খাওয়া দাওয়া নিয়ে আমার দুর্বলতা সর্বজনীন । এই বয়সে এসেও, সেই দুর্বলতাটা ভয়ঙ্কর ভাবে বিদ্যমান । খেতে
বসলে আর হিতাহিত জ্ঞান থাকে না আমার ।
আমার ঘোঁৎ
ঘোঁৎ করে জল খাওয়া বা কচকচ করে মাংস চিবোনোর
শব্দ শুনে আমার দিকে অনেকেই ( এর মধ্যে আমার “উনিও” আছেন ) ভুরু কুঁচকে
তাকান ।
একবার তো
পার্ক স্ট্রীটের “স্কাইরুমে” ( এখন ঘচাং ফু হয়ে গেছে ) গিয়ে বলেই দিয়েছিলাম- ও
ঠাহুর !!! ঝুলে ( স্যুপ) কদু ( লাউ) দিসো ক্যা?
আশ্চর্য
জনক ভাবে উত্তর এসেছিল :- মিঁঞা, ধইর্যা ফেলসেন দেহি ।
তারপর
থেকেই আমার “কনফি” তুঙ্গে । এই সব নাক উঁচুপনাকে – আমি তাচ্ছিল্যর চোখেই দেখি এখন
।
খুব
সাম্প্রতিক – প্রশান্তর মেয়ের বিয়েতে, সিদ্ধার্থ দেবের নাতনীর অন্নপ্রাশনে,
শ্রীপর্ণা- অনমিত্রের বিয়েতে কব্জী ডুবিয়ে খেয়ে এসেছি ।
ফেসবুকের
বন্ধুদের বাইরেও কয়েকটা বিয়েতে– খাওয়াটা জব্বর হয়েছিল ।
বেশীদিন
হয় নি, আমার ফেসবুকের বন্ধু অভিজিৎ দত্তের বাড়ীতেও আড্ডা দিতে গিয়ে- ব্রহ্ম খাবার
খেয়েছি ।
সুকুমার
রায় ক্লাবের পিকনিকের খাওয়ার কথা না বললে , আমার নরকেও স্থান হবে না ।
তাই, আজ
একটু খাওয়া দাওয়া নিয়ে অন্য কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলি ।
প্রথমেই বলবো – আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ আগেকার কথা । যাদের বাড়ীতে
নিমন্ত্রণ
– তাঁরা আবার বারিন্দির এবং স্বয়ং গৃহকর্তা আবার ডাক্তারও
বটে ।
মাটীতে কলাপাতায় পরিবেশন আর মাটীর ভাঁড়ে জল ।
পদগুলোও বেশ উঁচুমানের । শেষ হয়ে এসেছে খাওয়া, তখন
গৃহকর্তার মনে পড়ল শাকটা দেওয়া হয় নি, প্রথম পাতে ।
উনি যথারীতি উচ্চগ্রামে হাঁক ( বারিন্দিররা আবার পেছনে ভর
দিয়ে কথা বলেন- বরিন্দের প্রাচীন প্রবাদ)
দিলেন :- ওরে শাকটা নিয়ে আয় ।
নামকরা খাইয়েরা আপত্তি তুলে বললেন :- ওটা আর দিতে হবে না ।
এখন তো উপরে মিষ্টান্নে ভর্তি । প্রথামত শাক পেটের নীচে থাকার কথা ।
ডাক্তার আবার হাঁক দিলেন বরিন্দ টোনে :-ওরে, শাক গুলো একটা
বালতীতে গুলে নিয়ে আয়, সঙ্গে গরুকে ইনজেকশান দেওয়ার মোটা কাঁচের সিরিঞ্জ । শাকটা সকলের পেছন দিয়ে ঢুকিয়ে দি । অতিথি সৎকারে
ত্রুটি যেন না হয় ।
আপত্য কারীরা সহ সব নিমন্ত্রিতরা দুড়দার করে উঠে দৌড়ে
পালিয়েছিলেন সেবার ।
-
পরের একটা অভিজ্ঞতা দিয়ে শেষ করি আপাতত ।
মালদায় গাজল বলে একটা আধা শহর আছে । ইংলিশ বাজার ( শহর এই
নামেই পরিচিত) শহর থেকে ছাব্বিশ কিমি দূরে ।
গাজোল থেকে আলাতোড় গ্রাম আরও দশ কিমির মত ।
সম্পন্ন গৃহস্থ । ছেলে ডাক্তার । সেই ছেলের বৌভাতে আমরা
নিমন্ত্রিত ।
গৃহস্থ খুব সজ্জন ব্যক্তি । আবার তথাকথিত “ ভদ্রসমাজে”
মেলামেশা নেই বলে, একটু কুণ্ঠিত আর নার্ভাস থাকেন । সেরকম প্রথাগত “ শিক্ষা” নেই
তবে টাকার গরমও নেই ।
একমাত্র ছেলেকে ডাক্তারী পড়িয়েছেন, বৌমাও ইংরেজীতে
স্নাতকোত্তর ।
আমরা খেতে বসেছি । গৃহস্থ হাত জোড় করে এসেছেন আমাদের সামনে
।
বিনয়ের সঙ্গে বললেন :- বাড়ীতে তো কিছু খেতে পান না, এখানেই
ভালো ভালো খাবার খান ।
তিনি কি বলতে চেয়েছিলেন, আমি জানি- বুদ্ধিমান পাঠককে সেটা
বলে দিতে হবে না !!!!
No comments:
Post a Comment