Pages

Saturday, May 17, 2014

বিয়ের সময় বরকে যখন মধুপর্ক দেওয়া হয়, তখন তিনি মধুপর্ক না খেয়ে শুধু শুঁকে রেখে দেন। সেই সময় বাংলার নরসুন্দর বলে ওঠে "গৌর, গৌর" | সে আসল কথাটি জানে না বলে, গৌর নিতাইয়ের সঙ্গে তালগোল পাকিয়ে জগাখিচুড়ি মার্কা দুটি শব্দ বলে। সবাই খুশী, আর গৌরপ্রেমীগণ ভক্তিতে গদগদ বল হরি বা হরিবোল দিয়ে দেন। আসলে শাস্ত্রানুযায়ী কথাটি হল "গৌ-র্গৌ-র্গৌঃ" | গৌঃ-গৌঃ-গৌঃ সন্ধি করলে গৌর্গৌর্গৌঃ হয়। সূত্রকার বলেছেন মধুপর্ক খেয়ে আচমন করলে নাপিত তিনবার গৌঃ বলবে। (আচান্তোদকায় গৌরিতি নাপিতস্ত্রির্ব্রূয়াৎ) | বলার কারণ -শ্রুতিতে আছে মাংস ছাড়া মধুপর্ক হয় না (নামাংসো মধুপর্কঃ) | এর সোজা সাপটা মানে দাঁড়ায় মধুপর্ক দিলে সঙ্গে মাংসও দিতে হয়। বরকে মধুপর্ক দেওয়ার সময়েও একটি গরু দিতে হয়। এই জন্য ভবদেব লিখেছেন ‘সম্প্রদানকরার জায়গার উত্তরে গরু বেঁধে’ (সম্প্রদানশালায়া উত্তরতঃ স্ত্রীগবীং বদ্ধা) | গোমাংস আজকাল চলে না, এই কারণে পুরোহিতরা চাল দিয়ে একটি গরু বানিয়ে উত্তর দিকে রাখেন। (উল্লেখ্য শ্রাদ্ধে দশ রকমের মাংস লাগে। তার মধ্যে গোমাংস অন্যতম। আধুনিক যুগে মাংসই দেওয়া হয় না, তার বদলে চাল দেওয়া হয়।) বরকে মধুপর্ক দেওয়া হলেই নাপিত জিজ্ঞাসা করে গরুটা তবে কাটা যাক (গৌর্গৌর্গৌঃ) | প্রাচীনযুগে বর মধুপর্ক খেয়ে কি করতেন এবার ভাবুন। এইবার প্রশ্ন করতে পারেন এটা কি ভাবে আটকানো হল। একটা বিধান ছিল খেয়ে কোন কাজ করতে নেই (ভুক্ত্বা কিঞ্চিন্ন চাচরেৎ) | এটা কাজে এল। বিয়ের সময় বরকে উপবাসী থাকতে হয়, সুতরাং তিনি মধুপর্ক না খেয়ে শুধু শুঁকে রেখে দেবেন। এই কারণে বর নাপিতকে গোবধ করতে নিষেধ করেন। এই নিষেধটাও এখন মন্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। কলি যুগে মধুপর্কে পশুবধ নিষিদ্ধ (‘মধুপর্কে পশোর্বধঃ’ ইত্যাদি বচন আছে) | বিয়ের সময় গোবধ আর হয় না বলেই সত্যিকারের গরু আর লোকে দেয় না, চালের তৈরী গরু রেখে শুধু মন্ত্রপাঠই করা হয়। মধুপর্কের বাটিটি নাপিতকে দেওয়া হয়।

No comments:

Post a Comment