Friday, October 31, 2014

লো পাওয়ার ট্র্যান্সমিটার




১৯৮২ সাল !

সে সময়, আমি মালদায় ।  শহরের ঠিক বাইরেই রবীন্দ্রভবন । সেখানে দেখলাম, একটা ছোট টাওয়ার বসানো হচ্ছে , ভবনের মাথায় ।

মাটিতে মাছ ধরার জালের মত, কোকাকোলার  একট হাফ সার্কেল । সেটাই নাকি অ্যান্টেনা । ভেতরের দিকে উল্টো করে কি সব যন্ত্র লাগানো ।

মালদায় যে টেলিভিশন সেট ছিল না, তা নয় । তবে, বুষ্টার অ্যান্টেনা দিয়ে বাংলাদেশ টিভি দেখা যেত ।

একটা হাল্কা ঝিরিঝিরি ভাব থাকতো বটে ছবিতে, তবে দূরের ছবি দেখা যাচ্ছে বলে উত্তেজনার বহরে, সেসব কেউ গায়ে মাখতো না ।

কিছু লোকের বাড়ী গিয়ে টিভি দেখতাম । একবার বিশ্বকাপ ফুটবলও দেখেছিলাম, একজন ডাক্তার বাবুর বাড়ী ।

কোন সুদূর দেশে খেলা হচ্ছে, আর মালদায় বসে সেটা সরাসরি দেখছি, এটা ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়েছিল ।

কুল্লে তিন রকম কোম্পানীর সেট পাওয়া যেত, তখন মালদায়। একটা ওয়েবল‌্, আর একটা ভারত টিভি আর একটা আপট্রন ।

সাদা কালো বেশীর ভাগই ওয়েবল্ সেট আর আপট্রন, আর রঙীন  ছিল ভারত টিভি ।

ভারত টিভির আবার সাটার ডোর ছিল ।

এও শুনলাম, বরকত সাহেবের বিশেষ নির্দ্দেশে  এই এল.পি.টি. স্টেশন তৈরি হচ্ছে দিল্লির দূরদর্শন দেখানোর জন্য । বাংলা দূরদর্শন আসবে না । তাই সই লোকের ।

এই রকম সময়ে,  একদিন নেতাজী রোডের রোগমুক্তি বলে একটা দোকানে ( আমার কোম্পানির ষ্টকিষ্ট) বসে আছি, সেই সময় দেখি একজন রিক্সা করে একটা বিশাল কার্ডবোর্ডের বাক্স নিয়ে যাচ্ছে । সাথে অ্যালুমিনিয়ামের কিছু সরঞ্জাম ।

রোদ্দুরে সে গুলো চকচক করছে । যে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছে, তার মুখে গর্বিত মুচকি হাসি ঝুলে  ।

আমার মফঃস্বলী কৌতুহলি মন ভরে গেল অনেক অজানা জিজ্ঞাসায় ।

জিজ্ঞেস করে জেনেছিলাম, সেইদিন থেকেই সম্প্রসারণ শুরু হবে মালদা শহরে আর দেখা যাবে, বারো কিলোমিটার ব্যাসার্ধের আকাশ পথে যে সব জায়গা পড়বে ।

চলে গেলাম দোকানে । মালিক, পরিচিত ননীদা । দোকানের নাম – বেতার । মূলত রেডিও আর টেপ রেকর্ডার বিক্রি হত সেখানে ।

ঢুকতেই, ননীদা বললেন – কি রামকিসনো বাবু  টিভি লিবেন না ?

কি রকম দাম?

স্যানকাচেন ( ভয় পাচ্ছেন) ক্যানে ? লিয়ে যান, মাসে মাসে দাম দিয়েন ।

কেন? আপনার টিভি বিক্রি হচ্ছে না ?

কি আর বুলবো বলেন ? লোকে কহছে, বরকত মিঞাঁর কারবার ! ওই যে দিল্লিতে কি সব খেলা হছে, ওগুলা হতেই ইষ্টিশন তুলে দিবে । তাই বেশী বিক্রি লাই ! এদিকে অনেক সেট কুম্পানি দিয়ে গেছে ।

তা হয় নাকি ? একবার বসলে, এটা আর উঠবে না । বরং আরও উন্নতি হবে ।

ঠিক কহছেন । লিয়ে যান একটা সাদা কালো টিভি । হাপনি কিনছেন দেখলে, অনেকেই লিবে ।

এখন কত দিতে হবে ?

হাজার টাকা হবে ?

তা হবে । কিন্তু, পরে ?

বাকী পাঁচ মাসে হাজার বা পাঁচশো করে দিয়েন । সব লিয়ে ছ হাজার টাকা !

বিরাশী সালে ছ হাজার টাকা বিশাল ব্যাপার । মাইনেই পাই মাত্র বারশো টাকা, টিএ বিল থেকে ম্যানেজ করে মেরেকেটে আরও শ চারেক কি পাঁচেক টাকা ।

তখন কিছু না বলে, ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখি ষোলশ টাকা মত আছে ।  হিসেব করে দেখলাম- দু চারদিনের মধ্যেই টি এ বিলের টাকা ঢুকবে ।

মাথায় খুন চেপে গেল ।

 হাজার টাকা তুলে নিলাম।

অতএব চালাও পানসী বেলঘরিয়া !

ননীদাকে হাজার টাকা দিয়ে বললাম- – পাঠিয়ে দিন বাড়ীতে টিভি সেট্  । বুষ্টার থাকবে তো ?

সব থাকবে, ঘাবড়াছেন কেনে ?

বাড়ীতে গিয়ে শবরীর প্রতীক্ষা । ছেলেরা স্কুলে । সারপ্রাইজ দেবো বলে, বৌকেও কিছু বলি নি ।

অবশেষে তিনি এলেন । সব ঠিকঠাক করে বসার ঘরে টিভি ফিট হলো ।  বুষ্টারের জন্য একটা বেকেলাইটের চেঞ্জ ওভার ।

এক দিক ওল্টালে বুষ্টার দিয়ে বাংলাদেশ টিভি, অন্য দিকে দিলে দিল্লি দূরদর্শন ।

আমার বৌ বলল :- এসব তো পরের বাড়ীতে থাকে, আমাদের বাড়ীতেও এলো ?

একে একে  আমার দুই ছেলে বাড়ী ফিরল । বাড়ীওয়ালা হেমেনদার ছেলে- মনোজ আর বাপী আমার বসার ঘরে বসেই আছে ।

যারা স্কুল থেকে ফিরে, খিদেয় ছটফট করে, তারা আজ সব ভুলে গেছে উত্তেজনায় ।

তাদের বাবাদেরও একই দশা ।

দিল্লি দূরদর্শন শুরু হবে সন্ধে সাতটায় । তাই বাংলাদেশই সই ।

বিভিন্ন খবর দেখতে দেখতেই অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ । চেঞ্জ ওভার করতেই দিল্লি দূরদর্শনের লোগো ।

কিছু পরেই শুরু হলো এশিয়ান গেমসের খেল্, মাঝে খবর ।

==========
দিনটা ৩১ শে অক্টোবর ১৯৮৪ ।

সেদিন রাতে আমি কোলকাতায় আসবো, কোম্পানির মাসিক মিটিংয়ে । সকাল সাড়ে নটাতেই বসে গেলাম, কিছু পেপার ওয়ার্কস সারতে ।

পৌনে দশটা হবে- হঠাৎ শুনি রাস্তা দিয়ে একজন মাইকে বলতে বলতে যাচ্ছে – ইন্দিরা গান্ধী – গুলি বিদ্ধ ।

বেরিয়ে এলাম ।

রাস্তায় প্রচণ্ড ভীড় । পুলিস এসে মাইক বন্ধ করে  লোকটকে ধরে নিয়ে গেল । আমি একটা রিক্সা নিয়ে চললাম – রেষ্ট হাউসের দিকে ।

চারিদিকে উদভ্রান্ত অবস্থা । নানা গুজব ।

শুনলাম – ইন্দিরার হত্যাকারীরা নাকি শিখ । হাইওয়েতে ধরে ধরে লরী থেকে শিখদের নামিয়ে  মারা হচ্ছে ।

কয়েকজন মিলে দৌড়লাম- মঙলবাড়ী গুরুদোয়ারার কাছে ।

এদিকে গুরুদোয়ারাতে ঘন ঘন ইট আর পাথর ছোঁড়া অব্যাহত ।

আমরা হতভম্ভ । কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না । ওই জনতাকে কিছু বলতে যাওয়া মানে মার খাওয়া ।

ভাগ্য ভালো । সেই সময়েই কিছু লোক এসে এদের থামানোর চেষ্টা করল ( পরে শুনেছিলাম – বরকত সাহেব টেলিফোনে নির্দ্দেশ পাঠিয়েছিলেন , যাতে গণ্ডগোল হলে রোখা হয়) ।

 একটু দূরের স্থানীয় বি এস এফ ক্যাম্প  থেকেও বেশ কিছু জোওয়ান চলে এল ।

সবাই মিলে চেষ্টা করাতে পরিস্থিতি অনেকটা আয়ত্বে । জখম শিখদের তুলে মালদা সদর হসপিটাল ।  তারা জানেও না – কি জন্য তারা মার খেয়েছে বা খাচ্ছে ।

বিকেলে বাড়ী ফিরে এলাম । সামনের পোষ্ট আপিস থেকে আমার বস হেমেনদার বাড়ীতে ট্রাংক কল বুক করে অনন্ত প্রতীক্ষায় ।

অবশেষে পেলাম লাইনটা । ক্ষীণ আওয়াজ ভেসে এলো হেমেনদার স্ত্রীর । বললেন – এখনও বাড়ী ফেরে নি । কোলকাতার রাস্তা ঘাটের অবস্থা খুব খারাপ ।

বললাম :- বাড়ী ফিরলে বলবেন, এই অবস্থাতে আমি আর কোলকাতা যাচ্ছি না ।

লাইন কেটে গেল ।

টিভিতে ততক্ষণে বলা হচ্ছে- ইন্দিরা গান্ধীকা নিধন ..............................।

শিউরে উঠে টিভি বন্ধ করেছিলাম ।

Thursday, October 30, 2014

উহ্যনাম পণ্ডিত

আজকাল, ভোরের দিকে শরীরটা শিন শিন করে অল্প ঠাণ্ডা ঠাণ্ডায় । কুয়াশা না পড়লেও, বেশ একটা মায়াবী পরিবেশ ।

