Pages

Monday, November 24, 2014

###অন্নপূর্ণার হাতা###




পুরোনো সোনা ভাঙ্গিয়ে অনেকেই নতুন গয়না গড়ান !‍ কিন্তু ষ্টীলের হাতা ভেঙ্গে অনেক হাতা বানানোর কথা একমাত্র
গল্প হলেও সত্যিচলচ্চিত্রে শুনতে পাবেন। সংলাপটি সংলাপ- রচয়িতার, প্রকাশ ভঙ্গিমা অভিনেতার।
আসলে, বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগে যে সব অভিনেতারা এসেছিলেন, তাঁদের গয়নার মত ভাঙ্গিয়ে যদি অন্য অভিনেতা বানানো যেত, তা হলে তো আর কথাই ছিল না। সেটা তো আর হবার নয়!
যদি কখনও শোনেন, “অরণ্যদেবতাঁর প্রিয় নেকড়ে ডেভিলকে নিয়ে পার্ক ষ্ট্রীটের রাস্তায় হাঁটছেন, মানুষে বিশ্বাস করবেন।

যাদুকর ম্যানড্রেক”, মহাজাতি সদনে ম্যাজিক শোকরছেন, এটাও বিশ্বাস করলে কারও কিছু বলার নেই। পাশাপাশি- ফেসবুক, টুইটারের যুগে নাতনীর কি নাম রাখা হবে, এটা নিয়ে যখন সবাইকে ভাবতে বলা হচ্ছে, তখন রবি ঘোষ দস্তিদারের অভিনয়ের অনবদ্য অবদান নিয়ে কিছু লেখা হচ্ছে, এটা বিশ্বাস করবেন না।
আমাদের এই পোড়া ভারতে তথা বাংলার এটাই মুশকিল ! মুম্বাইয়ের অভিনেতা, জালাল আগা একবার বলেছিলেন- ইস্! আমি যদি রবিদার মত অভিনয় করতে পারতাম।




“সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা। আমরা জুহুতে
পিকুছবির শ্যুটিং করছি। সেটে রয়েছে ইরফান খান, দীপিকা পাড়ুকোন এবং তিনি। সকাল থেকে ক্যামেরাম্যানের সঙ্গে মিটিং করে শটটা প্ল্যান করেছি। টাইম মতো শ্যুটিং শুরু।
হঠাত্‌ শটের মাঝখানে দেখি উনি দীপিকাকে বলছেন, “দীপিকা ডু ইউ নো দিস অ্যাক্টর কলড্ রবি ঘোষ?”
প্রশ্নটা করে উনি ইরফানের দিকেও তাকালেন। দীপিকা, ইরফান কেউই রবি ঘোষকে চিনতেন না।

ভারতবর্ষে রবি ঘোষের থেকে বড় কমিক টাইমিং আর কোনও অ্যাক্টরের না কোনও দিন হয়েছে, না কোনও দিন হবে। যখন বলছেন তখন আমি, ক্যামেরাম্যান, দীপিকা, ইরফান শুধু হাঁ করে ওঁকে দেখছি আর কথাগুলো শুনছি।”
=====================
এখানে আমি অর্থে পিকুর পরিচালক সুজিত সরকার । আর যিনি বলছেন তিনি অমিতাভ্ বচ্চন ।
আনন্দ প্লাসের অক্টোবর ১০ য়ের ২০১৪ তে বেরিয়েছিল লেখাটা ।
==================
পুরো নাম রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দস্তিদার ।

২৪শে নভেম্বর, ১৯৩১ সালে কলকাতায় জন্ম ।

তখন সবে এসেছে, আলফা চ্যানেল- কেবলে । এখন যেটা “ জি” ।  মাত্র আধঘন্টার জন্য  বাংলাতে একটা অনুষ্ঠান হতো ।
দেখানো হত – “দে রে” নামে একটা সিরিয়াল ।  চিত্রনাট্য খুব একটা উঁচুমানের না হলেও খালি রবি ঘোষের মামার চরিত্রে অভিনয় ছিল দেখার মত ।

