কথাটা শুনলেই আমার পিলে চমকে ওঠে ।
আমার মাতামহ প্রয়াত জিতেন্দ্র নাথ মৈত্র প্রায়ই আমাকে এই
সময়ে ইংরেজী ট্র্যানশ্লেসন ধরতেন ।
পৌষ মাসে পুলি পিঠে, খেতে লাগে
ভারি মিঠে ।
পালিয়ে চলে আসতাম । এটা আমি এখনও অনুবাদ করতে পারি না ।
যাই হোক
তিলাড়ু – একটা অতি আবশ্যকীয় মিষ্টি, যা দিয়ে মকরসংক্রান্তিতে নারায়ণকে ভোগ দেওয়া হয় ।
বাস্তুদেবতার পুজোও করা হয় এই দিন । তিল কিংবা খেজুড় গুড়
দিয়ে তৈরি তিলুয়া এবং নতুন ধান থেকে উৎপন্ন চাল থেকে তৈরি পিঠের অর্ঘ্য দেওয়া
হয়।
খ্রীষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে- দুজন বড় মাপের বাঙালী কবি বিরাট
বিরাট সংস্কৃত কাব্য লিখেছিলেন।
এঁদের মধ্যে একজন- কবিকর্ণপূর পরমানন্দ সেন। বাড়ী – কাঞ্চনপল্লীতে মানে আজকাল যাকে কাঁচরাপাড়া বলে। বিরাট বড়লোকের ছেলে আর খুব
গুণী( বদ্যিরা এরকমই হয়)।
“শ্রীশ্রীকৃষ্ণাহ্নিক-
কৌমুদী’ নামে একটা কাব্য লিখেছিলেন। এই কাব্যের দ্বিতীয় সর্গে
৮৫ থেকে ১১৮ শ্লোকে বসন্ততিলক আর পুষ্পিতাগ্রা ছন্দে শ্রী রাধার – রান্নার মনোরম বর্ণণা আছে।
আর একজন লেখক হলেন- শ্রী কৃষ্ণদাস কবিরাজ। এনার লেখা বইটির
নাম হলো- “শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত’ এবং “গোবিন্দলীলামৃত’।
এই “গোবিন্দলীলামৃত’ তেই নানাধরণের খাবারের বর্ণণা আর রান্নার প্রণালী দেওয়া আছে।
তবে, শ্রী কৃষ্ণদাস কবিরাজ বেশ কিছুদিন
বৃন্দাবনে থাকার ফলে একটু কম বর্ণণা দেওয়া আছে। কবিকর্ণপূর পরমানন্দ সেন বাংলাতে
বসে লিখেছিলেন বলে বর্ণণাটা বেশ বিস্তৃত।
পিঠে পুলিতে যাই ।
এই দুই কাব্যে- শাক, ভাজা, তরকারি, ডাল, টক ছাড়াও, নানা
রকমের পিঠে আর পায়েসের বর্ণণাও আছে। পিঠেগুলোর নাম ভারী সুন্দর, কিন্তু সব সময় এর রেসিপি আমরা পাই না! ( কী দুঃক্কু!) কয়েকটা পিঠের নাম বলছি!
হংসকেলি
শোভারিকা
বেণী
চন্দ্রকান্তি
ললিতা! ( মাননীয় মান্না দে, আমার মনে
হয়, এই পিঠেটা খেয়েছিলেন, না হলে ওই
বিখ্যাত গানটা হতো না)
চিত্রা
কর্পূরকেলি
অমৃতকেলি
এখন আমরা যে মিষ্টিগুলো খাই, চারশ বছর
আগেও সেই মিষ্টিগুলো ছিল!
“জীলাবিকা
মউহরি পুরু পূপগূজা
নাড়ীচয়াঃ কৃত সরস্বতি* কাদি পূজাঃ।
খর্চুরদাড়িমক শর্করপালমুক্তা
লাড্ডুৎকরান্ বিধতি রেহত কলাভিযুক্তাঃ।।’
(*সরস্বতি-
এই বানানটা সম্বোধনে বলে- ই কার হয়েছে)
জীলাবিকা=জিলিপি
পুরু= পুরী ( আটার তৈরী)
গূজা= গজা/ গুজিয়া
খর্চুর= খইচুর
দাড়িমক= কদমা ( মনে হয়)
তা আজকাল, এসব তৈরি করার বড় ল্যাঠা ।
কিনতে পাওয়া যায় বিভিন্ন পুলি পিঠে । কে আর ঝামেলা করে বলুন
তো ? ব্যাপারটা ওই ইংরেজি ট্র্যানশ্নেসনের মত ।
ধুরোঃ
=========
ঋণঃ- উদ্বোধন শতাব্দী জয়ন্তী সঙ্কলনে, বিমান বিহারী মুখোপাধ্যায়ের রচনাঃ- সংস্কৃত সাহিত্যে বাংলার খাবার।
No comments:
Post a Comment