গলির ঢোকার মুখটাতে, কালভার্ট নতুন করে তৈরি হয়েছে- হরির দোকান ঘেঁসে । একটা ক্রংকিটের স্ল্যাব জোগাড় করে, তার নীচে ইট দিয়ে, দোকানের সামনে বসার জায়গা তৈরি করেছে হরি ।

ষ্টোভে সাঁ সাঁ করে জল ফুটছে । এখনও সে রকম চাতাল রা আসে নি ।

নাগের বাজারের দিক থেকে রিক্সা করে এসে, একজন  নামলেন, দোকানের সামনে ।

সায়েবী পোষাক পরণে, তবে পুরোনো ধাঁচের । কলারটা উঁচু আর সেই কলারে বাঁধা আছে মোটা টাই । চোখে সেই আদ্যিকালের গোল গোল চশমা ।  বেশ রাজপুত্তুর টাইপ চেহারা ।

বসার জায়গা দেবেন প্লিজ ! অনুরোধ করলেন - রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে । স্বরটা মনে হলো ব্যারিটোন ভয়েস ।

সরে গিয়ে বসার জায়গা করে দিলাম । ভদ্রলোকের চেহারাটা বড়ই পরিচিত তবে ঠিক কোথায় দেখেছি- মনে করতে পারছি না !
ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলাম- স্যার ! ( সম্ভাষণটা আপনা আপনি চলে এলো মুখে) আপনাকে তো এই পাড়ায় দেখিনি ! নতুন এলেন বুঝি ?

নাহে ! আমি ঘুরে ঘুরেই বেড়াই আজকাল । থাকি একটা অজানা জায়গায়, তবে মাঝে মাঝে আসি কোলকাতায় ।

বুঝলাম না স্যার !

সাগর যেথা লুটিয়ে পড়ে নতুন মেঘের দেশে
আকাশ-ধোয়া নীল যেখানে সাগর জলে মেশে।
মেঘের শিশু ঘুমায় সেথা আকাশ-দোলায় শুয়ে-
ভোরের রবি জাগায় তারে সোনার কাঠি ছুঁয়ে।

এই হলো আমার দেশ ।

 কবিতাটা বেশ চেনা চেনা লাগছে, তা স্যার, আপনার নামটা ?

উহ্যনাম পণ্ডিত !

নামটা উহ্য আবার পণ্ডিত ? আমার মুখটা হাঁ হয়েই রইল ।

হেসে আবার পদ্য আউড়ালেন :-

এক যে রাজা”–”থাম্ না দাদা,
রাজা নয় সে, রাজ পেয়াদা৷
তার যে মাতুল”–”মাতুল কি সে?—
সবাই জানে সে তার পিশে
তার ছিল এক ছাগল ছানা”—
ছাগলের কি গজায় ডানা?”
একদিন তার ছাতের পরে”—
ছাত কোথা হে টিনের ঘরে?”
বাগানের এক উড়ে মালী”—
মালী নয়তো! মেহের আলী৷
মনের সাধে গাইছে বেহাগ”—
বেহাগ তো নয়! বসন্ত রাগ৷

আমাকে ছাগল বললেন ? রাগই হলো আমার ।

উদাত্ত হেসে বললেন :- তোমাকে ছাগল বলবো কেন হে যে যা, সেটা কখনও বলতে নেই শাস্তরে মানা আছে ।

মুখটা গোমড়া হলো আমার ।

একি ! ওমনি গোমড়া থেরিয়াম হয়ে গেল ? হরি ! চা দাও এই বাবুকে ।  হরির চা খাও, তবেই মাথা খুলবে, বোয়েচ ?

গোমড়া থেড়িয়াম ? এটা আমার খুব চেনা ! সুকুমার রায়ের লেখা !

হ্যাঁ হ্যাঁ ! ওই ঢ্যাঙ্গা মাণিকের বাবা সুকুমার রায় ।

ঢ্যাঙ্গা মাণিক ?

আরে, তোমাদের সত্যজিৎ রায় ! ওই যে কমলবাবু ছিলেন না, সাউথ পয়েন্টের শিক্ষক, তিনি ওই নামেই ডাকতেন মাণিককে ।

কমল বাবু মানে, কমলকুমার মজুদার ?

হ্যাঁ রে বাবা ! সাউথ পয়েন্টে ছোট ক্লাসে ক্রাফ্ট পড়াতেন ।

আপনি এত জানলেন কি করে ?

জানার কথা নয়, তবে জেনেছি । মাণিকের তিন বছরের বয়সেই তো আমি গড়পার পার !

হ্যাঁ, সুকুমার রায় সত্যজিৎ বাবুর তিন বছর বয়সেই মারা গেছিলেন, সেটা শুনেছি ! আপনি সুকুমার রায়ের বন্ধু ছিলেন বুঝি ?

বন্ধু কি হে ? একেবারে হরিহর আত্মা । সুকুমারই তো উহ্য হয়ে গেছিল ।

কেন স্যার ?

হুঁকোমুখো হ্যাংলা
বাড়ী তার বাংলা, মুখে তার হাসি নাই, দেখেছ ?
নাই তার মানে কি ?
কেউ তাহা জানে কি ? কেউ কভু তার কাছে থেকেছ ?

