Friday, March 20, 2015

মনের ছিটমহল -৩






 আমার জীবনটা বড়ই অদ্ভূত, জানেন ? কোনোদিন কোথাও থিতু হতে পারি নি । এমন কি, মা- বাবার সাথেও না !

এই জীবন সায়াহ্নে এসে হিসেব করে দেখছি, মা- বাবার সঙ্গে থেকেছি কুল্লে  ষোলো বছর । এটাও কিস্তিতে ।

প্রথম বারো বছর টানা, রাজশাহী ( কিছুই মনে নেই ঠিক ভাবে বলতে গেলে) বেনারস, মহিষাদল, পারলাখেমুণ্ডি
তারপর কলেজ জীবন ( পারলাখেমুণ্ডি আর বালেশ্বর মিলিয়ে) চার বছর ।

কটকের র‌্যাভেনশ্যতে পড়েছি- ওয়াই এম সি এ তে থেকে ।

প্রাথমিক শিক্ষা বেনারসে । সেটার কথা ঠিক মনে নেই । তারপর স্কুলের শিক্ষা মামার বাড়ী, বাঘাযতীন কলোনি ( এখন “জাতে” উঠে – পল্লী) থেকে ।

পাতি বাংলা স্কুল – বিজয়গড় শিক্ষানিকেতন ।

 তারপর, খালি দৌড় দৌড় ! মাঝে মধ্যে মা- বাবার সঙ্গে টানা  থেকেছি কখনও ৪-৫ দিন, কখনও বা এক দিন ।

যদি না হতো, তবে দেখে লিতাম !

ও ! ওই ঘটনাটা বলি নি না ?

মালদায়, তখন ইংরেজবাজার পৌরসভায় ড্রাইভার নেওয়া হবে । পুরপিতা, চেনা শোনা এবং বাংলার অধ্যাপক ।
কথায় কথায় বলতেন – অপদার্থ ।

পরে বিধানসভার  সদস্য হয়েছিলেন । নাম বললে, হয়তো মালদার ( মানে- মালদহ বা ইংরেজবাজার, টাকাওয়ালা বড়লোক নয়) পুরোনোরা চিনতে পারবেন।  প্রয়াত প্রভাত আচার্য্য । বড় ভালো মানুষ ছিলেন- মনের দিক থেকে ।

 যখন কোলকাতায়, সেবার ট্রাম উঠিয়ে দেবার কথা হয়েছিল, তখন তিনি ইংরেজবাজার শহরে বাতিল ট্রামগুলো এনে চালানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন  বিধানসভায়
প্রায় ১০ মিনিট ধরে জ্বালময়ী বক্তৃতা দিয়ে বিধানসভা সরগরম করে রেখেছিলেন
 কু লোকে বলে ঐ ১০ মিনিটে নাকি ১০০ বার অপদার্থ বলায়, বিধান সভার রেকর্ড থেকে ঐ শব্দগুলো বাদ গেছিল ।

মাণিকের বাবা এসে ধরল – ওর ছেলেকে পৌরসভায় ড্রাইভার হিসেবে ঢুকিয়ে দিতে হবে ।

অনুরোধে লোকে ঢেঁকি গেলে । তা, এটা তো চাকরীর ব্যাপার ।
গেলাম প্রভাতদার কাছে ।

অপদার্থ ! আমার কি করার আছে ?

না, মানে আপনি বললে চাকরীটা হয়ে যাবে !

অপদার্থ !  চেয়ারম্যান বললে সব সময় হয় না !

না না- এসব চালাকি করবেন না ! আপনি আমাদের শহরে ট্রাম চালাবেন বলছেন, আর এতো সামান্য চাকরি  ! কি যে বলেন !

অপদার্থ ( এবারে গ্যাস খেয়ে আকাশে), আচ্ছা ওকে ইন্টার ভিউতে পাঠিয়ে দেবে অমুক দিন, অমুকটার সময় ।

মাণিক তো গেল যথা সময়ে ।

বেরিয়ে এলো কাঁচুমাচু মুখ করে ।

কি রে ! কি প্রশ্ন করল ?

 একটাই তো পুছ করল !
কি ?

ফুয়েল মানে কহ ।

তুই কি বললি ?

 সানকিয়ে ( ভয় পেয়ে) চুপ করে ছিলাম । আচ্ছা, রামকিসনোদা – ফুয়েল মানে কি ?

তেল ! এটা বলতে পারলি না ?

ওওওওওওওওওওওও ত্যাল ? শা........... জানলে দেখে লিতাম্ !


কি যে দেখতো, কে জানে ! তবে চাকরিটা হয়েছিল । ওর ছেলেমেয়েরা এখন ভালো লেখাপড়া শিখে প্রতিষ্ঠিত । মাঝে মাঝেই ফোন করে খবরাখবর নেয় । অনুরোধও করে মালদা যেতে । খরচ –খরচা সব ওর ।

 যা বলছিলাম্ ( বুড়ো হওয়াতে খেই হারিয়ে ফেলি ) !

এই রাজনৈতিক নেতারা দেশটাকে – দেখেই লিয়েছিলেন ।

( চলবে)



No comments: