেন আমারে । ওই খান সেনাদের হাত থেকেও বাঁচাচেন ।
উনি না থাকলে আমার বড় মাইয়াটারে খুবলে খাইতো খান সেনারা । মাগো !
জলিল ভাই ইতি মধ্যে আবার ঢুকলেন ঘরে ।
আসলে, আমার আম্মী নাই । আমার বৌটারও শরীল খারাপ ।
বিছানা থেকে উঠতেই পারছে না । রান্না করার কেউ নাই । গোবিন্দ ভাই দুবেলা রেঁধে দিয়ে যাচ্ছে, এই কয়
দিন ।
আব্বা তাই একটু মজা করেই বলেছেন । তাছাড়া, হিন্দুরা
মেহমান হয়ে এলে আমাদের সিধে দেওয়াই রেওয়াজ ।
ব্রাহ্মণরা তো ছোট লোক দের হাতে খেতো না । তাই ওরা
সিধে দিতো ।
ছোট লোক শব্দটা কানে খট্ করে লাগলো ।
কিন্তু, তার তো দরকার ছিল না । আমরা তো দুপুরে হোটেলেই খেয়েছি । সেখানেই খেতাম ।
পাগল নাকি ? রাতে আর সেই হোটেল খোলা পাবে না ভাই । খান সেনারা আসার পর থেকেই স্বাভাবিক জীবন বন্ধ সব । আস্তে আস্তে হবে । শুনছি শ্যাখ সাহেবের কুনো খবর নাই । হারামীরা মাইরাই ফালালো কিনা কে জানে !
ছোট লোক শব্দটা কানে খট্ করে লাগলো ।
কিন্তু, তার তো দরকার ছিল না । আমরা তো দুপুরে হোটেলেই খেয়েছি । সেখানেই খেতাম ।
পাগল নাকি ? রাতে আর সেই হোটেল খোলা পাবে না ভাই । খান সেনারা আসার পর থেকেই স্বাভাবিক জীবন বন্ধ সব । আস্তে আস্তে হবে । শুনছি শ্যাখ সাহেবের কুনো খবর নাই । হারামীরা মাইরাই ফালালো কিনা কে জানে !
++++++++++++++
(চলবে)
No comments:
Post a Comment