ওঃ ! কিছুই বুঝতে পারছি না ।

আজ তারিখ কত ?

ত্রিশে অক্টোবর !

হুম্ ! মনে রেখ এই দিনটাতেই আমি জন্মেছিলাম ।

একটা রিক্সা ডেকে পদ্য আউড়াতে  আউরাতে চলে গেলেন :-

এইত সে দুপ'রে
'সে ওই উপরে, খাচ্ছিল কাঁচকলা চট্‌‌কে-
ওর মাঝে হল কি ?
মামা তার মোলো কি ? অথবা কি ঠ্যাং গেল মট্‌‌কে ?
হুঁকোমুখো হেঁকে কয়,
আরে দূর, তা তো নয়, দেখ্‌ছ না কি রকম চিন্তা ?
মাছি মারা ফন্দি এ,
যত ভাবি মন দিয়ে, ভেবে ভেবে কেটে যায় দিনটা।


ভেবেই পেলাম না- ভদ্রলোক কে?

Wednesday, October 29, 2014

সলিলকি- ৭



প্রকৃতির নিয়মে কোনো স্থানই শূন্য থাকে না । ফাঁকা হলেই হু হু করে বাতাস এসে ভরিয়ে দেবে জায়গা ।
রাজনীতিও প্রকৃতির নিয়মে চলে ।
বামেদের অন্তঃসার শূনতা ও দাম্ভিকতা, কংগ্রেসের দুর্নীতি এবং নড়বড়ে সংগঠন, তৃণমূলের অহং, গোবলয়ের অন্ধ বিশ্বাস, মিডিয়ার প্রচার সব মিলিয়ে মোদি এখন অপ্রতিরোধ্য বেগে এগিয়ে চলেছে ।
লোকে পুত্রশোক ভোলে- আর এতো গণহত্যা ! মানুষের মন এখন সব ভুলে একটা বিকল্প খুঁজছে- ধর্ম নির্বিশেষে ।
ফেসবুকে বীরত্ব ফলালে কি হবে, বাস্তব অন্য কথা বলছে ।
জীবনে অনেক উত্থান পতন, ভেসে যাওয়া, ডুবে যাওয়া দেখলাম, এটাও দেখছি ।
কথায় আছে চিতায় ওঠা বা কবরে যাওয়া পর্যন্ত শিখতে হয় ।
তাই শিখছি ।
ভাবছি আর কোনো রাজনৈতিক লেখা লিখবো না । ভাবাটা কার্যকর কতখানি করতে পারবো, নিজেরই সন্দেহ আছে । লিখলেও কাজ হয় না ।
আসলে হেরে যাচ্ছি- এই ভাবনাটাই কুরে কুরে খাচ্ছে ।
৭০ বছরের শেষে যেমন সোভিয়েতের লোকজন স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই পায় নি, আমার হাতে, সেরকম পেন্সিল পর্যন্ত নেই ।

এখনও চাই বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক, কিন্ত ..................................

স্বপ্নে ফেসবুক




আমরা সবাই ঘুমোলে স্বপ্ন দেখি- এটা কোনো নতুন কথা নয় । বিজ্ঞানীরা বলেন- গাঢ় ঘুমে স্বপ্ন দেখা যায় না, পাতলা ঘুমেই ঢুঁ মারে স্বপ্ন ।

আমি অত শত বুঝি না !  ঘুম কি দুধ নাকি, যে জল মেশালেই গাঢ় থেকে পাতলা হবে?

ঘুমকে তো আর বলা যায় না- এই দুটো বাটি দিলাম, একটা তে জল দাও আর একটাতে ঘুম । আমি নিজে মিশিয়ে ঠিক করে নেবো ঘুমের মেকদার ।

সে জন্যই বোধহয়, স্বপ্নের আনাগোনা । নানা রকম বিষয়, আমার স্বপ্নে আসে ! খুব কমন হল- চারিদিকে, আমি টয়লেট খুঁজে বেড়াচ্ছি, জলীয় পদার্থ ত্যাগ করবো বলে, একটাও পাচ্ছি না, শেষে ঘুম ভাঙে আর আমি তড়িঘড়ি উঠে যাই নিজের টয়লেটের দিকে ।  হাল্কা হয়ে, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি ।

গতকাল, যে স্বপ্নটা দেখলাম, সেটা এই প্রথম । জানি, অনেকেই বলবেন- দিনরাত ফেসবুক করার ফল- কিন্তু বিশ্বাস করুন, সেই ২০১০ সাল থেকে আমার ফেসবুকে পদার্পণ- সময় কাটাতে, তবু এই রকম স্বপ্ন জীবনে ঘুমের মধ্যে আসে নি ।

নগর কোতয়াল আমায় ধরে নিয়ে যাচ্ছে- ফেসবুকে কবিতা লেখার অপরাধে । আমি প্রাণপণে বোঝানর চেষ্টা করছি- জীবনে আমি কবিতা লিখি নি, তাও ভবী ভোলে না ।

শেষে বোধহয় দয়া হলো- একজনের । বলল – আপনি লেখেন না জানি, তবে পড়েন তো ?

সব পড়ি না, শুধু ভালো লাগা কবিতা গুলো পড়ি ।

কত দাম হতে পারে, ওই কবিতা গুলোর ?

কবিতার কি দাম হয় নাকি, ওগুলো তো অমূল্য ।

তাই তো আপনাকে ধরে নিয়ে যাওয়া !

মানে ?

যে কবিতা গুলো অমূল্য, তার দাম দেবার ক্ষমতা আপনার কোত্থেকে হলো- এটাই বিচার্য বিষয় !

ও বাবা ! তা হলে, রবি দাদুর কবিতা যে আরও অমূল্য !

আরে, তাঁকেওতো আমরা খুঁজছি !

কেন ?

ধরবো বলে ।

সে কি ?

হ্যাঁ ! আমাদের ধারণা যেটা, সেটা হলো ওনার নোবেলটা চুরি হলো কেন , মাত্র তো ভরি দুয়েক সোনা মেরে কেটে । আমার বৌয়েরই তো কুড়ি ভরি সোনা আছে আর সেটা কবিতা লিখে পায় নি ।

আমার বিড়বিড় শুনে পাশ থেকে এক রাম ঠ্যালা ।

শুনলাম- উনি জোর গলায় বলছেন, কি বকর বকর রে বাবা, রাতে একটু শান্তিতে ঘুমোবো তারও উপায় নেই ।

গলা শুকিয়ে গেছিল । জল খেয়ে আবার বিছানায় চলে গেলাম ।

আবার স্বপ্ন :- প্রসন্ন গোয়ালিনি হেসে হিন্দিতে বলছে
ল্লে ! দুধ কা দুধ, পানি কা পানি হো গয়া না ?












Saturday, October 25, 2014

খোসগপ্পো




ক্ষেতু বাগচী, হাঁফাতে হাঁফাতে ঢুকলেন চন্দন ডাক্তারের চেম্বারে। স্বদেশী তারক মোত্তির আজ দিশি খুঁজেই পান নি! তাই, বাধ্য হয়ে ওই ফরেন খেয়ে এসেছেন। মেজাজটাও বেশ ফুরফুরে !! একটু খুঁতখুঁতি ছিল, ওই ফরেন খাওয়া নিয়ে! তবে, দোকানদার বলেছে- এই সব তো এখন স্বাধীন ভারতেই তৈরী হয়! তা হলে আর চরিত্রভ্রষ্ট কি করে হবেন, তারক দা!!!! তাই তারক মোত্তিরের আজ ফুরফুরে মেজাজ!
চন্দন বলল:- কি ব্যাপার, ক্ষেতুদা? হাঁফাচ্ছেন কেন!!! রঘু ডাকাত, থুড়ি মাতালের পাল্লায় পড়েছিলেন নাকি?
এ্যাই!!!!! মাতাল বলবে না চন্দন! খুব খারাপ হবে!!- তারক মোত্তির গর্জে উঠলেন!
নাটু লাহিড়ী, সকালের বাসী খবরের কাগজটা আদ্যপান্ত পড়ে , প্রির্ন্টাস লাইন মুখস্থ করতে করতে ভুরু উঁচু করে বললেন।
-তা হলে, “চাতাল বলাই ভালো আর মা-ও বেশ তাল পাবেন!
-সেটাই বরঞ্চ ঠিক! তারক মোত্তিরের জবাব! আমরা তো
বল হরিরচায়ের নেশায় পাগল! তা সে ব্যাটাচ্ছেলে গেল কোথায়? এখনও তো চায়ের পায়েসটা দিল না! ওফ্! কাল যা চিনি দিয়েছিল, খালি তেজপাতাটা দ্যায় নি, চায়ে!!
ক্ষেতুদা বললেন- আমার মাথায় জঙ্ঘা হয়েছে!!!!!
সবাই সমস্বরে চীৎকার করে উঠল- কি বললেন, ক্ষেতুদা? মাথায় জঙ্ঘা?
জঙ্ঘা মানে তো উরুসন্ধি!- নাটু লাহিড়ী বিড়বিড় করে উঠলেন।
-নাহে! সত্যি সত্যি মাথায় জঙ্ঘা হয়েছে আমার! মানে ব্রেনে জং ধরে ঘা হয়ে গেছে! যা কাণ্ড হলো আজ!
- কি হয়েছে, ক্ষেতুদা?
- আর বলো কেন! বঙ্কা! ওই যে আমার জমিদার বন্ধু তপার ছেলে! অনেকদিন বাদে দেশে ফিরেছে! চিঠির পর চিঠি দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কোনো উত্তর না পেয়ে আমার ছেলেকে ই-মেল করেছিল! ছেলে সত্যি কথাটা বলতে পারে নি! উত্তরে বলেছিল- তুই দেশে একটু আয়! তারপর না হয় সব কথা বলা যাবে।
-তারপর? তারপর?
- ছেলেকে বলেছিলাম, বঙ্কা এলে সইয়ে সইয়ে সব খুলে বলবি! তারপর না হয় ও দেশের বাড়ী যাবে! তা আজ বঙ্কা এসেছে! ছেলে সব খুলে বলল!
- কি বলল আর কিভাবে বলল?
তা হলে শোনো ওদের কথাবার্তা! আমি বলে যাচ্ছি।
-আয় বঙ্কা!
- আরে বল তো, বাড়ীর সব কে কেমন আছে!
- সবাই ভালো! তবে তোদের ওই বুড়ো ঘোড়াটা মারা গেছে!
- সেকি??????? কি করে!!!!
- আরে! ওই যে আমডালটা ভেঙ্গে পড়লো যে ওর মাথার ওপর!
- আমডালটা ভেঙ্গে পড়ে মারা গেল? কি করে সম্ভব এটা!
-ঠিক, তা নয়! তবে ওই ফলন্ত আমগাছটা ঝড়ে ভেঙ্গে পড়াতে মাসীমা মারা গেলেন যে!
- কি! মা মারা গেছে?????
- আরে, মেসোমশাই চলে যাওয়ার পর, মাসীমা যখন তখন বাগানে চলে যেতেন যে।
- এ্যাঁ!!! বাবা মারা গেছে!
- তা! মেসোমশাই কি করবে!
- বৌমা আর নাতি একদিনে কলেরায় মারা গেলে শোক সহ্য হয়! তুইই বল না!
- হায়! হায়! সব মারা গেছে আর তুই বলছিস- সব খবর ভালো?
- দ্যাখ, বাবা বলেছিল, তোকে সব সইয়ে সইয়ে বলতে, তাই আর কি!
- হম্! তা হলে, আর আমার দেশে গিয়ে কি হবে?
- হ্যাঁ! গিয়ে কাজ নেই। সবই তো তোর জ্যাঠা, কাকারা দখল করে নিয়েছে!
- তা হলে আর কিছু করার নেই! তুই আমাকে একটু খেতে দে! খেয়ে বিশ্রাম করে দমদমাতে গিয়ে ফিরতি প্লেন ধরি!
- হ্যাঁ! তাই বরং কর!
সব শুনে, তারক মোত্তির বললেন:-

সত্যি! মাইরী! আমারও মাথায় জঙ্ঘা হয়ে গেল! নেশাটাও গেল! যাই বাড়ী যাই!

বিসর্জনের বোল

দুর্গা ষষ্ঠীর দিন । মূর্তি আনা হচ্ছে । ঢাকীর বোল ফুটলো । একটু বাজানোর পর পরই বাড়ীর কর্তা হুংকার ছেড়ে ঢাকীকে বাদ্যি বাজাতে বারণ করলেন ।


ওই ছ্যামড়া ! ঢাকের বাজনা কোই শিখছস ?

এজ্ঞে ! বাপের কাসে, কত্তা !

বাপে আসে ?

না কত্তা ! গত হইসেন !

মায়ে ?

হঃ ! জীবিত ।

তোর লহে থ্যাহে ?

না কত্তা !

ক্যান ?

বৌয়ের লগে ঝগড়া করে, হের লাইগা তাড়াইয়া দেসে আমার বৌ !

তুই কিসু কইলি না , বৌরে?

কি আর লাই ? কত্তা !!

তোর মায়েরে তোর বৌ তাড়ায়ে দেসে, হেইডা !

ঢাকী চুপ

অহনে বুজসি !! হালায়,ঢ্যাবরা ঢাক লইয়া - ষষ্ঠীর দিন বিসর্জনের বোল বাজায় ।

Friday, October 24, 2014

এলোমেলো

সে কবেকার কথা !!!! তখন, আমার বয়স কত আর হবে, এই ধরুন- বারো বা তেরো ।

বাবা ওডিশা আর আন্ধ্রার সীমান্তবর্তী শহর- পারলাখেমুণ্ডির এক কলেজে দর্শনের অধ্যাপক ছিলেন ।

কেন ওই শহরে গেছিলেন- সেটা না হয় আরকেদিন বলবো, তবে আজ আমার কথা বলি ।

কোলকাতার বাঘাযতীনে মামাবাড়ীতে থেকে স্কুলে পড়তাম আর ছুটি ছাটায় চলে আসতাম, পারলাখেমুণ্ডিতে ।

ইলেকট্রিক মাত্র কয়েকজায়গায় ছিল ।

আমরা থাকতাম, রাজবাড়ীর কাছেই । প্রশস্ত সেই রাস্তাকে বলা হত- রাজ দাণ্ড ( আজও বলা হয় )- রাজার পথ ।

আমাদের ভাড়া বাড়িতে ইলেকট্রিক ছিল না  ।  মাসিক ভাড়া ২২ টাকা ।

ট্রেনের কামরার মত লম্বা পর পর ঘর । বাড়ীতে ঢুকতে যেতেই একটা বারান্দা, তারপর একটা ছোট ঘর, পরে আরও একটা বড় ঘর । তার ওপরের ডান দিকে একটা কাঠের পাটাতন দিয়ে ঝড়তি পড়তি জিনিস রাখার জায়গা ।
সিঁড়ি ছিল না । মই লাগিয়ে উঠতে হত । আমি অবশ্য দরজা বেয়েই উঠতাম ।

তার পরে আরও দুটো ঘর । পাশেরটা অপেক্ষাকৃত ছোট । বাবা  সেটাকে পুজোর ঘর হিসেবে ব্যবহার করতেন ।

এরপরে প্রশস্ত বারান্দা । দু পাশে দুই প্রতেবেশী । দুদিকেই দেওয়াল থাকলেও কথা বার্তা সব শোনা যেত ।

