Tuesday, February 11, 2014

রান্না বান্না ও জীবন

বয়স যখন কামড় বসায়, তখন পরনির্ভরতা বেড়ে যায় । শরীরে আর যুত থাকে না । এককালে, আমার স্ত্রী একাহাতে সব সামলেছেন ।

আখা, ঘুঁটে –গুল – কয়লা দিয়ে সাজনো, রান্না করা, শীলে বাটনা বাটা, বাজার করা, বাসন মাজা, ঝাড় দেওয়া, ছেলেদের পড়াশোনার তদারকী করতেন হাসি মুখে ।

আমার তো ঘোরাঘুরির চাকরী । তাই বেশী সাহায্য করতে পারতাম না । তাঁর দরকারও ছিল না, ওনার ।

এসব দেখে,   পরিচারিকা রাখলাম ।  কারণ, ওনার ওপর প্রচণ্ড ষ্ট্রেস যাচ্ছিল । অল্প পয়সা রোজগার করি । তবুও, এই “ বড়লোকী” টা করলাম ।
না, এখনকার হিসেবে টাকাটা যৎসামান্য হলেও আমার কাছে সেটা মহামূল্যবান । কাজে ফাঁকি কিন্তু দেখি নি সেই পরিচারিকার ।

শরীর খারাপ থাকলেও আসতেন উনি । চিন্তা থাকতো না ।
ধীরে ধীরে, অবস্থা একটু হলেও পাল্টালো । মালদা শহরে দেখলাম রান্নার গ্যাস এসেছে ।

ডিষ্ট্রিবিউটার ছেলেটি আমার অতিপরিচিত । আমাকে ধরে বসলো- একটা গ্যাস নিন।
দেখুন – কোনো ঝামেলা নেই । অন্য লোকেরা নিচ্ছে না ভয়ে ।
দাম ৪৫০ টাকা- দুটো সিলিণ্ডার, বার্নার আর গ্যাসের দাম নিয়ে । বললাম – ক্যাস দিতে পারবো না, কিস্তিতে শোধ করবো । ছেলেটি- তাতেই রাজী ।
চলে এলো গ্যাস বাড়ীতে ।
হিতৈষীরা এসে বললেন – আগুন টাগুন লাগতে পারে যে কোনো সময়ে । সাবধান !! এক প্রতিবেশী এসে আমাকে দাবড়ালেন ।
তাঁর বক্তব্য- তিনি জানেন, সিলিণ্ডার বার্ষ্ট করতে পারে । দুর্ঘটনা ঘটলে তাঁর বাড়ীই আগে ফল ভোগ করতে পারে ।
পরের দিন, ইংলিশবাজার থানার ওসি এসে হাজির । আমার বিরুদ্ধে  অভিযোগ , আমি আগুন লাগানোর সরঞ্জাম বাড়ীতে এনে পাড়ার নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেছি ।
সরেজমিনে দেখে, হেসে বড়বাবু বললেন – আমাকেও তালে একটা কিনতে হচ্ছে । খবর পেয়ে ডিষ্ট্রিবিউটার ছেলেটিও চলে এসেছিল- যাতে আমার কোনো অসুবিধে না হয় ।
সে তো ভারী খুশী ।  ইংলিশবাজার থানার ওসি যখন কিনছেন, তখন আর সেল নিয়ে চিন্তা নেই ।
অন্য লোকেদের ভীড় আমার বাড়ী   - গ্যাসে কি ভাবে রান্না হয় দেখার জন্য ।
তারপর এলো টিভি । এবারও সেল নেই মালদায় । একটা এলপিটি বা লো পাওয়ার ট্রান্সমিটার বসানো হয়েছে । সেটা কতদিন থাকবে লোকেরা সন্দিহান ।
টিভির দোকানের মালিক ওই গ্যাস ডিষ্ট্রবিউটের বন্ধু । একদিন, অ্যান্টেনা, টিভি, বুষ্টার ( বাংলাদেশ টিভি দেখার জন্য ) নিয়ে আমার বাড়ীতে দিয়ে গেল ।
সর্ত-সেই কিস্তি ।
কিছুদিন পরেই ছিল ছাব্বিশে জানুয়ারী । ভাড়া বাড়ীর বারান্দায় শতরঞ্চী আর মাদুর পেতে লোকে লোকারণ্য টিভি দেখতে ।
বাংলাদেশ টিভি দেখে তো আমার ছেলেরা ও তার সহপাঠীদের ধারণাই হয়েছিল- ভারতের রাষ্ট্রপতি – এরশাদ সাহেব ।
একে একে ফ্রিজ, মাইক্রোওভেন, ওয়াশিং মেশিন, ইমালশান হিটার, টোষ্টার, রাইস কুকার এবং আরও কিছু জড়ো হল ।
পরিচারিকারাও ডুব মারতে শুরু করলেন । শুধু মাইনে নেবার আগে পেছু তাঁদের দর্শন নিয়মিত ।
তার ফলে, টেনশন , সুগার, হাইপারটেনশন, ওয়ার্ক সাসপেনশন – ব সন সন করে মাথার ওপর চরকী খায় ।

বয়স হয়ে গেছে- আমাদের ।
অথচ, বলতেও পারছি না- দাও ফিরে সেই অরণ্য, লহ এই নগর ।
রবিদাদু জমিদার ছিলেন- আমার ছাপোষা !!! কবিত্ব ওঁদেরই মানায় ।
যাই বাসন মাজি , আজও পরিচারিকা আসেন নি ।
ভালো থাকবেন ।




No comments: