Tuesday, February 11, 2014

জীবন

সক্কালবেলা প্রেশার কুকারের সিটির মত তীক্ষ্ণ আওয়াজ- বলি, কত ঘুমবে ?

বাজার যাবে না ?


ওনার ধারণা-  আমার ঘুমের রিকোয়েস্ট টাইমড্ আউট !  রাতে বেলায় ঘুমের পিঙ্গ রিপ্লাই কেটে কেটে যায় , সিটির হিসহিস আওয়াজে, সেটা ওনাকে কে বোঝাবে  ?“

হাঁই দাবড়ে, হুকুম দাবড়েবলে থলির পাল্কি নিয়ে বাজারে ছুটতে হয় ।  হরির চা আজ বন্ধ ।শুনলাম- আগামী দুদিন নাকি ব্যাঙ্কে ধর্মঘট । হরি চা বেচা পয়সা জমা রাখতে পারবে না বলে , বন্ধ রেখেছে দোকান ।


ঠুংরী তালে মুখস্থ করতে করতে বেরিয়ে পড়ি :-


পমকিন লাউ কুমড়ো, কোকোম্বর শসা

বিঞ্জেল বার্তাকু  আমিমানে চাষা


রিক্সায় উঠতেই, মনে হয় চালক কৃষ্ণ বলছে :-


উঃ কি ভারি মাল রে বাবা
নাঃ! এটা একটা হাতি ।
উঃ এর কি ভীষণ ওজন
এসো এটাকে আমি নাবিয়ে দি


রাতে পুরনো কোলকাতার বই পড়েছি, তাই  বুঝতে পারি, এই ছড়াগুলো মাথায়, কন্ট্রোল- এস্ হয়ে বসে আছে ।


ঈশ্বর গুপ্তর আমল নেই, যে বাজারে মাছের দোকানে বলব :-


কুড়ি দরে কিনে লই, দেখে তাজা তাজা

টপাটপ খেয়ে ফেলি ছাঁকা তেলে ভাজা


বেগুনের নধর কান্তি দেহ দেখে মনে পড়ে মুকুন্দ রামকে :-


হরিদ্রা চন্দন তেল আনিল দুবলা
বার্তাকুর অঙ্গে দিয়ে দূর কৈল মলা


নতুন আলু দেখে মনে হয় :-চামড়া ফর্সা করার জন্য দরকার- পাথর, ঝামা, বালি সাবাং ।

হঠাৎ আলিবাবার গুপ্ত ধনের মত দেখতে পাই :-


রূপেতে মোহিত করে মহিমা অসীম ।

সর্ব্ব রোগ নাশ করে এ হাঁসের ডিম ।।

সিদ্ধ খাও ভাজা খাও সব দিকে হিত ।

ব্যঞ্জন করিয়া খাও আলুর সহিত ।।


 না কিনলে অভিশাপ  :-


ঘৃণায় যে নাহি খায় এ হাঁসের ডিম ।

মরুক সে না খেয়ে তেতো নিম ।।

বৃথাই রসনা তার বৃথা তার মুখ ।

কোন কালে নাহি পায় আহারের সুখ ।।


গুপ্ত ঈশ্বরেরবাক্য অবহেলা করি- এই সাহস নেই ।

রোব্বারের বাজার, তাই কমলাকান্তের সেই আক্ষেপকে দূর করার সিদ্ধান্ত নিলাম, হাঁসের ডিম কেনার পর ।

কমলাকান্ত বলেছিলেন :-

অধ্যাপক ব্রাহ্মণগণ সংসারের ধূতরা ফল । আমি অনেকদিন হইতে মানস করিয়াছি যে, কুক্কুট মাংস ভোজন করিয়া হিন্দু জন্ম পবিত্র করিব- কিন্তু এই অধম ধুতুরা গুলার কাঁটার জ্বালায় পারিলাম না

আমি নিজে ধুতুরা- বিকল্পে ধুস্তূর পুষ্প । তাই সিনা টান করে কিনে ফেললাম দেড় কেজি মাংস ।

পাপহলে গোপালকে একটা নকুলদানা দেবো । বিদ্যেসাগর বলেছিলেন গোপাল অতি সুবোধ বালক ।

আমার এই দিক থেকে  কোন চাপ নেই । কিন্তু- ওনার কণ্ঠ তো আর বেলীফুলের মত মিষ্টি গন্ধে ভরা নয় । ভয়ে ভয়ে বাড়ী ফিরতেই হবে ।


অন্তরে কোথায় যেন সেই চল্লিশ বছর আগের রাস্তায় ভেসে বেড়ানো গানের কলি :-

মেরা মনকা দরওয়াজা খুলা হ্যায়, অন্দর ঘুসকে তালা লগা দে” 


No comments: