Wednesday, February 11, 2015

স্মৃতির রিসাইকেল বিন -৩


+++++
আমার কর্মজীবনে অনেক উপরওয়ালা পেয়েছি, যাদের কথা আমি জীবনে ভুলবো না।
এর মধ্যে অনেকদিন আগে, প্রয়াত জ্যোৎস্নাময় দাশগুপ্তের কথা লিখেছিলাম । ইনিই আমাকে হাতে ধরে কাজ শিখিয়েছিলেন ।
আজ লিখি শ্রী হেমেন রায়ের কথা ।
চালু ভাষায়, এনাদের বলা হতো- বস্
শুনলেই আলতো করে রেগে যেতেন কানুদা মানে হেমেন রায় ।
বলতেন আমি তুমি কি গ্যাংয়ের লোক নাকি ? বলেই হেসে ফেলতেন ।
মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভদের কাজের জায়গাকে বলা হয়- টেরিটরি ।
নিয়ম ছিল-অন্তত সাতদিন আগে জানাতে হবে টেরিটরিতে বস আসার আগে ।
কানুদা সাতদিন আগেই টেলিগ্রাম করে দিতেন :- প্লিজ অ্যালাও মি টু হ্যাভ দি প্লেজার অফ্ ওয়ার্কিং উইথ ইউ ফ্রম ............ বলে দিন গুলো জানিয়ে দিতেন ।
এত সৎ ভদ্রলোক আমি জীবনে খুব কমই দেখেছি । শুনেছিলাম তিনি রিপ্রেজেনটেটিভ থাকা কালিন ৫০ হাজার টাকার জন্য সেলস্ টার্গেট পূরণ করতে পারছেন না অথচ যে অর্ডার দিতে পারে, সেই ষ্টকিষ্ট বড় টেঁটিয়া টাইপের । ফলে, কানুদা চুপ ।
মাত্র একদিন বাকি, এর মধ্যে সেই ষ্টকিষ্ট কারও কাছে শুনে অর্ডারটা পাঠিয়ে বলেছিল- কানুদার টার্গেট হবে না, সেটা আবার হয় নাকি ?
এ হেন কানুদার মাথা জোড়া টাক এবং পেছনে কিছু অলকদাম, চাষের জমির কিছু আগাছার মত ইতি উতি ছড়িয়ে থাকতো ।
সন্ধে সাতটা বেজে গেলেই তিনি উসখুস করতেন একটা কারণে ।
আমার সাথে কাজ করতে করতে বলতেন :- ভশ্চাজবাবু, আপনার সঙ্গে কিন্তু সিরিয়াস কথা আছে রাতে । তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করুন ।
প্রথমে ভয় পেতাম ! কি আবার বলবেন ।
হোটেলে ফিরে মুচকি হাসি হেসে সুটকেস খুলে বের করতেন- হুইস্কির বোতল ।
আরামে চুমুক দিয়ে শুরু হতো খোসগল্প । আপিসের কথা বিন্দু মাত্র থাকতো না তাতে ।
অসম্ভব রসিক এই কানুদার লেখার হাতও ছিল চমৎকার ।
যদি তিনি ফেসবুক করতেন, তালে বোঝা যেত কি অসাধারণ লিখতেন তিনি ।
একদিন চলেছি, তাঁকে গৌড় এক্সপ্রেসে তুলে দিতে । বারণ করতেন, কিন্তু তাঁর সাথে শেষ মুহূর্তের আড্ডাটাও ছাড়তে মন করতো না ।
রিক্সো চলেছে । হঠাৎ তিনি হাত দুটো বেহালা বাজানর মত করে গেয়ে উঠলেন :-
বাজে করুণ সুরে
কি হলো, কানুদা ?
আরে ভশ্চাজ মশাই, আমার জীবনের সবচেয়ে দামী জিনিসটাই ফেলে এসেছি হোটেলের ঘরে !
সেকি ? চলুন ফিরে, নিয়ে আসা যাক্
না থাক, কিনে নেবো কোলকাতায় ফিরে
খুব দামী ?
নিশ্চয়ই, অন্তত আমার কাছে !
তাহলে, দেখুন আবার আপনাকে টাকা খরচ করতে হবে ।
ও তো মাত্র দুটাকা
তাহলে খুব দামী বললেন যে?

আরে মশাই, চিরুনীর মাহাত্ম আপনি কি বুঝবেন ?

No comments: