মনুয়া কলা (
কাঁটালি ) আমাদের পুজোয় লাগে, আর মালভোগ (মর্তমান) কলা খাইতে - বচ্চন থাপা গাড়ীর
ষ্টীয়ারিং হাল্কা ঘুরিয়ে একটা ছাগলকে পাশ কাটাল ।
যাচ্ছিলাম ডুয়ার্সের কালচিনিতে, এক সদ্য পরিচিত বন্ধুর
অনুরোধে । বচ্চন নিয়ে যাচ্ছিল ওখানে । প্রথমে ভেবেছিলাম, নামটা বোধহয় বানানো, আসল
নামটা অন্য । কিন্তু পরে জানলাম, ওটাই আসল নাম। পরিচিত বন্ধু, গাড়ী পাঠিয়েছিলেন
আমাদের মথুরা চা বাগান থেকে কালচিনি নিয়ে যাবার জন্য ।
চিলাপাতার ফরেষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি । চিকন অ্যাসফল্টের রাস্তা চাকার নীচে গড়াচ্ছে ।
বচ্চনের লাইভ ধারাবিবরণী । নিজে ড্রাইভারি করে, বউ চা বাগানে পাতা তোলার
ওয়ার্কার । ছেলে ফার্ষ্ট ইয়ারে পর্যন্ত পড়ে, এখন আলিপুরদুয়ারের একটা রেষ্টুরেন্টে
ওয়েটারের কাজ করে ।
মেয়ে কোনো রকমে মাধ্যমিক পাশ করে এখন একটা নাচের ইস্কুল
চালায় ।
বচ্চনের দুঃখ- কেউই পড়াশোনাটা ঠিক ভাবে করল না । তবে, গর্ব
ভরে বলল- আমরা কেউই বসে নেই । টাকা রোজগার সৎ ভাবে করি ।
কালচিনি ঢুকতেই একটা লেভেল ক্রসিং । পার হয়ে ডান দিকে ঘুরে
যেতে হয় বন্ধুর বাড়ী ।
ষ্টেশনের ধার ঘেঁসে বাজার । একটা এপিয়েল, আর একটা বিপিয়েল – এই দুভাগে বিভক্ত বলে
জানালো- বচ্চন ।
বিপিয়েল বাজারে সব্জী মাছ সস্তা, কারণ ওখানে একটু কম সরেস
জিনিস বিক্রি হয় ।
সেদিন নেপালিদের পরব ছিল । অষ্টমীর দিন ও রাত থেকে শুরু হয়ে
দশমী পর্যন্ত চলে । পরবটার নাম – ফুলমতিয়া ।
তাই এপিয়েল,
বিপিয়েল বাজারে – মনুয়া কলা ৫ টাকা পিস ।
সন্ধে বেলা মথুরাতে ফেরার সময়, বচ্চন বলল – ও চোখে কম দেখে,
রাতে । আর বলল কখন- আমরা যখন চিলাপাতা পার হচ্ছি !
ওই অন্ধকার ঘন জঙ্গলে
একটা কাঠের ব্রীজে দুজন ফরেষ্ট গার্ড । একজনের হাতে বন্দুক দেখলাম ।
হাতীরা কাঠের ব্রিজে চড়ে না । বচ্চনের আরও যোগ :- এখন হাতী বেরুতে পারে।
সন্ধে বেলা ওদের জল খাবার সময় ।
আমার শুরু হলো হৃৎকম্প । অন্ধকারে একটা কালো ছায়া দেখলাম
মনে হল । বচ্চনের অভয় বাণী- ওটা হাতী নয় ।
আমার বুক ধরফড় করছেই । একে বচ্চন ভালো চোখে দেখে না রাতে,
তার ওপর হাতী ! ভালোবেসে, গাড়ীতে একটা টোকা দিলেই........
বচ্চনের উদাস কথা :- এলে আসবে । লাইট জ্বালিয়ে বসে থাকবো ।
গাড়ী এগোতে এগোতে
জঙ্গল পার হয়ে মথুরা বাগানে ।
======
No comments:
Post a Comment