হতভম্ভ হয়ে “ লেট রিঅ্যাকশন” গুরু উৎপল দত্তের কাছে শেখা হলেও – সেটাতে তিনি যোগ করেছিলেন- একটা অন্য মাত্রা ।

সন্দীপ রায়, ফেলুদা করতে গিয়ে নতুন ফেলুদাপেয়েছিলেন বলে আবার ফেলুদা সিরিজ সেলুলয়েডের পর্দায় আনতে পেরেছেন! তবে বাঘা”? না! তিনিও পারেন নি নতুন গুপী- বাঘাতৈরি করতে। কারণ? ওই যে- বাঘাআর হবে না! ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থেকে, ঈষৎ তোতলার মত সংলাপ বলা আর কি কেউ করতে পারবেন? ১৯৯৭ সালের চৌঠা ফেব্রুয়ারি বাঘাচলে গেছে হাল্লা রাজার দেশে। কারও সাধ্যি নেই, সেখান থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনার! না, নাটকে; না চলচ্চিত্রে!
পঁয়ষট্টি বছর বয়সে যদি তিনি যদি চলে না যেতেন তবে চব্বিশে নভেম্বর দু হাজার চোদ্দতে তাঁর বয়স হত তেরাশি ।
 আদতে বরিশালের লোক হলেও, জন্ম তাঁর কোলকাতাতেই ১৯৩১ সালে। সাউথ সুবার্বন স্কুলে পড়াশোনার পর কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন ঠিকই , তবে ভেতরের অভিনয়ের আকুতি নিয়ে গেল উৎপল দত্তের পি. এল. টি বা পিপলস লিটল থিয়েটারে। অভিনয়ের ব্যাকরণ শেখাটা জলভাত হয়ে গেল উৎপল দত্তের তত্ত্বাবধানে, সাথে ছিল তাঁর অর্ন্তনিহিত অভিনয় সত্ত্বা!!!!!
অঙ্গারনাটকে এই স্ফুলিঙ্গ দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো। তারপর এলো অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের নাটক আরোহণ
কমেডিকে যে উচ্চাঙ্গ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেটা রবি ঘোষের সমস্ত ছবিতে, বিশেষ করে অভিযান”(১৯৬২), “অরণ্যের দিনরাত্রি ”(১৯৬৯), “জন- অরণ্যে”(১৯৭৬) নটবর মিত্রর চরিত্র, এইগুলোর সব কটিতেই সংলাপ বলার ভঙ্গি- কোথাও অপ্রত্যাশিত ভাবে একটু থেমে, ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজির মিশেল, একটা অনন্য শৈলী তৈরি করেছিল। এটাই রবি ঘোষিয় ট্রেডমার্ক। বর্তমান বাংলা চলচ্চিত্রে এই জাদু আর নেই!!!!!! সূক্ষ্ম রসজ্ঞান সংলাপেও নেই। এখন পাবলিক খাবেএই ধরণের সংলাপ রচনা করা হচ্ছে। মারবো এখানে, লাশ পড়বে শ্মশানেএই জাতীয় সংলাপে রসজ্ঞান আশা করাটাই বৃথা! বহু বছরের, বাংলা সিনেমার উচ্চ মানের কমেডি উপাদান বিলুপ্ত। সাথে রবি ঘোষরাও নেই।
আধুনিকোত্তর বাংলা সিনেমাতে যে ধরণের পণ্য বিপণনের খেলা চলছে, তাতে এই ধরণের অভিনেতারা বেঁচে থাকলেও লাভ হতো না। ক্ষুরধার হাজির জবাব, রঙ্গ তামাশা- রবি ঘোষদের সঙ্গেই বিদায় নিয়েছে।
===========

শেষে, এই বিরাট অভিনেতা যতখানি বড় অভিনেতা ছিলেন, ততখানি বড় পরিচালক ছিলেন না ।

ফেসবুকেরই বন্ধু রজতের কাকা প্রযোজনা করেছিলেন বন্ধু রবি ঘোষ পরিচালিত নিধিরাম সর্দার ।

বক্স অফিসের মুখ দেখে নি সেই চলচ্চিত্র ।

========

জন্মদিনে প্রণাম ।





No comments:

Post a Comment