Pages

Friday, May 24, 2013

রূপোলী রূপকথার রাজপুত্তুর


ম্যাট্রিক পাশ করে, কলকাতা বন্দরে কেরানির কাজ  আর একই সময় বেশী রোজগারের আশায় স্কুলের ছেলেমেয়েদের গান শেখানোর দায়িত্ব নিয়ে,কেজো জীবন শুরু হয়েছিল এই রাজপুত্তুরের ।
মেট্রো সিনেমাতে টর্চ লাইট নিয়ে “ আশারের” কাজ করতেন বাবা সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায়
উত্তর কোলকাতার আহিরী টোলায় মামার বাড়িতে, ৩রা সেপ্টেম্বর ১৯২৬ এ জন্ম । বাবা নাম রেখেছিলেন অরুণ কুমার ।
জীবনের উত্থান পতন ছিলো তাঁর নিত্য সঙ্গীপাড়ার নাটকে অভিনয় করার সুবাদে পা রেখেছিলেন সিনেমার আঙিনায় । আজও মুক্তি পায় নি তাঁর প্রথম অভিনীত হিন্দী ছবি- মায়াডোর ।
১৯৩৯ সাল। দেশজুড়ে তখন এক অশান্ত অস্থির রাজনৈতিক অবস্থা। সেই উত্তপ্ত সময়ের মধ্যে কৈশোর পেরিয়ে যৌবন উত্তমের। একচল্লিশের ২২ শ্রাবণ। ১৫ বছরের অরুণ পায়ে পায়ে এসে দাঁড়াল রবীন্দ্রনাথের শেষ যাত্রায়, লক্ষ মানুষের মিছিল। পরের বছরই ভারত ছাড়োআন্দোলনের উন্মাদনায় ভবানীপুরের অলিগলিতে বের হতো অরুণের নেতৃত্বে স্বদেশি প্রভাতফেরি। অরুণেরই লেখা গান তারই সুরে গাওয়া হতো। সে বছরই ম্যাট্রিক পরীক্ষা এবং পাস। ম্যাট্রিক পাস করেছিলেন কলকাতার সাউথ সুবাবরণ মেইন স্কুল থেকে। ভর্তি হন গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজে। এখানে পড়েন কমার্স নিয়ে। ১৯৪২ সালেই নিদান ব্যানার্জির কাছে সঙ্গীতের তালিম নেন। ১৯৪৪ সালে পৌর কমিশনারস অফিসে খিদিরপুর ডকে ক্যাশিয়ারের চাকরি পান,  ২ হাজার টাকা সিকিউরিটি ডিপোজিট হিসেবে জমা দিয়ে।
১৯৪৭ সালে প্রথম ভারত লক্ষ্মী স্টুডিওর ফ্লোরে আসেন উত্তম কুমার। প্রথম অভিনীত ছবি মায়াডোর’ (হিন্দি)
এ ছবিতে কাজ করে দৈনিক পাঁচ সিকি পেতেন। নায়ক হিসেবে প্রথম অভিনয় কামনাছবিতে (১৯৪৯)নায়িকা ছিলেন ছবি রায়।কামনামুক্তি পাওয়ার পর এটি ফ্লপ করল।  সেই লড়াইটা ছিল ভয়ঙ্কর। ফ্লপ এবং ফ্লপ। হাত থেকে কনট্রাক্টের কাগজ ছিনিয়ে নিয়েছেন প্রযোজক। মুখের ওপর বলে দিয়েছেন, ‘কিছু মনে করবেন না, আপনার চেহারাটা নায়কোচিত নয় তুলনাটা চলে আসত প্রমথেশ চন্দ্র বড়ুয়ার সঙ্গে। দ্বিতীয় প্রতিপক্ষও তখন নেপথ্যে দাঁড়িয়ে সেই দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।তাঁর মাচো-হিম্যানইমেজে গত শতাব্দীর পঞ্চাশোর্ধ বাঙালিরা তখনও আত্মহারা। হৃদয়ের কুঠুরিতে লেখা হয়ে গেছেদুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়কিংবা প্রমথেশ চন্দ্র বড়ুয়াএই দুই নাম। তাদের পাশে নবাগত অরুণ কুমার।  নাম পালটে হলেন উত্তমকুমার । ভাগ্যিস বসু পরিবার (১৯৫২) বক্স অফিসের মুখ দেখেছিল।
উত্তম কুমার বিয়ে করেন ১৯৫০ সালের ১ জুন পদ্ম পুকুরের বাসিন্দা গৌরী দেবীকে। একমাত্র ছেলে গৌতমের জন্ম ১৯৫১ সালে। এই সংগ্রামের সময় গৌরী দেবী, উত্তমকুমারকে সব সময় সাহস যোগাতেন ।
কলকাতার ভবানীপুর এলাকায় থাকতেন উত্তম কুমার। কাছাকাছি পাড়ায় সেকালের রূপবান নায়ক ধীরাজ ভট্টাচার্য, পুরনো ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, চরিত্রাভিনেতা ইন্দু মুখার্জি বসবাস করতেন। তাদের কাজ দেখে শিখেছেন উত্তম কুমার। আর তার সঙ্গে অবচেতন মনে ছিল দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রমথেশ বড়ুয়া, ছবি বিশ্বাস, জ্যোতি প্রকাশ, অসিত বরণ ও রবীন মজুমদারের মতো রোমান্টিক সব নায়কের রূপালি পর্দায় দেখার অদৃশ্য শিহরণ।
অবশেষে  ১৯৫৩ তে এলো- ৭৪৷৷০ ( সাড়ে চুয়াত্তর) ১৯৫৪ তে অগ্নিপরীক্ষা । দুটোতেই নায়িকা সুচিত্রা সেন ।
ব্যাস্ ! পেছনে পড়ে রইলো দৃষ্টিদান (১৯৪৮), কামনা (১৯৪৯), মর্যাদা (১৯৫০), ওরে যাত্রী (১৯৫১), নষ্ট নীড় (১৯৫১), সঞ্জীবনী (১৯৫২)- এদের মত সব ফ্লপ ছবি ।
তখন প্রত্যেক মেয়েই চাইতো উত্তমকুমারের মত প্রেমিককে । উডু উডু অ্যালবাট চুল, বঙ্কিম গ্রীবা, হৃদয় তোলপাড় করা হাসি আর অভিনয়ের চূড়ান্ত আধুনিকতা এগুলোই  ছিল উত্তমের তুরুপের তাসসব মেয়ে ফিদা ।
মাত্র ৫৪ বছরেই নিভে গেল (২৪ জুলাই ১৯৮০, বৃহস্পতিবার রাত ৯-৩০ মিনিটে কলকাতার বেলভিউ ক্লিনিকে) এই মহানায়কের জীবন সলতে । একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে ।
বৃদ্ধ উত্তমকে ভাবাই যায় না । ভাবতেই পারি না ।

No comments:

Post a Comment