বাড়িতে বসে থাকা আর শুয়ে থাকা, তাও
চিৎ হয়ে বা ডান দিকে কাৎ হতে পারা যায়
কিছুটা ডাক্তারের নির্দেশে ।
বাঁ দিকে কাৎ হতে এখনও কষ্ট হয় একটু । গরম পড়লে
নাকি সেটাও থাকবে না- ডাক্তারের ভবিষ্যবাণী ।
মাঝে মাঝে বেরুবেন, তবে এক
নাগাড়ে গাড়ীতে ঘন্টা দেড় দুইয়ের বেশী
বসবেন না।
বেশ – এত কড়াকড়ি আর ভালো লাগছে না ।
ছেলে বলল – আজ আমার বিকেলে কোনো কাজ নেই, চলো বেড়িয়ে পড়ি ।
তা, যাবোটা কোথায় ?
কেন ? বেলঘরিয়া এক্সপ্রেস ওয়েতে !
সেটা কোথায় ?
জানো না ? চলো দেখাই ।
সারথী সুরজিৎ আমাকে শিখিয়েছে, এখন
কি ভাবে গাড়ীতে উঠতে হয় ।
ওঠবার সময় পেছনটা সিটে রেখে তারপর
দুটো পা ভেতরে রাখতে হবে । নামার সময় ঠিক উল্টোটা ।
গাড়ী চলল ।
এয়ারপোর্ট আড়াই নম্বর পেরিয়ে,
বিরাটির আগের বাস ষ্টপেজের ঠিক আগে বাঁ
দিকে ঘুরলেই- বিশাল চওড়া টু লেনের রাস্তা, ।
মনে পড়ল এতক্ষণে । কতবার,
ডানকুনি আর দক্ষিণেশ্বর গেছি, এই রাস্তা
দিয়ে ।
নাঃ ! অ্যামনেশিয়া হচ্ছে, বুঝতে
পারছি ।
বিশাল বিশাল ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে ,
যাওয়ার সময় রাস্তার ডান দিকে । একটা ফাইভ ষ্টার বড় হোটেলও আছে, ঝকঝকে নতুন ।
একটা ব্রিজ পেরুতেই বাঁ দিকে ( ডান দিকেও আছে) অজস্র দোকান । সব,
চা আর জলখাবারের । প্রচুর লোক যাবার সময়, দু দণ্ড দাঁড়িয়ে ভাঁড়ের গরম চায়ে চুমুকের সঙ্গে, টুকটাক মুখও
চালাচ্ছে ।
বেশ কয়েকটা দোকান পেরিয়ে জয়ন্তর
ঠেক । বাঁশের খুঁটি আর ওপরে টিন ।
এত বাঁশ কোথায় পায়রে বাবা !মুখ দিয়ে, সট্ করে
বেরিয়ে গেল !
সুরজিৎ কানের কাছে মুখ এনে বলল –
চেপে যান জেঠু । “এশব পোসনো করতে নেই”
কেন রে ? মার ধোর খাবো নাকি ?
হতেও পারে, সব হাওড়া থেকে আসে কিনা
!
সে যাক্
জয়ন্ত নাকি খুব ভালো ফ্রেঞ্চ টোষ্ট বানায়, শুনলাম । আমার অভিজ্ঞতা বলে-
কোনো দোকানই সোনালি রঙের অমলেট বানাতে পারে না ঠিক ঠাক ভাবে । হয়, দরকাঁচা নয় পোড়া
। তা, জয়ন্ত বানাবে ফ্রেঞ্চ টোষ্ট ? ছ্যা ছ্যা ছ্যাঃ ।
কাগজের প্লেটে অবশেষে সুগন্ধ ছড়িয়ে
বস্তুটি এলো ।
বেশ সুন্দর করে পিস করা ।
আহা ! কি রঙ ! একেবারে হলমার্কা সলিড সোনা ! হাল্কা কাঁচা লঙ্কার
সুবাসের সাথে ভাজা পেঁয়াজের সুগন্ধ ! দিল একেবারে তর্ !
আমি সুনামির মত ঝাঁপিয়ে পড়লাম প্লেটটার ওপর ।
চাকুম চুকুম করে খেতে শুরু করতেই,
ওনার ভুরু কোঁচকালো । গোৎ গোৎ করে জল খাই বলে একটা অভিযোগ আছে ওনার । আমি- ভদ্রলোক
সমাজের উপযুক্ত নই , এটা ওনার বদ্ধ ধারণা । যাই বলুন আমাকে – খ্যাসখ্যাস করে
চুলকিয়ে আরাম পাই, চোখ বুঁজে আসে মৌতাতে । চা খাই শব্দ করে !
খাবো তো আমি, নাকি ? তো আরামই যদি
না পেলাম- তালে কিসের চুলকুনি আর খাওয়া ?
আশে পাশে খলিসাকোটা । সব বরিশালের
আদি বাসিন্দা এককালের ।
জয়ন্তর হাত খালি হতেই ডাকলাম ওকে ।
কি দাদু, কি বলবেন ?
বলছিলাম- তোর আদি বসত কোথায় ?
এখানেই জন্ম আমার !
------------বুঝলাম প্রশ্নটা ওয়াইড হয়ে গেল ।
মানে, বলছিলাম – তোর বাপ ঠাকুর্দা
কোথাকার লোক ?
ও ! ওনাদের তো বাংলাদেশ !
বাংলাদেশের কোথায় ?
বরিশাল বলে শুনেছি
মনে মনে নিজের পিঠ নিজেই চাপড়ালাম
।
তো- শিখলি কোথায় এই রকম ভাবে
মামলেট বা ফ্রেঞ্চ টোষ্ট বানানো ?
সে অনেক কথা দাদু !
------- এবারেও বুঝলাম প্রশ্নটা
বাউন্সার না হয় !
অ ! তা তুমিও কি মানস সরোবরে গিয়ে
অন্নপূর্ণার হাতা পেয়েছিলে নাকি ?
মানে ?
না না – ওটা এমনি বললাম ।
ও ! আমাকে পথ চলতি একজন
শিখেয়েছিলেন । ফ্রাইং প্যানে একটু বেশী তেল দিলেই করা যায় এটা ।
এরপর ভাঁড়ে চা । বড় ভাঁড় – ১০ টাকা ।
এটাতেও চায়ের ফ্লেভার আছে ।
------------
হাতে গরম ফ্রেঞ্চ টোষ্ট আর চা খেয়ে বাড়ী ফেরা । উদাস ভাবে দেখলাম- মুনলাইট বার আর রেস্তোরাঁর আলোর বিজ্ঞাপন ।
হাতে গরম ফ্রেঞ্চ টোষ্ট আর চা খেয়ে বাড়ী ফেরা । উদাস ভাবে দেখলাম- মুনলাইট বার আর রেস্তোরাঁর আলোর বিজ্ঞাপন ।
এরাও কি বরিশালের ? উত্তরটা, শিখর
ধাওয়ানের সেঞ্চুরির মত অধরাই থেকে গেল ।
No comments:
Post a Comment