বয়স যখন কামড় বসায়, তখন পরনির্ভরতা বেড়ে যায় । শরীরে আর যুত
থাকে না । এককালে, আমার স্ত্রী একাহাতে সব সামলেছেন ।
আখা, ঘুঁটে –গুল – কয়লা দিয়ে সাজনো, রান্না করা, শীলে বাটনা
বাটা, বাজার করা, বাসন মাজা, ঝাড় দেওয়া, ছেলেদের পড়াশোনার তদারকী করতেন হাসি মুখে
।
আমার তো ঘোরাঘুরির চাকরী । তাই বেশী সাহায্য করতে পারতাম না
। তাঁর দরকারও ছিল না, ওনার ।
এসব দেখে,
পরিচারিকা রাখলাম । কারণ, ওনার ওপর
প্রচণ্ড ষ্ট্রেস যাচ্ছিল । অল্প পয়সা রোজগার করি । তবুও, এই “ বড়লোকী” টা করলাম ।
না, এখনকার হিসেবে টাকাটা যৎসামান্য হলেও আমার কাছে সেটা
মহামূল্যবান । কাজে ফাঁকি কিন্তু দেখি নি সেই পরিচারিকার ।
শরীর খারাপ থাকলেও আসতেন উনি । চিন্তা থাকতো না ।
ধীরে ধীরে, অবস্থা একটু হলেও পাল্টালো । মালদা শহরে দেখলাম
রান্নার গ্যাস এসেছে ।
ডিষ্ট্রিবিউটার ছেলেটি আমার অতিপরিচিত । আমাকে ধরে বসলো-
একটা গ্যাস নিন।
দেখুন – কোনো ঝামেলা নেই । অন্য লোকেরা নিচ্ছে না ভয়ে ।
দাম ৪৫০ টাকা- দুটো সিলিণ্ডার, বার্নার আর গ্যাসের দাম নিয়ে
। বললাম – ক্যাস দিতে পারবো না, কিস্তিতে শোধ করবো । ছেলেটি- তাতেই রাজী ।
চলে এলো গ্যাস বাড়ীতে ।
হিতৈষীরা এসে বললেন – আগুন টাগুন লাগতে পারে যে কোনো সময়ে ।
সাবধান !! এক প্রতিবেশী এসে আমাকে দাবড়ালেন ।
তাঁর বক্তব্য- তিনি জানেন, সিলিণ্ডার বার্ষ্ট করতে পারে ।
দুর্ঘটনা ঘটলে তাঁর বাড়ীই আগে ফল ভোগ করতে পারে ।
পরের দিন, ইংলিশবাজার থানার ওসি এসে হাজির । আমার
বিরুদ্ধে অভিযোগ , আমি আগুন লাগানোর
সরঞ্জাম বাড়ীতে এনে পাড়ার নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেছি ।
সরেজমিনে দেখে, হেসে বড়বাবু বললেন – আমাকেও তালে একটা কিনতে
হচ্ছে । খবর পেয়ে ডিষ্ট্রিবিউটার ছেলেটিও চলে এসেছিল- যাতে আমার কোনো অসুবিধে না
হয় ।
সে তো ভারী খুশী ।
ইংলিশবাজার থানার ওসি যখন কিনছেন, তখন আর সেল নিয়ে চিন্তা নেই ।
অন্য লোকেদের ভীড় আমার বাড়ী - গ্যাসে কি ভাবে রান্না হয় দেখার জন্য ।
তারপর এলো টিভি । এবারও সেল নেই মালদায় । একটা এলপিটি বা লো
পাওয়ার ট্রান্সমিটার বসানো হয়েছে । সেটা কতদিন থাকবে লোকেরা সন্দিহান ।
টিভির দোকানের মালিক ওই গ্যাস ডিষ্ট্রবিউটের বন্ধু । একদিন,
অ্যান্টেনা, টিভি, বুষ্টার ( বাংলাদেশ টিভি দেখার জন্য ) নিয়ে আমার বাড়ীতে দিয়ে
গেল ।
সর্ত-সেই কিস্তি ।
কিছুদিন পরেই ছিল ছাব্বিশে জানুয়ারী । ভাড়া বাড়ীর বারান্দায়
শতরঞ্চী আর মাদুর পেতে লোকে লোকারণ্য টিভি দেখতে ।
বাংলাদেশ টিভি দেখে তো আমার ছেলেরা ও তার সহপাঠীদের ধারণাই
হয়েছিল- ভারতের রাষ্ট্রপতি – এরশাদ সাহেব ।
একে একে ফ্রিজ, মাইক্রোওভেন, ওয়াশিং মেশিন, ইমালশান হিটার,
টোষ্টার, রাইস কুকার এবং আরও কিছু জড়ো হল ।
পরিচারিকারাও ডুব মারতে শুরু করলেন । শুধু মাইনে নেবার আগে
পেছু তাঁদের দর্শন নিয়মিত ।
তার ফলে, টেনশন , সুগার, হাইপারটেনশন, ওয়ার্ক সাসপেনশন – ব
সন সন করে মাথার ওপর চরকী খায় ।
বয়স হয়ে গেছে- আমাদের ।
অথচ, বলতেও পারছি না- দাও ফিরে সেই অরণ্য, লহ এই নগর ।
রবিদাদু জমিদার ছিলেন- আমার ছাপোষা !!! কবিত্ব ওঁদেরই মানায়
।
যাই বাসন মাজি , আজও পরিচারিকা আসেন নি ।
ভালো থাকবেন ।
No comments:
Post a Comment