একপাশে কুয়ো । ওপাশে বড় একটা রান্নাঘর ।

পাশ দিয়ে একটা সরু রাস্তা , চলে গেছে খাটা মলত্যাগের জায়গায় ।

বাঁ পাশের পরিবারটি ওডিয়া । বেশ শিক্ষিত পরিবার । ডান পাশের টি ছিল- তেলগু, সোনার কর্মকারের বাড়ী  ।

বাঁ পাশের বাড়ী থেকে যখন শোনা যেত বিদ্যা চর্চার ধ্বনি, তখন ডান পাশে খালি শাশুড়ি বৌয়ের ঝগড়া ।

এবারে হায়ার সেকেণ্ডারি পরীক্ষা পাশ করে পাকাপাকি ভাবে ভর্তি হলাম- পারলাখে মুণ্ডি কলেজে ।

বাবা আর আমাকে কোলকাতায় রাখতে সাহস করছিলেন না । তাঁর কাছে, খবর ছিল- আমি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছি ।

 আমি সায়েন্স নিয়ে পড়লেও আমাদের সাথে পড়তো- গিরিধারি গোমাঙ্গ্  আর্টস্ নিয়ে। পরে কেন্দ্রের কয়লা মন্ত্রী এবং ওডিশার মুখ্যমন্ত্রীও হয়েছিল ।

বিরাট দুই পদে থাকলেও- যোগাযোগ দু পক্ষ থেকেই থাকতো ।

গিরিধারি ছিল সৌরাউপজাতিদের রাজপুত্র ।

ভালো ব্যাঞ্জো এবং ঢোল বাজাত । তখন কোনো ষ্ট্রীট কর্ণারিং হলেই- ও আমাদের ওডিয়া বা তেলগু গানের সাথে ঢোল বাজানো ছিল অভ্যাস ।

এ আই এসএফের সদস্য ছিল আমাদের মত । পরে কংগ্রেসে চলে যায় । ওর বাবা তখন রাজা । 

আমার বাবার মাথায় হাত । ছেলে কিনা আবার সেই রাজনীতিতে !

কেন্দ্র থেকে যখন অনিবার্য জয় পাবার জন্য গিরাধারির বাবাকে লোকসভা প্রার্থীর জন্য  সুপারিশ করলে, তখন তিনি গিরিধারির নাম প্রস্তাব করলে, কেন্দ্রের কংগ্রেস মেনে নেয় ।

গিরিধারির বাবা, সৌরা এবং  ওডিয়া ভাষা ছাড়া ইংরেজী বা হিন্দী জানতেন না !‍
তখনকার মত দূরত্ব তৈরি হলো- গিরিধারির সাথে ।

আমরা যাঁকে গুরু বলে মানতাম, সেই নাগভূষণ পট্টনায়েক, ( প্রাক্তন এ আই এসএফের সদস্য)  খবরটা শুনে মুচকি হেসেছিলেন ।

পারলাখেমুণ্ডি থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে গুণুপুর শহরে থাকতেন । আমার বাবার থেকে বেশ ছোট হলেও তিনি শ্রদ্ধা করতেন বাবাকে । প্রায়ই আসতেন পারলাখেমুণ্ডি শহরে ।

পারলাখেমুণ্ডির কলেজেরই ছাত্র ছিলেন তিনি । পরে বেনারস ইউনিভার্সিটির ছাত্র  ।
বাবার নাম তখন বেনারসের লোকের মুখে মুখে ফিরত । একজন ছাত্র দর্শন এবং সংস্কৃত তে ডাবল অনার্স নিয়ে ফার্ষ্ট ক্লাস ফার্ষ্ট হয়েছিলেন । এম.এ. তেও তাই ।

সেই সুবাদে বাবার পরিচয়, পারলা খেমুণ্ডিতেই ।

নাগভূষণের বাবা ছিলেন ওডিয়া, মা তেলগু । এই রকম বিয়ে এখনও চালু ওদিকে । বাংলা খুব ভালো বলতেন ( জানি না, কি ভাবে শিখেছিলেন ) ।  এনাদের বলা হতো কোম্মা করণঅ

১৯৮৬ সালের ১২ ই ডিসেম্বর  বাবা মারা গেলে, তার একমাস পর একটা চিঠি পেয়েছিলাম- মালদার ঠিকানায় ।


জানি না, কোথা থেকে ঠিকানা পেয়েছিলেন !

উত্তর আর দেওয়া হয়ে ওঠে নি আলস্যের কারণে , যদিও চিঠিতে, তাঁর ঠিকানা দেওয়া ছিল।

১৯৯৮ সালের নভেম্বরে কোলকাতায় বসে শুনেছিলাম- তিনি ৯ ই অক্টোবর মারা গেছেন ।

খবরটা দিয়েছিল ফোনে গিরিধারি হাউ হাউ করে কেঁদে ।

==========
গতকালের ক্লান্তিতে আজ দুপুরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । স্বপ্নে দেখলাম- বাবা আর  কমঃ নাগভূষণ হেসে আমার ব্যাপারে কথা বলছেন ।

গিরিধারি কোথায় , জানি না আর ।





Monday, October 20, 2014

বাংলা সাহিত্যে- অবাঙালি





বেশ আগে, বাঙালি হাওয়া বদল করতে যেত- পশ্চিমে । এই পশ্চিম, কিন্তু বিদেশ নয় !

