Saturday, February 7, 2015

টেলিফোন




আমি জীবনে প্রথম টেলিফোন ধরি, ক্লাস এইটে । তার আগে যন্ত্রটাকে দেখেছি, তবে  তেমন অভিজ্ঞতা ছিল না ।

আশ্চর্য, সব টেলিফোনের রঙ্ ছিল কালো । কি ভারি ছিল রিসিভার !

 বাপ রে বাপ !  মনে হতো এক সেরের বাটখারা ।

তখন যাদের বাড়ী টেলিফোন থাকতো, তাদের রাজা মহারাজা বলে মনে হতো আমার।

লেস করা কাপড় দিয়ে সযত্নে ঢাকা থাকতো সেই টেলিফোন ।

তবে- অস্বীকার করার উপায় নেই , যাঁদের বাড়ী টেলিফোন থাকতো, তাঁরা কিন্তু একটুও বিরক্ত বোধ করতেন না, যার বা যাদের টেলিফোন আসতো- তাদের ডেকে দিতে ।

আশেপাশে প্রায় সবার  কাছেই আসতো টেলিফোন, তাই জরুরী কাজ না থাকলে ফোন করা বারণ ছিল ফোনানো পাবলিকদের ।

কোনো অবিবাহিতা মেয়ের ফোন আসতই না বললে চলে ।  এলে আবার মুশকিল । টেলিফোন ওয়ালারা আবার নিজেরাই অভিভাবক ( এটা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে করার অভ্যাস ছিল আমাদের কালে ) হয়ে  কড়কে দিতেন যে ফোন করেছে, তাকে ।

 একদিন হঠাৎ - কল এলো আমার । দিদিমা আর দাদু তো ঠাকুরের নাম জপতে লেগেছেন । কোন ছেলের বিপদ হলো আবার , কে জানে ! না হলে, দাদুকে না ডেকে আমাকে কেন ?

আমিও তুন্থলু মন্থলু করে দৌড় দিলাম সেই বাড়ীতে । গিয়ে দেখি- রিসিভার শোয়ানো  টেবিলের সুদৃশ্য কভারের ওপর ।

কাঁপা কাঁপা হাতে ওটা তুললাম । মুখ দিয়ে হাপড়ের মত নিঃশ্বাস পড়ছে ভয়ে ।

ওপারে বুঝে গেল- আমি ফোন ধরেছি । আমাকেই ডাকা তো !

কে রে , রামু নাকি ?

হহহহহহহহহহ হ্যাঁ

শোন্ কাউকে বলবি না বল ?
কি ?
আঃ ! আস্তে !
আস্তে  ববববববব লবো কেন ? উঃ !

কি হলো, কার কি হলো ?
 এটা শুনে স্বয়ং গৃহকর্তা ফোন হাতে নিলেন । যে ফোন করেছে, সে তো আর জানে না!

খালি প্রতিক্রিয়া শুনলাম এপারের ।

ক্ষী ! রামুকে ডেকে এনে আমার মেয়েকে  খবর দেওয়া হচ্ছে মোড়ে বিকেল পাঁচটার সময় দাঁড়াতে ? ছুঁছো, বেল্লিক্ ।


ধড়াম্ করে ফোন রেখে আমাকে বলা হল তুই যা রামু !

No comments: