ক্ষেতু বাগচী, হাঁফাতে হাঁফাতে ঢুকলেন চন্দন
ডাক্তারের চেম্বারে। স্বদেশী তারক মোত্তির আজ দিশি খুঁজেই পান নি! তাই, বাধ্য হয়ে ওই ফরেন খেয়ে এসেছেন। মেজাজটাও বেশ ফুরফুরে !! একটু খুঁতখুঁতি ছিল, ওই ফরেন খাওয়া নিয়ে! তবে, দোকানদার বলেছে- এই সব তো এখন
স্বাধীন ভারতেই তৈরী হয়! তা হলে আর চরিত্রভ্রষ্ট কি করে হবেন, তারক দা!!!! তাই তারক মোত্তিরের আজ ফুরফুরে মেজাজ!
চন্দন বলল:- কি ব্যাপার, ক্ষেতুদা? হাঁফাচ্ছেন কেন!!! রঘু ডাকাত, থুড়ি মাতালের পাল্লায় পড়েছিলেন
নাকি?
এ্যাই!!!!! মাতাল বলবে না চন্দন! খুব খারাপ হবে!!- তারক
মোত্তির গর্জে উঠলেন!
নাটু লাহিড়ী, সকালের বাসী খবরের কাগজটা
আদ্যপান্ত পড়ে , প্রির্ন্টাস লাইন মুখস্থ করতে করতে ভুরু উঁচু করে
বললেন।
-তা হলে, “চা” তাল বলাই ভালো আর মা-ও বেশ তাল পাবেন!
-সেটাই
বরঞ্চ ঠিক! তারক মোত্তিরের জবাব! আমরা তো
“ বল হরির” চায়ের নেশায় পাগল! তা সে ব্যাটাচ্ছেলে গেল কোথায়? এখনও তো
চায়ের পায়েসটা দিল না! ওফ্! কাল যা চিনি দিয়েছিল, খালি
তেজপাতাটা দ্যায় নি, চায়ে!!
ক্ষেতুদা বললেন- আমার মাথায় জঙ্ঘা হয়েছে!!!!!
সবাই সমস্বরে চীৎকার করে উঠল- কি বললেন, ক্ষেতুদা? মাথায় জঙ্ঘা?
জঙ্ঘা মানে তো উরুসন্ধি!- নাটু লাহিড়ী বিড়বিড় করে উঠলেন।
-নাহে!
সত্যি সত্যি মাথায় জঙ্ঘা হয়েছে আমার! মানে ব্রেনে জং ধরে ঘা হয়ে গেছে! যা কাণ্ড
হলো আজ!
- কি হয়েছে, ক্ষেতুদা?
- আর বলো
কেন! বঙ্কা! ওই যে আমার জমিদার বন্ধু তপার ছেলে! অনেকদিন বাদে দেশে ফিরেছে! চিঠির
পর চিঠি দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কোনো উত্তর না পেয়ে আমার ছেলেকে ই-মেল করেছিল!
ছেলে সত্যি কথাটা বলতে পারে নি! উত্তরে বলেছিল- তুই দেশে একটু আয়! তারপর না হয় সব
কথা বলা যাবে।
-তারপর? তারপর?
- ছেলেকে
বলেছিলাম, বঙ্কা এলে সইয়ে সইয়ে সব খুলে বলবি! তারপর না হয় ও
দেশের বাড়ী যাবে! তা আজ বঙ্কা এসেছে! ছেলে সব খুলে বলল!
- কি বলল আর
কিভাবে বলল?
তা হলে শোনো ওদের কথাবার্তা! আমি বলে যাচ্ছি।
-আয় বঙ্কা!
- আরে বল তো, বাড়ীর সব কে কেমন আছে!
- সবাই
ভালো! তবে তোদের ওই বুড়ো ঘোড়াটা মারা গেছে!
- সেকি??????? কি করে!!!!
- আরে! ওই
যে আমডালটা ভেঙ্গে পড়লো যে ওর মাথার ওপর!
- আমডালটা
ভেঙ্গে পড়ে মারা গেল? কি করে সম্ভব এটা!
-ঠিক, তা নয়! তবে ওই ফলন্ত আমগাছটা ঝড়ে ভেঙ্গে পড়াতে মাসীমা মারা গেলেন যে!
- কি! মা
মারা গেছে?????
- আরে, মেসোমশাই চলে যাওয়ার পর, মাসীমা যখন তখন বাগানে চলে যেতেন
যে।
- এ্যাঁ!!!
বাবা মারা গেছে!
- তা!
মেসোমশাই কি করবে!
- বৌমা আর
নাতি একদিনে কলেরায় মারা গেলে শোক সহ্য হয়! তুইই বল না!
- হায়! হায়!
সব মারা গেছে আর তুই বলছিস- সব খবর ভালো?
- দ্যাখ, বাবা বলেছিল, তোকে সব সইয়ে সইয়ে বলতে, তাই আর
কি!
- হম্! তা
হলে, আর আমার দেশে গিয়ে কি হবে?
- হ্যাঁ!
গিয়ে কাজ নেই। সবই তো তোর জ্যাঠা, কাকারা দখল করে নিয়েছে!
- তা হলে আর
কিছু করার নেই! তুই আমাকে একটু খেতে দে! খেয়ে বিশ্রাম করে দমদমাতে গিয়ে ফিরতি
প্লেন ধরি!
- হ্যাঁ!
তাই বরং কর!
সব শুনে, তারক মোত্তির বললেন:-
সত্যি! মাইরী! আমারও মাথায় জঙ্ঘা হয়ে গেল! নেশাটাও গেল! যাই
বাড়ী যাই!
No comments:
Post a Comment