দেওঘর, যশিডি, ম্যাকলাস্কিগঞ্জ, বেনারস, এলাহাবাদ, ভাগলপুর পর্যন্ত দৌড় ছিল । লেখায়, কিছু স্থানীয় লোকের কথা থাকলেও, একটা পূর্ণ বিবরণ পাওয়া যায় না ।

ড্যাঞ্চি বাবু  ( ড্যাম চীপ) পর্যন্ত আমি জানি । বাঙালিরা নাকি যাই দরদাম করুক, কোলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় সস্তা, বলেই এই ড্যাম চীপ বলত ।

সেটাই ওখানকার উরুশ্চারণেড্যাঞ্চি হয় যেত আর যে বাবুরা বলতেন- তাদের নামই হয়ে গেল- ড্যাঞ্চি বাবু  !

 সৈয়দ মুজতবা আলীর কলমে আমরা প্রথম পেলাম- বিদেশের কথা । আফগানিস্তান থেকে, মিশর হয়ে ইউরোপ ।

আড্ডার বৈঠকী মেজাজে তিনি জানালেন অনেক তথ্য । হরফন মৌলার মত, সিগারেটের তামাক, আঁবসাতা থেকে শুরু করে  চেজিং করে মদ খাওয়া, আড্ডাতে বসেই স্যুটের অর্ডার দেওয়া- এই রকম বহু তথ্য ।

আবদুর রহমান থেকে শুরু করে কায়রোর কফির আড্ডা, বার্লিনের ইণ্ডিয়ান কফি হৌস, বার্লিন ইউনিভার্সিটির ওপরে ফ্লাগ টানিয়েছিল কে ?

একবারও মনে হয় নি, তিনি আমাদের জ্ঞানদিচ্ছেন । বরং আমরাই উদগ্রীব হয়ে পড়ে গেছি অক্লান্ত ভাবে সেই সব লেখা, কারণ ক্লান্ত হবার কোন সুযোগই দেন নি ।

জানতে পেরেছি অনেক অজানা তথ্য ।

তারিফ করতে হলে :- কে কি বলে জানলাম তো ওনারই লেখায় :
+++++++++
ফরাসিরা বলেছিল, ‘এপাতাঁ!

জর্মনরা, ‘ক্লর্কে!

ইতালিয়ানরা, ব্রাভো!

স্প্যানিশরা, ‘দেলিচজো,দেলিচজো।

আরবরা, ‘ইয়া সালাম, ইয়া সালাম!
++++++++++++++++
বাংলার রসগোল্লা খেয়ে কি বলেছিল সেই ফরাসী উকিল ?

ফরাসি উকিল আকাশের দিকে দুহাত তুলে অর্ধনিমীলিত চক্ষে, গদ্গদ্ কণ্ঠে বরছে, ‘ধন্য, পূণ্যভূমি ইতালি, ধন্য পূণ্যনগর ভেনিস! এ-ভূমির এমনই পূণ্য যে হিদেন রসগোল্লা পর্যন্ত এখানে মিরাক্কেল দেখাতে পারে।
কোথায় লাগে ‌মিরাক্ল্ অব মিলান' এর কাছে- এ যে সাক্ষাৎ জাগ্রত দেবতা, পুলিশ-মুলিশ সবাইকে ঝেঁটিয়ে বার করে দিলেন এখান থেকে! ওহোহো, এর নাম হবে ‌মিরাক্ল্ দ্য রসগোল্লা।

উকিল মানুষ সোজা কথা প্যাঁচ না মেরে বলতে পারে না। তার উচ্ছ্বাসের মূল বক্তব্য, রসগোল্লার নেমকহারাম করতে চায় না ইতালির পুলিশ-বর
+++++++++++++++++++++++++++++

 রিয়োজা, মোসেল, কিয়ান্তি এই সবই বা কি জিনিস!  জানতে পারি তাঁরই লেখায়

==================

এবারে আসি আমাদের ভারতের কথায় ।

প্রচুর ভ্রমন কাহিনী আছে আর তাতে থাকে দ্রষ্টব্য স্থানের কথা । কিন্তু জানতে পারি না, স্থানীয় লোকেদের বিবরণ ।

দক্ষিণ ভারতের লোকেদের আমরা অবজ্ঞা করি- তেঁতুল বলে । কিন্তু জানি কি, তাদের সংস্কৃতির কথা ? তাদের রসবোধের (রসম্ নয়) কথা ?

তারা যদি পাঁচ টাকা উপায় করে, তবে এক টাকা ফুলে, দু টাকা সিনেমা দেখতে. এক টাকা খাবারে, আর এক টাকা অন্যান্য খরচ করে এটা জানি কি?

ওখানে খাবার জল দুর্লভ বলে, কারও বাড়ি গেলে প্রথমেই এক গ্লাস জল দেয়, গুজরাতের মত ?

টিবা কাফি”  পাওয়া যায় খুব পরিচিত হলে ।

প্রথমবারে কখনই বাড়ির বৌ ঝিদের সাথে আমাদের আলাপ করাবে না, বাঙালিদের মত ।
এই সব এখনও অনেক অজানা । কেউ কি চেষ্টা করবেন কি?

++++++++++++++