আমি জীবনে প্রথম টেলিফোন ধরি, ক্লাস
এইটে । তার আগে যন্ত্রটাকে দেখেছি, তবে তেমন অভিজ্ঞতা ছিল না ।
আশ্চর্য, সব টেলিফোনের রঙ্ ছিল – কালো । কি ভারি ছিল রিসিভার !
বাপ রে বাপ ! মনে হতো এক সেরের বাটখারা ।
তখন যাদের বাড়ী টেলিফোন থাকতো, তাদের
রাজা মহারাজা বলে মনে হতো আমার।
লেস করা কাপড় দিয়ে সযত্নে ঢাকা থাকতো সেই টেলিফোন ।
তবে- অস্বীকার করার উপায় নেই , যাঁদের
বাড়ী টেলিফোন থাকতো, তাঁরা কিন্তু একটুও বিরক্ত বোধ করতেন না, যার বা যাদের টেলিফোন আসতো- তাদের ডেকে দিতে ।
আশেপাশে প্রায় সবার
কাছেই আসতো টেলিফোন, তাই জরুরী কাজ না থাকলে ফোন করা
বারণ ছিল ফোনানো পাবলিকদের ।
কোনো অবিবাহিতা মেয়ের ফোন আসতই না বললে চলে । এলে আবার মুশকিল । টেলিফোন ওয়ালারা আবার
নিজেরাই অভিভাবক ( এটা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে করার অভ্যাস ছিল আমাদের কালে ) হয়ে কড়কে দিতেন যে ফোন করেছে, তাকে ।
একদিন হঠাৎ - কল
এলো আমার । দিদিমা আর দাদু তো ঠাকুরের নাম জপতে লেগেছেন । কোন ছেলের বিপদ হলো আবার
, কে জানে ! না হলে, দাদুকে না ডেকে আমাকে কেন ?
আমিও তুন্থলু মন্থলু করে দৌড় দিলাম সেই বাড়ীতে । গিয়ে দেখি-
রিসিভার শোয়ানো টেবিলের সুদৃশ্য কভারের
ওপর ।
কাঁপা কাঁপা হাতে ওটা তুললাম । মুখ দিয়ে হাপড়ের মত নিঃশ্বাস
পড়ছে ভয়ে ।
ওপারে বুঝে গেল- আমি ফোন ধরেছি । আমাকেই ডাকা তো !
কে রে , রামু নাকি ?
হহহহহহহহহহ হ্যাঁ
শোন্ কাউকে বলবি না বল ?
কি ?
আঃ ! আস্তে !
আস্তে ববববববব লবো
কেন ? উঃ !
কি হলো, কার কি হলো ?
এটা শুনে স্বয়ং
গৃহকর্তা ফোন হাতে নিলেন । যে ফোন করেছে, সে তো আর জানে না!
খালি প্রতিক্রিয়া শুনলাম এপারের ।
ক্ষী ! রামুকে ডেকে এনে আমার মেয়েকে খবর দেওয়া হচ্ছে – মোড়ে
বিকেল পাঁচটার সময় দাঁড়াতে ? ছুঁছো, বেল্লিক্
।
ধড়াম্ করে ফোন রেখে আমাকে বলা হল – তুই যা
রামু !
No comments:
Post a Comment