স্থান:- ধরে নিন, পশ্চিমবঙ্গের যে কোনো একটা মফঃস্বল জেলা
শহর
কাল :- আশীর দশকের মাঝামাঝি
পাত্র/পাত্রী :- এবারে ঘটনাটা ইচ্ছে
হলে পড়ুন, তা হলেই বুঝবেন ।
==========
হঠাৎ মারা গেলেন বাড়ীর একমাত্র রোজগেরে
কর্তা । সামান্য চাকরি ছিল এক প্রাইভেট কোম্পানিতে, তাঁর ।
একমাত্র ছেলে তখন কলেজে পড়ছে । বিধবা
মায়ের ইচ্ছে- ছেলে আরও পড়ুক ।
মালিক বাবার জায়গায় ছেলেকে চাকরি দিতে
চাইলেও, মা সেটা করতে দিলেন না ছেলেকে । ছেলেও, পড়াশোনায় খারাপ নয় ।
এককালীন একটা থোক টাকাও পেলেন মালিকের
কাছ থেকে ।
সে কটা টাকা, যৎসামান্য হলেও ব্যাংকে
ফিক্স ডিপোজিট হিসেবে রেখে দিলেন ।
নিজে ধরলেন টিউশনি । ইংরেজি-বিষয়টা
মোটামুটি ভালই জানতেন, বলে বেশ কয়েকটা জুটেও গেল ।
টিউশন নিতে আসা একটি , ষোল- সাতেরো
বছরের মেয়ের সাথে বেশ ভাব –ভালোবাসা হল ছেলেটার ।
ছেলের মা, টের না পেলেও- মেয়ের মা ব্যাপারটা
যেন কিভাবে যেন জেনে গেলেন ।
একদিন তিনি এসে বললেন – অণিমাদি, আপনি
ভালো পড়ান সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই । আর এখানে যা টিউশনের রেট, তার থেকে বেশীই দেই
আপনাকে ।
না কোনো দয়া নয় ! আপনার পড়ানোর জন্য
মেয়েটা আমার ভালো রেজাল্টও করছে, তাই । তবে, আমার মেয়েটি কোনো কিছুর সাথে জড়িয়ে পড়ুক,
এটা আমি চাই না !
অণিমা ব্যাপারটার কিছুই জানেন না তবু,
ঈষৎ ক্ষুণ্ণ হয়েই জবাব দিলেন :- বেশ ! আজ থেকে আর আপনার মেয়েকে আমি আর পড়াবো না !
ছেলেটি এরপরে আর বাড়িতে খাওয়া দাওয়া
করেই না ! এক নম্বর কারণ :- মায়ের কিছু রোজগার কমে যাওয়া আর দ্বিতীয় হলো, মেয়েটির সাথে
দেখা না হওয়ার দুঃখ ।
অণিমা একে ধরেন, তাকে ধরেন কারণ জানার
জন্য, ছেলেকে বোঝান---- কিন্তু ছেলেটি বাড়ীতে আর খায় না ।
উপায়ন্তর না দেখে, অণিমা গেলেন নিতুর
কাছে ।
“ বাবা নিতু, জানি তুমি আমার ছেলের থেকে বয়সে বড়, তাও একটু বোঝাও
ওকে । দুদিন ধরে বাড়ীতে তো খায়ই না, তার ওপর
পড়াশোনাতেও মন নেই আর । খালি – পাগলের মত এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায় । কারণ তো বুজতে পারছি
না ! দেখো যদি কিছু করতে পারো !”
নিতু সেইদিনই বিকেলবেলা ছেলেটিকে পেয়ে
গেল- এক বাজারের ভেতর চায়ের দোকানে । গরম গরম বেগুনিও ভাজা হচ্ছে, সেই দোকানে । ছেলেটি
উদাস ভাবে তাকিয়ে সেই দিকে ।
নিতু গিয়ে বলল :- আমার সঙ্গে একটু কথা
বলবি ? তাহলে আড়ালে চল ।
ছেলেটি অনিচ্ছা সত্বেও উঠে এলো নিতুর
কাছে ।
বাড়ীতে না খাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করাতে,
হড়হড় করে সব বলে ফেলল ছেলেটি ।
কোথায় খেলি, এই দুদিন ?
এই তো সঞ্জীবদের বাড়ীতে । কিন্তু আমি
আর মায়ের পয়সায় খাবো না ! ভাবছি, ওই মালিকের
কাছে গিয়ে চাকরিটা চাইবো । আমাকে তো খেতে হবে !
তুমি কিন্তু আমাকে আর মায়ের কাছে খেতে অনুরোধ করো না । মাথার ওপর ছাদ নেই বলে, রাতে বাড়ীতে থাকি ।
বেগুনী খাবি ?
তা খেতে পারি, খিদেও পেয়েছে ।
নিতু পয়সা দিতে ছেলেটি মোটা মোটা দুটো
বেগুনিও নিয়ে এলো ।
খেতে খেতে নিতু বলা শুরু করলো :-
জানিস তো প্রদীপ আর মন্টু আমার বন্ধু
?
হ্যাঁ !
একদিন বেলা দুটো বেজে গেছে । বাজারে
প্রায় ৭০ বছরের এক বুড়ো মানুষ একটা লাউ নিয়ে
সব্বাইকে অনুরোধ করছে:- এই লাউটা নিন । দু টাকায় ছেড়ে দেবো ।
কেউ নিচ্ছে না দেখে, মন্টু লাউটা নিয়ে
বুড়োকে দুটো টাকা দিয়ে লাউটা নিয়ে নিলো।
প্রদীপ রেগেই অস্থির ।
মন্টু, তোর তো লাউ দরকার নেই ! সকালেই
তো কিনেছিস !
ঠিক
তবে কিনলি কেন ?
লোকটাকে দেখিছিলি?
হ্যাঁ !
এই বয়সে, রোদ্দুরে ঘুরে ঘুরে , পাঁচ
টাকার লাউটা দুটাকায় বিক্রি করতে চাইছিল । তাই!
দয়া ?
না, তবে মনে হলো ওনাকে সাহায্য করা
উচিত !
তা হলে তোর পাঁচ টাকাই দেয়া উচিত ছিল !
না, এটাই ঠিক হতো না !
কেন ?
উনি কিন্তু, এই বয়সেও ঘুরে ঘুরে একটা
লাউ বিক্রি করছেন কড়া রোদে । ভিক্ষে চান নি উল্টে কিছু বিক্রি করে টাকা চাইছেন। পাঁচ টাকা দিলে-
ভিক্ষে দেওয়া হতো ।
ছেলেটি এবারে বলল – নিতুদা, আপনি ঠিক
কি বলছেন বলুন তো ?
তোর মা- ভিক্ষে করছে না, এটা মনে রাখিস
। এবারে বাড়ীতে খাবি কি খাবি না, সেটা তোর ব্যাপার । আমি আর কিছু বলতে চাই না ।
==========
ছেলেটি বাড়ী ফিরে গেছিল । পরে সরকারি পরীক্ষা দিয়ে একটা
বিডিওর চাকরি করছে এখন !
শেষ কথা :- সেই মা নিজে এসে ছেলেটির
মাকে নিজের মেয়ের সাথে বিয়ের সম্বন্ধ করেছিলেন
।
অণিমা মেনে নিয়েছিলেন বিয়েটা ।
নাও দে আর এ হ্যাপি ফ্যামিলি !
No comments:
Post a Comment