ওডিশা ও আন্ধ্রার সীমান্তবর্তী শহর – পারলাখেমুণ্ডি । এখন
অবশ্য সরগরম শহর । তবে, ষাটের দশকে সেটা একটা ছোট শহরই ছিল ।
বাবা সেই শহরের কলেজে, দর্শনের অধ্যাপক ছিলেন ।
রাজা শ্রী ক্রুষ্ণচন্দ্র গজপতি ( কৃষ্ণচন্দ্র) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই কলেজ তবে, পরে বাবা থাকা কালিনই ওডিশা রাজ্য সরকার সেই কলেজকে
সরকারী করে নেয় । এখন ভীষণ নাম সেই কলেজের ।
শহরে, ইলেকট্রিক
থাকলেও, বাড়ী বাড়ীতে বিদ্যুৎয়ের যোগান ছিল না ।
সারা শহরে, তখন
মোটে চারটে রেফ্রিজিরেটার ছিল ।
রাজার, সরকারী হাসপাতাল, পশু হাসপাতাল এবং এক মিশনারীর
বাড়ীতে ।
না ! ওগুলো বিদ্যুৎ চালিত ছিল না । ব্র্যাণ্ড ছিল- সুর ফ্রিজ, সবকটাই । বাঙালি
কোম্পানির তৈরি এই ঠাণ্ডা যন্ত্রের চাহিদা এবং নাম তুঙ্গে । কালের নিয়মে, এই
সুরফ্রিজ আর নেই বর্তমানে ।
কেরোসিনে চলতো এই সব ফ্রিজ । যন্ত্রের একদম পেছন দিকে একটা
ল্যাম্প জ্বলতো কেরোসিনে ।
সামনে একটা টানা ষ্টিলের লাঠিতে আয়না ফিট করা থাকতো । সেটা
টেনে দেখে ল্যাম্প ঠিক মত জ্বলছে কিনা দেখা হতো । ল্যাম্পের ফিতেও বাড়ানো কমানো
যেত- ঠাণ্ডাকে কন্ট্রোল করার জন্য ।
গরমের দিনে- মিশনারির বাড়ীতে গিয়ে বরফ ঠাণ্ডা জল খেয়ে আসতাম
। সাথে কিছু বরফ ।
কলকাতায় এসে বিদ্যুৎচালিত রেফ্রিজিরেটর প্রথম দেখি । ধারণা
ছিল- এসব বড়লোকদের বাড়ীতেই থাকে ।
ধীরে এই যন্ত্র “ফ্রিজে” পরিণত হলো ।
চাকরি পাবার পর, নানা সহকর্মীদের বাড়ীতেও দেখতাম এই ফ্রিজ ।
আমার যে কোনদিন হবে, সেটা স্বপ্নেও ভাবি নি । আমার ছোট ভাই
রামানুজ, জোর করে মালদায় কেনালো ।
অবশ্য – চেনা শোনা থাকার সুবাদে এক লপ্তে টাকাটা দিতে হয় নি
। চারটে কিস্তিতে টাকা নিতে রাজী হয়েছিল
দোকানদার ।
ফ্রিজ তো এলো বাড়িতে । ছেলেদের উত্তেজনা চরমে । ঠাণ্ডা জলের আর অভাব হবে না । রসনা মিক্সও চলে
এলো , সাথে কিলো খানেক চিনি ।
অবাক হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখছি – আমার ফ্রিজ । পাড়ার অনেকেই
দেখতে এলো তাকে ।
একজন ফুট কেটে দিল কম্প্রেসর বার্ষ্ট করতে পারে । ২৪ ঘন্টা অন করে রাখলে যদি না ফাটে তবে আর হবে
না কিছু ।
ব্যাস্ ! হয়ে গেল আমার । কেন যে মরতে কিনতে গেলাম ।
ভাই, ছেলেরা এই সম্ভাবনার কথা ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেও আমার ভয়
আর যায় না ।
শেষে সারা রাত্তির জেগে কাটালাম ।
না কিছু হয় নি, তবে নতুন কেনা চারটে ব্যাটারি যন্ত্রের ভেতর
রেখেছিলাম- ভালো থাকবে বলে ।
No comments:
Post a Comment