সক্কালবেলা প্রেশার
কুকারের সিটির মত তীক্ষ্ণ আওয়াজ- বলি, কত ঘুমবে ?
বাজার যাবে না ?
ওনার ধারণা- আমার ঘুমের রিকোয়েস্ট টাইমড্ আউট ! রাতে বেলায় ঘুমের পিঙ্গ রিপ্লাই কেটে কেটে যায় , সিটির হিসহিস আওয়াজে, সেটা ওনাকে কে বোঝাবে ?“
হাঁই দাবড়ে, হুকুম দাবড়ে” বলে থলির পাল্কি নিয়ে বাজারে ছুটতে
হয় । হরির চা আজ বন্ধ ।শুনলাম- আগামী
দুদিন নাকি ব্যাঙ্কে ধর্মঘট । হরি চা বেচা পয়সা জমা রাখতে পারবে না বলে , বন্ধ রেখেছে দোকান ।
ঠুংরী তালে মুখস্থ
করতে করতে বেরিয়ে পড়ি :-
“ পমকিন
লাউ কুমড়ো, কোকোম্বর শসা
বিঞ্জেল বার্তাকু “ আমি” মানে চাষা”
রিক্সায় উঠতেই, মনে হয় চালক কৃষ্ণ বলছে :-
“ উঃ
কি ভারি মাল রে বাবা
নাঃ! এটা একটা হাতি ।
উঃ এর কি ভীষণ ওজন
এসো এটাকে আমি নাবিয়ে
দি”
রাতে পুরনো কোলকাতার
বই পড়েছি, তাই বুঝতে
পারি, এই ছড়াগুলো মাথায়, কন্ট্রোল-
এস্ হয়ে বসে আছে ।
ঈশ্বর গুপ্তর আমল নেই, যে বাজারে মাছের দোকানে বলব :-
“কুড়ি
দরে কিনে লই, দেখে তাজা তাজা
টপাটপ খেয়ে ফেলি ছাঁকা
তেলে ভাজা”
বেগুনের নধর কান্তি
দেহ দেখে মনে পড়ে মুকুন্দ রামকে :-
“ হরিদ্রা
চন্দন তেল আনিল দুবলা
বার্তাকুর অঙ্গে দিয়ে
দূর কৈল মলা”
নতুন আলু দেখে মনে হয়
:-চামড়া ফর্সা করার জন্য দরকার- পাথর, ঝামা, বালি সাবাং ।
হঠাৎ আলিবাবার গুপ্ত
ধনের মত দেখতে পাই :-
“রূপেতে
মোহিত করে মহিমা অসীম ।
সর্ব্ব রোগ নাশ করে এ
হাঁসের ডিম ।।
সিদ্ধ খাও ভাজা খাও সব
দিকে হিত ।
ব্যঞ্জন করিয়া খাও
আলুর সহিত ।।
না কিনলে অভিশাপ :-
ঘৃণায় যে নাহি খায় এ
হাঁসের ডিম ।
মরুক সে না খেয়ে তেতো
নিম ।।
বৃথাই রসনা তার বৃথা
তার মুখ ।
কোন কালে নাহি পায়
আহারের সুখ ।।
“গুপ্ত
ঈশ্বরের” বাক্য অবহেলা করি- এই সাহস নেই ।
রোব্বারের বাজার, তাই কমলাকান্তের সেই আক্ষেপকে দূর করার সিদ্ধান্ত নিলাম, হাঁসের ডিম কেনার পর ।
কমলাকান্ত বলেছিলেন :-
“অধ্যাপক
ব্রাহ্মণগণ সংসারের ধূতরা ফল । আমি অনেকদিন হইতে মানস করিয়াছি যে, কুক্কুট মাংস ভোজন করিয়া হিন্দু জন্ম পবিত্র করিব- কিন্তু এই অধম ধুতুরা গুলার
কাঁটার জ্বালায় পারিলাম না” ।
আমি নিজে ধুতুরা-
বিকল্পে ধুস্তূর পুষ্প । তাই সিনা টান করে কিনে ফেললাম দেড় কেজি মাংস ।
“পাপ” হলে গোপালকে একটা নকুলদানা দেবো । বিদ্যেসাগর বলেছিলেন – গোপাল অতি সুবোধ বালক ।
আমার এই দিক থেকে কোন চাপ নেই । কিন্তু- ওনার কণ্ঠ তো আর বেলীফুলের
মত মিষ্টি গন্ধে ভরা নয় । ভয়ে ভয়ে বাড়ী ফিরতেই হবে ।
অন্তরে কোথায় যেন সেই
চল্লিশ বছর আগের রাস্তায় ভেসে বেড়ানো গানের কলি :-
“মেরা
মনকা দরওয়াজা খুলা হ্যায়, অন্দর ঘুসকে তালা লগা দে”
No comments:
Post a Comment